Advertisement
২০ মে ২০২৪

ইয়র্কশায়ারে প্রাচীন সমাধির সন্ধানে

সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।সংস্কারের কাজ চলছিল ইয়র্কশায়ারের অল সেন্টস চার্চে। চার্চের লেডি চ্যাপেল অংশকে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই ছিল সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য। খোঁড়াখুড়ির সময়ে অনেক গুলি সমাধির খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে একটি সমাধি বিশেষ ভাবে নজর কাড়ে বিজ্ঞানীদের। সমাধিটির ভিতরে এক অন্তঃস্বত্তা মহিলার কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়। মহিলার কঙ্কালের ভিতর ছিল ভ্রূণের কঙ্কালও। চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে সংবাদের হাওয়াবদল।

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

সাতশো বছরের পুরনো সমাধির খোঁজ

সংস্কারের কাজ চলছিল ইয়র্কশায়ারের অল সেন্টস চার্চে। চার্চের লেডি চ্যাপেল অংশকে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই ছিল সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য। খোঁড়াখুড়ির সময়ে অনেক গুলি সমাধির খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে একটি সমাধি বিশেষ ভাবে নজর কাড়ে বিজ্ঞানীদের। সমাধিটির ভিতরে এক অন্তঃস্বত্তা মহিলার কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়। মহিলার কঙ্কালের ভিতর ছিল ভ্রূণের কঙ্কালও। সমাধির গায়ে বিশেষ চিহ্ণ আঁকা ছিল। এই ধরনের চিহ্ণ সেই সময়ে অপদেবতার নজর থেকে বাঁচতে ব্যবহার করা হত বলে জানিয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। সমাধিটির দু’টি প্রকোষ্ঠ। উত্তরের দিকের প্রকোষ্ঠে রাখা ছিল মহিলার দেহ। সমাধির দক্ষিণের প্রকোষ্ঠে রাখা ছিল তিনটি দেহ। রাখার ভঙ্গিমা দেখে বিজ্ঞানীদের অনুমান, দেহগুলি সমাধির ভিতর উপর থেকে ঠেলে ফেলা হয়েছিল। দেহগুলি অন্তত সাতশো বছরের প্রাচীন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, পরে আরও দেহ সমাধিস্থ করার জন্যই এই ভাবে একটির উপর আর একটি দেহ রাখা হয়েছিল। তবে মহিলার দেহ কেন আলাদা ভাবে রাখা ছিল? বিশেষজ্ঞদের মতে, মহিলা সম্ভবত কোনও উচ্চ বংশের। সেই কারণেই তার জন্য এই আলাদা ব্যবস্থা। সমাধির গায়ের শুভ চিহ্ণটিও সেই জন্যই দেওয়া হয়েছিল বলে ধারণা তাঁদের।

মুখের বিবর্তন

নিয়ান্ডারথাল থেকে অস্ট্রালোপিথেকাস এবং তা থেকে হোমো ইরেকটাস হয়ে ওঠার পথে বহু বিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে আধুনিক মানুষ। হাত, পা থেকে শুরু করে মেরুদণ্ড— বিবর্তিত হয়েছে প্রায় সব কিছুই। কিন্তু মানুষের মুখের বিবর্তন হতে শুরু করেছিল কবে থেকে? কেনই বা বিবর্তিত হয়েছিল মানুষের মুখ? বিভিন্ন সময়ে আবিষ্কৃত জীবাশ্ম থেকে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন অস্ট্রালোপিথেকাসের চোয়াল ও তার উপরের অংশের হাড় ছিল রীতিমত সুগঠিত। এত দিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল অস্ট্রালোপিথেকাস ও তার সমসাময়িক আদি মানুষ বীজ, শক্ত বাদাম জাতীয় ফল খেত। এই ধরনের শক্ত খাবার সহজে খাওয়ার জন্য আস্তে আস্তে চোয়াল ও তার পাশের হাড়গুলি শক্ত হয়ে গিয়েছিল তাদের। কিন্তু পরবর্তী কালে আরও পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শুধু চোয়াল ও তার উপরের অংশই নয়, নাক ও চোখের চারপাশের হাড়ও অত্যন্ত সুগঠিত ছিল অস্ট্রালোপিথেকাসের। শুধুমাত্র খাওয়ার সুবিধার জন্য হলে নাক ও চোখের চারপাশের হাড়ের সুগঠিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। পরীক্ষা করে তারা দেখেছেন, খাদ্যাভ্যাস নয়, মুষ্টিযুদ্ধের সময়ে নিজেদের রক্ষা করতেই ক্রমে মুখের হাড় শক্ত হতে শুরু করে আদি মানুষের। কিন্তু শুধু মুখের হাড় কেন? বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, লড়াইয়ে দেহের অন্য জায়গার হাড় ভাঙলে যে পরিমাণ অসুবিধা, আজ থেকে চল্লিশ লক্ষ বছর আগে চোয়ালের হাড় ভাঙলে তার চেয়ে ঢের বেশি অসুবিধা। না খেতে পেরে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত তাদের। সম্ভবত সেই জন্যই এই অভিযোজন। কিন্তু এর পর কমতে থাকে মুখের হাড়ের সেই কাঠিন্য। কেন? সেই উত্তরের খোঁজেই আরও পরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

আদিম বানরের দাঁতের জীবাশ্মের খোঁজ মিলল

সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সুয়াইহাত দ্বীপে এক আদিম বানরের দাঁতের জীবাশ্ম আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা। আবু ধাবির পশ্চিমে আল ঘারিবা অঞ্চলে খোঁজ পাওয়া এই জীবাশ্মটি ৬৫-৮০ লক্ষ বছরের পুরনো বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এই আবিষ্কার প্রাচীন বানরের আফ্রিকা থেকে ইউরেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার সঠিক সময় নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে বলে মত বিজ্ঞানীদের। প্রচীন বানরের প্রজাতির সংখ্যা একাধিক। এদের মধ্যে আফ্রিকা ও এশিয়ার ম্যাকাকে, বেবুন, ম্যাঙ্গাবে, লেঙ্গুর-সহ আরও কয়েকটি প্রজাতি আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ লক্ষ বছর আগের মতো এখনও এই দুই মহাদেশে উপস্থিত। আফ্রিকা থেকে প্রাচীন বানরেরা কী ভাবে এশিয়া-সহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল তা নিয়ে এখনও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের দলটির অন্যতম সদস্য গিলবার্টের মতে, এই নতুন জীবাশ্মের আবিষ্কার ধোঁয়াশা বাড়াল বই কমাল না। এত দিন পর্যন্ত ধারণা ছিল আফ্রিকার বানরেরা মেসিনিয়ান ক্রাইসিসের পর আফ্রিকা ত্যাগ করে। মেসিনিয়ান ক্রাইসিস হল সেই প্রগৈতিহাসিক ঘটনা যার মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরের সৃষ্টি হয়েছিল। মোটামুটি ৬০ লক্ষ বছর আগে হয়েছিল মেসিনিয়ান ক্রাইসিস। কিন্তু আবিষ্কৃত দাঁত এই ঘটনার পূর্ববর্তী হওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে বিজ্ঞানীদের। বেচারা বানর! লক্ষ লক্ষ বছর আগে হয়ত কোনও বাঁদরামি করতে গিয়ে তার দাঁত ভেঙেছিল। কিন্তু সেই ভাঙা দাঁত যে এত বছর পর আধুনিক বিজ্ঞানীদের এই বিড়ম্বনায় ফেলবে, জানতে পারলে দাঁত নিয়ে আরও সতর্ক থাকত সে।

ঐতিহ্য

• ইউনেস্কোর তালিকায় মায়ানমারের তিন শহর

অবশেষে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় স্থান পেল মায়ানমারের তিনটি প্রাচীন শহর। এর আগে প্রাথমিক ভাবে আটটি জায়গার নাম থাকলেও মূল তালিকায় এই প্রথম মায়ানমারের কোনও জায়গার নাম উঠল।

গত ২৩ জুন মায়ানমারের উপ-সংস্কৃতিমন্ত্রী সান্দার খিন জানান, ইউনেস্কোর তালিকায় জায়গা পেয়েছে পিয়ু সাম্রাজ্যের তিনটি প্রাচীন শহর— হানলিন, বেইকটানো এবং শ্রী কেস্ট্রা। গত বছর জানুয়ারিতে এই বিষয়ে ইউনেস্কোর কমিটিতে মনোনয়ন পেশ করেছিল মায়ানমার। এক হাজার বছরেরও আগে ২০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইরানের ‘পুড়ে যাওয়া শহর’-সহ এই তিনটি শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল পিয়ু সাম্রাজ্য। খিন জানান, মানব জাতির ইতিহাসে এই তিনটি শহরের ঐতিহ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তালিকায় স্থান পাওয়াটা যে তাঁদের কাছে যথেষ্ট সম্মানের, তা স্বীকার করে খিন বলেন, শুধুমাত্র প্রথম বার স্থান পাওয়ার জন্যই নয়, মানব-ইতিহাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মতো বিশালাকার ভৌগোলিক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী এই তিন শহর। তালিকায় স্থান পাওয়ায় মায়ানমারের গৌরব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের পর্যটন শিল্প যে আরও লাভবান হবে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।

• ডিলানের গানের খসড়া নিলাম

সদবির নিলামে বিকোল বব ডিলানের গান ‘লাইক আ রোলিং স্টোন’-এর খসড়া। গত ২৪ জুনের নিলামে ২.০৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড দরে এর মালিকানা হাতবদল হল। তবে খসড়ার বর্তমান বা পূর্বতন মালিক— কেউই নিজেদের পরিচয় জানাতে আগ্রহী হননি।

ডিলানের নিজের হাতে লেখা চার পাতার ওই খসড়ায় মূল গানের স্বরলিপি ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু আঁকিবুকি। ওই খসড়াতেই গানটি পরিমার্জনা করেছেন ডিলান। হোটেলের লেটারহেডে পেনসিলে লেখা খসড়ার আঁকিবুকি থেকে তৈরি হয়েছে একটি টুপি, একটি পাখি আর একটি শিংওয়ালা প্রাণীর ছবি।

সঙ্গীত সমালোচকেরা অনেকেই বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের অন্যতম বৈপ্লবিক গান হিসেবে ‘লাইক আ রোলিং স্টোন’-কে চিহ্নিত করেন। ৭৩ বছরের ডিলান ১৯৬৫ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে এই গান রেকর্ড করেন। সমাজচ্যুত হওয়ায় অভিজাত বংশের এক তরুণীর ক্রমশ নিঃসঙ্গ হওয়ার কাহিনি রয়েছে এই গানে। নিলাম ঘর সদবি-র তরফে জানানো হয়েছে, খসড়াটি ডিলানের থেকে সরাসরি পান তাঁরই এক ভক্ত। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার ওই ভক্তের পরিচয় জানা যায়নি।

• মুম্বইয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র সংগ্রহালয়

এক শতকেরও বেশি পুরনো ভারতীয় সিনেমার ঐতিহ্য সংরক্ষণে মুম্বইয়ে জাতীয় সংগ্রহালয় প্রতিষ্ঠা করল ফিল্মস ডিভিশন। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের পৃষ্ঠপোষকতায় এটি গড়ে উঠলেও এই উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনার ভিত গড়া হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অফ ইন্ডিয়া বা এনএফএআই-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্র সংরক্ষণকারী পি কে নায়ার সে সময় এই ধরনের সংগ্রহালয় স্থাপনের চিন্তাভাবনা শুরু করেন। এর পরেই সংগ্রহালয় প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেয় ফিল্মস ডিভিশন। গোটা পরিকল্পনার পরামর্শদাতা হিসেবে রয়েছে পরিচালক শ্যাম বেনেগালের নেতৃত্বাধীন কমিটি।

দক্ষিণ মুম্বইয়ের পেডার রোডে ফিল্মস ডিভিশনের চত্বরে ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ভিক্টোরীয় যুগের বিশাল বাড়ি ‘গু‌লশন মহল’। ভারতীয় সিনেমার জাতীয় সংগ্রহালয় বা এনএমআইসি-র ঠাঁই হয়েছে সেখানেই। ফিল্মস ডিভিশন-এর ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অনিল কুমার জানান, সংগ্রহালয়ের কাজ সম্পূর্ণ শেষ। কেন্দ্র থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলেই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন স্থির করা হবে।

১৮৯৬ সালের ৭ জু‌লাই তত্কালীন বম্বের ওয়াটসন হোটেলে (যা এখন এসপ্ল্যানেড ম্যানসনস নামে পরিচিত) ল্যুমিয়ের ভাইদের ছ’টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমার সফর শুরু। এখানে ল্যুমিয়ের ভাইদের সেই অবদানের কথাও বিশেষ ভাবে স্মরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, ভারতীয় সিনেমায় ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে পুরনো ক্যামেরা, স্মারক, গ্যালারি এবং শিল্প নিদর্শন রাখা হয়েছে। থাকছে ১৯১৩ সালে নির্মিত ‘রাজা হরিশচন্দ্র’-র বিভিন্ন দৃশ্যের প্রমাণ সাইজের ছবিও। সংগ্রহালয়ে বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমার পথিকৃতদেরও স্মরণ করা হয়েছে। এই স্মারকগুলি দেশের চ‌লচ্চিত্র ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন এনএমআইসি-র জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা অনিল কুমার।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ

ইঁদুরের অনুশোচনা

পছন্দের খাবার না পেয়ে দুঃখ করছিল কয়েকটি ছোট্ট ইঁদুর। দুঃখ না বলে অনুশোচনা বলাই ভালো। কিংবা বিলাপও হতে পারে। তাদের দুঃখের কথা শুনে ফেললেন আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন স্নায়ুবিজ্ঞানী। মুখ্য গবেষক ডেভিড রেডিসের দাবি, ইঁদুরদের ব্যবহারের হঠাত্ পরিবর্তন, তাদের মুখের অভিব্যক্তি এবং স্নায়বিক উত্তেজনাই প্রমাণ করে মনুষ্য সমাজের মতো ইঁদুর সমাজেও শোক প্রকাশ বা অনুশোচনা ব্যক্ত করার রীতি রয়েছে। নিজস্ব স্বভাবজাত ভঙ্গিতেই ইঁদুরেরা তা করে থাকে। এই দাবির সত্যতা প্রমাণের জন্য বিজ্ঞানীরা ইঁদুরদের নিয়ে একটি ছোট খেলার আয়োজন করলেন। এই খেলার নাম দিলেন ‘রেস্টুরেন্ট রো’। খেলাটি অনেকটা ধাঁধাঁর মতো, একটি গোলাকার চাকার চার প্রান্তে ইঁদুরদের পছন্দের খাবার রাখা হয়। এর মধ্যে তিনটি প্রান্তে চেরি, কলা ও চকোলেট স্বাদের খাবার এবং চতুর্থ বা শেষ প্রান্তে স্বাদহীন খাবার রাখা হয়। ৬০ মিনিটের এই খেলার মূল উদ্দেশ্য ছিল পছন্দের খাবার হস্তগত করা। রেডিস জানালেন, পরীক্ষা শুরুর পর দেখা গেল চাকার প্রতিটি প্রান্তেই খাবার নেওয়ার জন্য ইঁদুরদের লম্বা লাইন। এই লাইনের সবচেয়ে ধৈর্যশীল ইঁদুরেরা অপেক্ষা করে পছন্দের খাবার উঠিয়ে নিচ্ছে। বাকিরা বিরক্ত হয়ে পাশের অপেক্ষাকৃত ছোট লাইনের দিকে সরে যাচ্ছে। যারা অপেক্ষা না করেই পাশের প্রান্ত থেকে খাবার ওঠাচ্ছে সেখানো মনোমতো স্বাদ না পেয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ করছে এবং সেই সঙ্গে তাদের মুখের অভিব্যক্তিরও পরিবর্তন ঘটছে। রেডিসের মতে, এই অভিব্যক্তির পরিবর্তনই অনুশোচনার বহিঃপ্রকাশ। এমনকী পছন্দের খাবার পেলে যেমন ইঁদুরেরা ৪৫ সেকেন্ড ধরে তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাবারের স্বাদ উপভোগ করছে, অপছন্দের খাবার পেলে ৫ সেকেন্ডের মধ্যে কোনওরকমে খাবার শেষ করে আবার আগের ফেলে যাওয়া খাবারের দিকে ফিরে আসছে। বিজ্ঞানীরা জানালেন, কয়েকটি ইঁদুরকে দেখা গিয়েছে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য বারে বারেই ফেলে যাওয়া পছন্দের খাবারের দিকে ফিরে চাইতে এবং তাদের মধ্যে কয়েক জন নাকি আবার বিড় বিড় করে বিলাপও করেছে।

এই গবেষণাটি ‘নেচার নিউরোসায়েন্স’ নামক জার্নালে প্রথম প্রকাশিত হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মার্ক ওয়াল্টনের মতে ইঁদুরদের চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা খুবই উচ্চ পর্যায়ের অনেকটা মানুষেরই মতো। কারণ মানুষের মস্তিষ্কের মতো ইঁদুরদের মস্তিষ্কেও রয়েছে অরবিটোফ্রন্টাল কর্টেক্স, যা চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দায়ী। রেডিস জানালেন, খেলা চলাকালীন ইঁদুরদের স্নায়বিক উত্তেজনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে অনুশোচনার অভিব্যক্তি শুধুমাত্র তাদের ব্যবহারেই নয় চিন্তাতেও প্রকাশ পায়। অর্থাত্ নিজেদের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ইঁদুরেরা অনেক ক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে এমনকী আফশোসও করে। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ম্যাট রয়েস এই গবেষণার ফল নিয়ে আশাবাদী। ভবিষ্যতে এই গবেষণা মানসিক অবসাদগ্রস্ত বা স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগীদের চিকিত্সায় বিশেষ ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন তিনি।

ক্যাঙারুর পঞ্চম পদ

লেজের আমি, লেজের তুমি, লেজ দিয়ে যায় চেনা... এই লেজ-মাহাত্ম্যেই এখন জয়জয়কার ক্যাঙারুদের। ছোটা, হাঁটা, দৌড়নো—সবেতেই লেজ। কারণ লেজ যে এখন আর লেজ নেই, হয়ে গিয়েছে পা। অনেকটা ওই “ছিল রুমাল, হয়ে গেল একটা বেড়াল”-এর মতো শোনালেও, ব্যাপারটা অতটাও কঠিন নয়। কানাডার সিমন ফ্রেসার বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস্ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন বিজ্ঞানীর দাবি, দৌড়নো বা লাফানোর সময় ক্যাঙারুরা তাদের লেজকে পা হিসেবে ব্যবহার করে। সিমন ফ্রেসার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল ডোনেলান জানান, লাফিয়ে চলার সময় দেহকে সামনের দিকে গতি প্রদান করে লেজ, পাশাপাশি শক্তপোক্ত অবলম্বন হিসেবেও কাজ করে।
নিউ সাউথ ওয়েলস্ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী টেরেন্স ডাওসন অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘকায় ক্যাঙারু প্রজাতি লাল ক্যাঙারুদের নিয়ে একটি পরীক্ষা চালান। গবেষণাগারে ক্যাঙারুদের দৌড়নোর জন্য বিশেষ রকমের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে এদের হাঁটা-চলার কৌশল পর্যবেক্ষণ করলেন। এই প্ল্যাটফর্মের বিশেষত্ব হল, এর বিশেষ ‘সেন্সর’ চলার সময় প্রাণিদের পা ও লেজ থেকে উত্পন্ন অগ্রগামী, পশ্চাদগামী ও উল্লম্ব বল এবং গতির প্রকৃতি রেকর্ড করে। তাঁর মতে, লাফানোর সময় ক্যাঙারুরা পিছনের পা দু’টিকে একসঙ্গে করে একটি পা হিসেবে ব্যবহার করে। লাফানোর এই বিশেষ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘হপিং’। জোড়া পা-য়ে লাফানোর সময় অবলম্বন হিসেবে লেজকে কাজে লাগায়। অর্থাত্ যখন পিছনের পা দু’টি মাটি থেকে উপরে থাকে তখন দেহকে মাটির সঙ্গে ধরে রাখে লেজ এবং দেহকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল ডোনেলানের মতে, লেজে মোট ২০টি অস্থিসন্ধি বা কশেরুকা থাকে। এই কশেরুকাগুলির কাজ হল মানুষের পায়ের পাতা, উরু ও জঙ্ঘার পেশির মতো চলনের সময় বল প্রদান করা। এই গবেষণাটি ‘বায়োলজি লেটারস’এ প্রথম প্রকাশ করেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানী টেরেন্স জানান, লাফিয়ে প্রতি ঘণ্টায় একটি ক্যাঙারু ১২ মাইল বা ২০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ অতিক্রম করে। প্রতিবার লাফের সময় লেজটি পর্যায়ক্রমে উপর ও নিচে ওঠানামা করে পায়ের সঙ্গে সমতা বজায় রাখে। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত সিমন ফ্রেসার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক বিজ্ঞানী ও’কনার জানান, শুধু গতি প্রদানই সময়, এবড়ো-খেবড়ো পথে চলার সময় দেহের শক্তিও ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় লেজ, থুড়ি ‘পঞ্চম পদ।’

মাছেদের স্মৃতিশক্তি

৩০ সেকেন্ড নয়। অন্ততপক্ষে ১২ দিন। হয়তো তারও কিছু বেশি। এইভাবেই মাছেদের স্মৃতিশক্তির হিসাব রাখছেন বিজ্ঞানীরা। ল্যাবিডোক্রোমিস ক্যারুলিয়াস বা আফ্রিকান চিচলিডস্ প্রজাতির এই মাছেদের মনে রাখার ক্ষমতা দেখে রীতিমতো তাজ্জব বনে গেছেন কানাডার ম্যাকাওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। ল্যাব্রয়ডি গ্রুপের ছোট হলুদ রঙের এই মাছেদের নিবাস পূর্ব আফ্রিকার উপকূলবর্তী অঞ্চল। মিঠে জলে থাকতেই বেশি পছন্দ করে চিচলিডসরা। অ্যাকোয়ারিয়ামেও কখনো সখনো এদের সাক্ষাত্ মেলে। কানাডার বিজ্ঞানীদের মতে চিচলিডসরা কম করে হলেও ১২ দিন পর্যন্ত পুরনো সমস্ত কথা মনে রাখতে পারে। ‘সোসাইটি ফর এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি’তে প্রথম এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন বিজ্ঞানীরা। মুখ্য গবেষক ট্রেভর হ্যামিলটন জানান, স্মৃতিশক্তি পরখ করার জন্য চিচলিডসদের নিয়ে একটি ছোট পরীক্ষা করা হয়। অ্যাকোয়ারিয়ামের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পছন্দের খাবার ফেলে বিশেষ কম্পিউটার সফটওয়্যারের সাহায্যে মাছেদের গতিবিধি পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। প্রতি দিন ২০ মিনিট করে তিন দিন পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ চলে। মাঝে ১২ দিনের বিরতি। ফের একই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি করেন বিজ্ঞানীরা। হ্যামিলটন জানান, আশ্চর্যের বিষয় ১২ দিন পরেও চিচলিডসরা সেই একই জায়গায় খাবারের সন্ধানে ভিড় জমায়। এই ধরণের প্রবণতা স্তন্যপায়ীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। জলচরদের মধ্যে ডলফিনদের বুদ্ধি ও স্মৃতির প্রখরতা তো আগেই প্রমাণিত। এ বার কী তবে বুদ্ধির দৌড়ে এগিয়ে আসছে ছোট মাছেরাও? একটু অন্যরকমই ব্যাখ্যা দিলেন হ্যামিলটন। তাঁর মতে কিছু মাছেদের মধ্যে এই প্রবণতা মজ্জাগত। যার প্রধান কারণই হচ্ছে জলে বাড়তে থাকা দূষণ এবং যার প্রভাবে খাদ্যের অভাব। যেখানে অন্যান্য শিকারি মাছের আনাগোনা কম জলের সেই বিশেষ জায়গায়টিই মাছেরা চিহ্নিত করে রাখে এবং খাবারের খোঁজে বারে বারেই ফিরে আসে সেখানে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অভ্যাস বিবর্তনের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে।

শুধু স্মৃতিশক্তিই নয় মাছেদের ব্যাথা-বেদনা এমনকী উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ অনেকটা মানুষেরই মতো। সম্প্রতি ‘স্প্রিংস জার্নাল অ্যানিমাল কগনিশন’ নামক বিজ্ঞানপত্রিকায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকুয়েরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কলাম ব্রাউন। তাঁর মতে মাছেরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে এমনকী নিজের পরিবারের সদস্যদের পৃথকভাবে চিনতেও পারে। এর আগে চিচলিডসদের একটি প্রজাতিকে জলের তলায় বালি দিয়ে বাড়ি তৈরি করতে দেখা গিয়েছিল। ‘পিয়ার-জে’ নামক বিজ্ঞানপত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা লিখেছিলেন, জলের তলায় ২৬ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করে ৯৯টি মাছকে এই ধরণের বাড়ি তৈরি করতে দেখেন। শুধু তাই নয় বাড়ির দখল নিয়ে মাছেরা পরস্পরের সঙ্গে বিবাদও করে। মত্স্য বিশেষজ্ঞ গবেষক ব্রেথওয়েটের মতে মানুষের মস্তিষ্কের মতো মাছের মস্তিষ্কেও হিপোক্যাম্পাস অ্যামিগডালা রয়েছে যা আবেগ-অনুভূতি ও স্মৃতিশক্তির জন্য দায়ী। গলদা চিংড়িরা মানুষের মতোই কাজের চাপ অনুভব করে। চাপের সময় উত্তেজনায় এদের মস্তিষ্ক থেকে সেরোটোনিন নির্গত হয়।

পর্যটন কেন্দ্র

নিভৃতে লাচুঙে

গ্যাংটক থেকে ১২৫ কিমি দূরে উত্তর সিকিমের ছোট্ট উপত্যকা লাচুং। এর অর্থ ক্ষুদ্র গিরিপথ। ভারত-তিব্বত সীমান্তে ৩ হাজার মিটার উচ্চতায় লাচন ও লাচুং নদীর সঙ্গমস্থলের এই স্থানটি আজ পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। একটু নিভৃতে ও নিরালায় যাঁরা বেড়ানোর সময় কাটাতে চান তাঁদের জন্য লাচুং আদর্শ। ১৯৫০ সালে এই জায়গাটি ছিল তিব্বত ও সিকিমের বাণিজ্য কেন্দ্র। ছোট্ট শহরটির অর্থনীতি মূলত পর্যটন নির্ভর। পাহাড়ের বুক চিরে গড়ে ওঠা লাচুঙের প্রাকৃতিক শোভার টানে প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক ছুটে আসেন। সাধরণত অক্টোবর থেকে মে মাস এখানে বেড়াতে আসার আদর্শ সময়। লাচুঙের মূল আকর্ষণ ইয়ামথং উপত্যকা ও লাচুং মনাস্ট্রি। শুধু তাই নয়, আপেল, পিচ ও অ্যাপ্রিকটের জন্যও বিখ্যাত এই শহরটি। নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বজায় রেখেই লাচুং ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। এখানে পর্যটকদের থাকার জায়গা হিসাবে রয়েছে বেশ কিছু হোটেল, লজ ও একটি ডাকবাংলো। ইয়াংথম ও লাচেং উপত্যকা জুড়ে রডোডেনড্রনের বাহার এক কথায় অনবদ্য।

তামিলের কাশ্মীর-ইয়ারকাড

উটি, কোদাইকানালের মতো অত পরিচিত না হলেও তামিলনাড়ুর অন্যতম শৈলশহর ‘ইয়ারকাড বা ইয়ারকুদ’-এর প্রাকৃতিক শোভা ভ্রমণপিপাসুদের মন কাড়ার পক্ষে যথেষ্ট। তামিল ভাষায় ‘ইয়ার’ শব্দটির অর্থ হ্রদ আর ‘কাডু’ শব্দের অর্থ অরণ্য। সালেম থেকে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছানো যায় ইয়ারকাডে। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা কখনওই ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় না, আবার শীতে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। এই মনোরম আবহাওয়াই পর্যটকদের বার বার টেনে আনে। পাশাপাশি, কোদাইকানালের মতো ব্যয়বহুলও নয় এই শহরটি। পশ্চিমঘাট পর্বতের শৈলশহরগুলিকেও প্রাকৃতিক শোভায় হার মানায় ইয়ারকাড। ট্রেকিং করতে যাঁরা ভালবাসেন তাঁদের কাছে ইয়ারকাড এক কথায় অনবদ্য।
দর্শনীয় স্থান হিসাবে এখানে রয়েছে ডিয়ার পার্ক। এই পার্কের বিশেষত্ব হল, এর তিন দিক হ্রদে ঘেরা আর অন্য দিকে রয়েছে একটি পরিখা। এ ছাড়া আছে বোট হাউজ, পাহাড়ের ধাপে ধাপে ছোট বড় নার্সারি। পাহাড়ের উপরে রয়েছে এক অপূর্ব সুন্দর ‘প্যাগোডা’। আছে ওয়াচ টাওয়ার ও তিনটি ভিউ পয়েন্ট। সেখান থেকে দেখা যায় কিল্লিয়ুর জলপ্রপাত, সালেম শহরকে। রয়েছে শ্রীরাজরাজেশ্বরী মন্দির ও শেভারেয়ান-কাবেরী আম্মান মন্দির। ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় শেভরয় পাহাড়ের উপর সরু গুহার ভিতর অবস্থিত এক দেবস্থান এখানের। মে মাসে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা ও মেলা হয় এখানে। আর আছে গোলমরিচের বাগান যা অবশ্যই দৃষ্টিনন্দন। ইয়ারকাড থেকে দেখে নেওয়া যায় তামিলনাড়ু আর কর্নাটকের সীমানায় অবস্থিত হোগেনাক্কাল জলপ্রপাত এবং মেট্টুর বাঁধ।

• খারচি পুজো

ত্রিপুরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্সব খারচি। স্থানীয় ভাষায় ‘খার বা খারতা’ যার অর্থ পাপ এবং ‘চি বা সি’ যার অর্থ পরিষ্কার—এই দু’টি শব্দ থেকেই খারচি-র উত্পত্তি। দেশ ও মানুষের মন থেকে পাপ দূর করাই এই উত্সবের মূল লক্ষ্য। প্রতি বছর জুলাই-অগস্ট মাসে অম্বুবাচি-র ঠিক পনেরো দিন পরে এই উত্সব শুরু হয়। ত্রিপুরার প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী অম্বুবাচি ধরিত্রী মাতার ঋতুকাল। তাই ওই দিন প্রথা অনুযায়ী চাষাবাদও বন্ধ রাখা হয়। পুরনো আগরতলায় সাত দিন ধরে চলে খারচি উত্সব। চোদ্দ দেবতাকে উত্সর্গ করেই উত্সবের সূচনা করা হয়ে থাকে। উত্সবের প্রথম দিনে দেবতাদের নদীতে স্নান করিয়ে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর মহাসমারোহে শুরু হয় পুজো। ওই কয়েকটা দিন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ মানুষের ঢল চোখে পড়ার মতো। নানা ধর্মীয় আচার, নাচ-গান সহযোগে পালিত হয় ত্রিপুরার জনপ্রিয় এই পার্বণটি।

• হেমিস গুম্ফা মেলা

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসবের নাম হেমিস গুম্ফা মেলা। বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভবার জন্মজয়ন্তীতে পালিত হয় এই উৎসব। তিব্বতি ক্যালেন্ডারের পঞ্চম মাসের দশম দিনে বা প্রতি বছর জুলাই মাস নাগাদ লাদাখে পালিত হয় এই ধর্মীয় উৎসব। বৌদ্ধ সন্যাসীদের বৃহত্তম মঠ লাদাখের ‘হেমিস গুম্ফা’-তে মহাসমারোহে পালিত হয় এই উত্সব। গুম্ফার বাইরেও বিরাট এলাকা জুড়ে বসে বর্ণময় বাহারি মেলা। উৎসব উপলক্ষে গুম্ফার ভিতরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে হেমিস গুম্ফা মেলায় শুধুমাত্র লাদাখ বা জম্মু-কাশ্মীরের মানুষই নন, দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন। দু’দিন ধরে চলে এই উৎসব। গুম্ফার সদর দরজা দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে বেশ খানিকটা চওড়া এলাকা, অনেকটা বিরাট আকারের উঠোনের মতো। রঙিন কাগজ, কাপড়ের নিশানে সাজানো হয় গোটা চত্বর। তিব্বতি ঐতিহ্যের বিশাল আকারের শিঙ্গা, দামামা আর মাদলের মতো বাদ্যের সমবেত গুরুগম্ভীর সুর আর তারই সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষায় গান আর মন্ত্রোচ্চারণে অদ্ভুত্ একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। উত্সবে যোগ দেওয়া পুরুষ ও মহিলারা বর্ণময় তিব্বতি পোশাক আর রুপোর অলঙ্কার পরে ওই সুরের তালে নাচেন। হেমিস গুম্ফার এই প্রাঙ্গণে বৌদ্ধ গুরু রিনপোচে-র বিশাল ছবি সাজিয়ে রাখা হয় ভক্তদের জন্য। তিব্বতের প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী গুম্ফার লামারা বিশাল আকারের মুখোশ পরে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির লড়াইয়ের দৃশ্য তুলে ধরেন ভক্ত ও দর্শকদের সামনে। ওই মুখোশগুলি দেখলে মনে হয় যেন চিনা রূপকথার বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে।

• দ্রি উত্সব

অরুণাচল প্রদেশের কৃষি উত্সব দ্রি। ‘আপাতনি’ উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ ফি বছর ৫ জুলাই এই উত্সব পালন করেন। উত্সবের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় রাজ্যের জিরো-তে। তামু, হার্নিয়াং, মেতী এবং দান্নি—এই চার দেবতাকে উত্সর্গ করেই শুরু হয় কৃষি উত্সবের। চাষাবাদ যাতে ভাল হয় তার জন্য প্রতি বছরই এই উত্সবের আয়োজন করে থাকে আপাতনি-রা। দেবতাদের তুষ্ট করতে দেওয়া হয় পাখির মাংস, ডিম, ভেড়া ইত্যাদি। উত্সবে যোগ দিতে আসা উপজাতি মানুষরা মাদক সহযোগে মহাভোজে মেতে ওঠেন। নাচ-গান ও প্রথাগত আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়।

পরিষেবা

ভারতে এয়ার এশিয়ার নতুন পরিষেবা

বেঙ্গালুরু থেকে গোয়ার ভাস্কো দ্য গামা পর্যন্ত বিমান পরিষেবা শুরু করল এয়ার এশিয়া। ২০১৩-য় বিমান পরিষেবা শুরু করে মালয়েশিয়ার বিমান সংস্থা এশিয়া বেরহাদ। কম খরচে যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সুনাম আছে সংস্থাটির। ভারত সরকার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতিতে রাশ হালকা করার পরই টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মেলায় এশিয়া বেরহাদ। নাম দেওয়া হয় এয়ার এশিয়া। সংস্থা সূত্রে খবর, গোয়া ছাড়াও তামিলনাডু ও কেরলেও পরিষেবা চালু করবে তারা। সর্বনিম্ন বিমান ভাড়া প্রায় ১,৫০০ টাকা। বেঙ্গালুরু থেকে চেন্নাই, কোচি ও ভাস্কো দা গামা যাওয়ার জন্য যথাক্রমে ১৫০০, ২০০০ ও ২৫০০ টাকা ভাড়া স্থির করা হয়েছে। কম খরচে যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি বিমানে অন্যান্য পরিষেবাতেও কোনও খামতি রাখা হবে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে পছন্দের খাবার, আসন-এর জন্য অতিরিক্ত ২০০-৬০০ টাকা গুনতে হবে যাত্রীদের। অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলি ১৫ কেজি পর্যন্ত লাগেজ বিনামূল্যে বহন করার অনুমতি দিলেও এ ক্ষেত্রে কিন্তু এয়ার এশিয়া বিশেষ ছাড় দেয়নি।

যাত্রী সুরক্ষায় দেশ জুড়ে মেট্রোরেলের আপত্কালীন হেল্পলাইন

মেট্রো সফরকালীন কোনও বিপদে পড়লে শুধু ডায়াল করতে হবে চারটি নম্বর-১৫১১। ব্যস! সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যাবে পুলিশি সহায়তা। দেশ জুড়ে যে সব শহরগুলিতে মেট্রো পরিষেবা রয়েছে সেখানে মেট্রোরেলের যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য এই অভিনব উদ্যোগ নিল দিল্লি পুলিশ। ট্রেনই হোক বা প্ল্যাটফর্ম যেখানেই যাত্রীরা হয়রানির শিকার হবেন তাঁদের শুধু এই চারটি নম্বর মনে রাখার পরামর্শ দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। কারণ মেট্রোতে সফররত যাত্রীর সংখ্যা যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই এবং শ্লীলতাহানির মতো নানা অপরাধমূলক কাজকর্মও। মেট্রো যাত্রীদের এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই দিতে দেশ জুড়ে এই হেল্পলাইন চালুর কথা ভাবা হয়েছে। আপত্কালীন সহায়তা পেতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হেল্পলাইন চালু হলেও মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ প্রথম। প্রাথমিক ভাবে দিল্লিবাসীর জন্য এই হেল্পলাইন চালু করল দিল্লি পুলিশ। ধীরে ধীরে অন্যান্য শহরগুলিতেও এই পরিষেবা চালু করা হবে।

• নতুন রুটে বাস চালু মুম্বইয়ে

মুম্বইয়ে নতুন বাস পরিষেবা চালু করল বৃহন্মুম্বই ইলেকট্রিক সাপ্লাই ও পরিববণ সংস্থা। দু’টি রুটে চালানো হবে করিডর সি-৯ ও এ-৮ নামে বাস দু’টিকে। সি-৯ বাসটি ঘাটকোপার থেকে রিগাল সিনেমা পর্যন্ত চলবে। অন্য দিকে, এ-৮ বাসটি চালানো হবে পশ্চিম মুলুন্দ থেকে কোলাবা পর্যন্ত। এই দু’টি পথে মেট্রো পরিষেবাও রয়েছে। তবে, বাস সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই রুটে মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার যাত্রীর চাপ প্রচুর বেড়ে গিয়েছে। সেই চাপ কমাতেই ওই দু’টি বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আরও জানিয়েছে পরিবহণ সংস্থাটি। পরবর্তীকালে আরও বেশ কয়েকটি রুটে বাস চালানোর পরিকল্পনা করছেন বাস কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে একটি মেট্রো ফেরি-১ যা চাকলা থেকে পূর্ব অন্ধেরি পর্যন্ত চলবে এবং মেট্রো ফেরি-২ যা পশ্চিম অন্ধেরি থেকে বেহরাম বাগ পর্যন্ত চলবে।

সংবাদ সংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE