Advertisement
E-Paper

এই সময়েই ওল চাষে লাভ বেশি

সব্জি হিসাবে ওলের চাষ কিছুটা লটারিতে এক টাকা লাগিয়ে দশ টাকা পাওয়ার মতো। সঠিক প্রযুক্তিতে চাষ করলে যতটা লাগাবেন, তার দশ গুণ তো বটেই, ১৩-১৪ গুণ ফলন পাওয়া যায় অনায়াসে। তবে মাঘের শেষ থেকে ফাল্গুলে কিছুটা আগাম লাগালে যেমন দাম পাওয়া যাবে, দেরি করলে ততটা না-ও মিলতে পারে। শুধু মাথায় রাখতে হবে, বর্ষার সময় জুড়ে যেহেতু জমিতে ফসল থাকবে, সেহেতু একটু উঁচু জমি ও জল-নিকাশির ব্যবস্থা থাকা দরকার।

শুভদীপ নাথ

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:২৫

সব্জি হিসাবে ওলের চাষ কিছুটা লটারিতে এক টাকা লাগিয়ে দশ টাকা পাওয়ার মতো। সঠিক প্রযুক্তিতে চাষ করলে যতটা লাগাবেন, তার দশ গুণ তো বটেই, ১৩-১৪ গুণ ফলন পাওয়া যায় অনায়াসে। তবে মাঘের শেষ থেকে ফাল্গুলে কিছুটা আগাম লাগালে যেমন দাম পাওয়া যাবে, দেরি করলে ততটা না-ও মিলতে পারে। শুধু মাথায় রাখতে হবে, বর্ষার সময় জুড়ে যেহেতু জমিতে ফসল থাকবে, সেহেতু একটু উঁচু জমি ও জল-নিকাশির ব্যবস্থা থাকা দরকার।

গলা চুলকায় না

ওল খেলে গলা চুলকায় অনেক সময়। তাই অনেকে ওল খান না। কিন্তু ওলের মধ্যে যে ছুঁচলো ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকার জন্য এমনটা হয়, নতুন কয়েকটি জাতে তার পরিমাণ কম। তাই গলা ধরে না এখন। সেই কারণেই নতুন জাতের এই ওল চাষের বিস্তার ঘটছে পশ্চিমবঙ্গে। দক্ষিণ ভারতীয় জাত কাভুর ও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিধান কুসুম’ মাখনের মতো খেতে, গলা চুলকায় না।

চাষের সময়

উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া ওল গাছ খুব পছন্দ করে। সেই জন্য খরিফ মরসুমে এর চাষ হয়। সাধারণ ভাবে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ওল রোয়া হয়। কিন্তু ভাল সেচের ব্যবস্থা থাকলে ফাল্গুন-চৈত্র মাসেও লাগানো যায়। বরং এই সময়ে লাগালেই ভাল। কারণ আগে-ভাগে ফসল ওঠে বলে বাজারে দাম পাওয়া যায়।

জমি তৈরি

সারাদিন রোদ পায় আর জল দাঁড়ায় না এমন জমি ওল চাষের জন্য আদর্শ। চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে এবং সমতল করতে হবে। এরপর আগাছা ভাল ভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

বীজ বপন

বীজ হিসাবে ব্যবহারের জন্য ক’দিন রোদে ওল গরম করে নিলে অঙ্কুরোগ্দম ভাল হয়। কেজিখানেকের মতো গোটা বীজকন্দ পেলে ভাল। না হলে ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজির মতো মুখীর অংশ সমেত টুকরো টুকরো করে কেটে বসাতে হয়। বসানোর আগে অবশ্য শোধন করা দরকার। পারলে থকথকে গোবরজলে বা শুধু জলে লিটারে ৩ গ্রাম ম্যানকোজেব বা কার্বেন্ডাজিম ও ম্যানকোজেবের মিশ্র ছত্রাকনাশক গুলে বীজকন্দের টুকরো মিনিট পনেরো ডুবিয়ে রেখে ৩-৪ দিন ছায়ায় শুকিয়ে লাগতে হবে। কাভুর বা বিধান কুসুমের জন্য ২.৫ ফুটের আর দেশি জাতের জন্য ফুট তিনেকের এক হাত গর্ত খুঁড়ে শুকনো গোবর সারের সঙ্গে কিছুটা ছাই ও আধ মুঠো হিউমিক অ্যাসিড দানা (হিটম্যাক্স দানা), সম-পরিমাণ নিম দানা (নিম-উর্জা নামে) মিশিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে। মুখীর দিক উপরে করে গর্তে বসান। মাটি উঁচু করে রিং-এর মতো নিকাশির ব্যবস্থা রাখুন।

সার

বীজ লাগানোর দেড় মাস পর (পাতা খোলার আগে) ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম ১০:২৬:২৬ সার ও কিছুটা হিউমিক অ্যাসিড দানা চাপান দিতে হবে। এর দেড় মাস পরে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম পটাশ এবং কিছুটা হিউমিক অ্যাসিড দানা মিশিয়ে জমিতে দিলেই যথেষ্ট।

অন্য পরিচর্যা

জমির জো অনুযায়ী সেচ দিন। আগাছা বেরোলে হাল্কা নিড়ান দিয়ে মাঝে শাকজাতীয় কিছু চাষ করতে পারেন। বর্ষায় গোড়া উঁচু করিয়ে মাটি ধরিয়ে দিলে ভাল।

রোগপোকা

ওল ফসলে রোগপোকার আক্রমণ বেশি হয় না। তবে অনেক সময় গোড়া পচা রোগ ধরে গাছ ঢলে যায়। বর্ষার সময় ধ্বসা বা পচার উপদ্রব মনে হলে সবার আগে জমির জলনিকাশি ব্যবস্থার দিকে নজর দিন। সাইমক্সানিল+ ম্যানকোজেবের মিশ্র ছত্রাকনাশক ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে এক-দু’বার স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যাবে।

ফসল তোলা

পাঁচ-ছ’মাসে পাতা হলুদ হয়ে আসলে ওল তোলা যাবে। পুজোর সময় তুললে ভাল দাম পাবেন। তবে, প্রয়োজন মতো ক’মাস জমিতে রেখেও তুলতে পারেন ওল। উন্নত জাতে বিঘা প্রতি ৭-৮ কুইন্ট্যাল ওল লাগিয়ে ১৫০-১৭০ কুইন্ট্যাল ফলন পাওয়া যায়। সাধে বলে, ওল চাষ অনেকটা লটারির মতো।

ওল চাষের সমস্যা এর বীচনের ওজনে ও সহজলভ্যতায়। উদ্যোগী চাষিরা বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বা জেলার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র বা লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

লেখক: মুর্শিদাবাদের সহ-উদ্যান পালন অধিকর্তা।

যোগাযোগ: ৯৪৭৪৫৭৮৬৭১

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy