• কোথাও পিটিয়ে হত্যা।
• কোথাও ধর্ষণ করে খুন।
• কোথাও বা চিরতরে প্রতিবাদীর কণ্ঠরোধ।
• আবার কোথাও বিনা অপরাধে পুলিশি হেনস্থা।
• মহিলার অসম্মান রুখতে গিয়ে খুন হয়ে যাওয়া।
পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের লাগাতার অপরাধের ঘটনায় অবিলম্বে রাজ্য সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে প্রতিকারহীন বহু অপরাধের সাক্ষী এই বাংলা। একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি। উল্টে খোদ মুখ্যমন্ত্রী কখনও ধর্ষণের মতো ঘটনাকে বলছেন ‘তাঁর সরকারকে অপদস্থ করার জন্য সাজানো ঘটনা’। কখনও বা শাসক দলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠলে তিনি স্রেফ বলে দিচ্ছেন, ‘ছোট ঘটনা’।
একটি-দু’টি নয়, এই ধরনের ২৪টি ঘটনার কথা জানিয়ে ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে একটি অভিযোগপত্র পেশ করেছিল ‘আক্রান্তদের’ নিয়ে তৈরি নতুন সংগঠন ‘আক্রান্ত আমরা’।
২০১১ সালে হাওড়ায় তপন দত্তের হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে পুলিশি হেনস্থা, কামদুনিতে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুন থেকে প্রতিবাদী যুবক বরুণ বিশ্বাসের হত্যাকাণ্ড-সহ নানা ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। সব ক’টি ঘটনাতেই অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের কর্মী-সমর্থক কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে। বেলপাহাড়ির সভায় দাঁড়িয়ে কৃষক শিলাদিত্য চৌধুরীকে মুখ্যমন্ত্রীর মাওবাদী তকমা দেওয়া এবং তার জেরে ওই যুবককে গ্রেফতার করে হয়রানির কথাও জানানো হয়েছে অভিযোগপত্রে। তাতে তুলে ধরা হয়েছে বীরভূমের পাড়ুইয়ে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মী সাগর ঘোষের হত্যাকাণ্ড এবং মধ্যমগ্রামের সেই মেয়ের কথা, দু’-দু’বার গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পরে আগুনে পুড়ে যাঁর মৃত্যু হয়।
‘আমরা আক্রান্ত’ সংগঠনের ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ১২ জানুয়ারি ওই চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে রাজ্যকে। ওই সব ঘটনার ক্ষেত্রে সরকারের তরফে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, অভিযোগকারীদের তা জানাতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই চিঠির কথা অবশ্য স্বীকার করতে নারাজ নবান্নের কর্তারা। তবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে মাঝেমধ্যেই কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। তদন্তের গতিপ্রকৃতি জানিয়ে তার উত্তরও পাঠিয়ে দেওয়া হয় যথাসময়ে। এ ক্ষেত্রেও চিঠি পেলে তার ব্যতিক্রম হবে না।”
অভিযোগকারী সংগঠনের আহ্বায়ক অম্বিকেশ মহাপাত্র জানান, ৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে অভিযোগপত্রটি দেওয়া হয়। তখনই তিনি জানিয়েছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠিটি পাঠিয়ে দেবেন। অম্বিকেশবাবুর কথায়, “এর পরেও ব্যবস্থা না-নিলে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এবং মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হবে।”
অপরাধের মোকাবিলায় পুলিশ নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ তুলেছেন ‘আমরা আক্রান্ত’ সংগঠনের পরামর্শদাতা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, “এ রাজ্যের পুলিশ এখন আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ায় না। এখানকার পুলিশ আক্রমণকারীদের রক্ষার্থেই কাজ করছে।” তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড় মারার জন্য খুনের চেষ্টার ধারা দেওয়াটা হাস্যকর। অথচ যারা খুন করছে, তাদের দেওয়া হচ্ছে জামিনযোগ্য ধারা!
ওই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির হুঁশিয়ারি, “এর পরেও কাজ না-হলে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে লাগাতার আন্দোলন হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy