Advertisement
E-Paper

চিনের চোখেও সততার প্রতীক মমতা, দাবি করলেন অমিত

রাজনীতিতে তাঁর প্রধান ইউএসপি ‘সততা।’ দলের অনুগামীরা তাঁকে ‘সততার প্রতীক’ বলে দাবি করে আসছেন বরাবর। সাড়ে চার বছর রাজ্যপাট চালানোর পরে বিরোধীরা অবশ্য তাঁর সেই মূলধনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। দলের অন্দরেও কেউ কেউ এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২৮
চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ইউয়ান চাওকে স্বাগত জানাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নিউটাউনের ইকো পার্কে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ইউয়ান চাওকে স্বাগত জানাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নিউটাউনের ইকো পার্কে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

রাজনীতিতে তাঁর প্রধান ইউএসপি ‘সততা।’ দলের অনুগামীরা তাঁকে ‘সততার প্রতীক’ বলে দাবি করে আসছেন বরাবর।

সাড়ে চার বছর রাজ্যপাট চালানোর পরে বিরোধীরা অবশ্য তাঁর সেই মূলধনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। দলের অন্দরেও কেউ কেউ এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততা-গাথা দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পৌঁছে গিয়েছে বলে দাবি করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ইউয়ান চাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ দেশের সবচেয়ে সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে অভিহিত করেছেন। লি এ-ও বলেছেন, বেজিং জানে যে, মমতা জীবনভর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছেন।’’

বিদেশি রাষ্ট্রনেতার এ হেন প্রশংসায় মুখ্যমন্ত্রী যারপরনাই খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘খোঁজ-খবর করেই নিশ্চয় এমন কথা বলেছেন চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।’’

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এই সব প্রশংসাবাক্য লি’র মুখে অবশ্য প্রকাশ্যে শোনা যায়নি। নিউটাউনের ইকো পার্কে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মমতার সঙ্গে প্রায় ৪৫ মিনিটের বৈঠকের পরে তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘‘ভারত আর চিন বন্ধু দেশ। আমাদের খুব ভাল বৈঠক হয়েছে। দু’দেশের সহযোগিতা আরও বাড়বে।’’ এ কথা বলে তিনি চলে যেতেই অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে ওই দাবি করেন। কী বলেছেন মন্ত্রী?

অমিতবাবুর দাবি, চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বৈঠকের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ভারতের সবচেয়ে সৎ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। অর্থমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আলোচনার শুরুতেই লি জানান, তাঁদের দেশের সরকার ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে একটি সমীক্ষা করিয়েছে। তার রিপোর্টে বলা হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দেশের সবচেয়ে সৎ নেত্রী।’’ পাশাপাশি মমতা যে আজীবন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, সে কথাও চিনা ভাইস প্রেসিডেন্ট মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বলে অমিতবাবুর দাবি।

১৯৮৪ সালে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের হেভিওয়েট প্রার্থী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারানোর পরে রাজনীতিতে মমতার উত্থান শুরু। তাঁর ‘সততা ও সাদামাটা জীবন’ নিয়ে বঙ্গ-রাজনীতিতে প্রচারের হাতেখড়িও তখন। দিন যত এগিয়েছে, সেই প্রচার গতি পেয়েছে। তৃণমূলের নেতারা বলছেন, সারদা-কেলেঙ্কারিতে দলের নাম যত জড়িয়েছে, ততই মাত্রা পেয়েছে এই প্রচার। মিটিং-মিছিল-স্লোগান তো বটেই, ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন-ব্যানার-হোর্ডিং লাগিয়ে দলনেত্রীকে সততার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টায় কোনও খামতি রাখা হয়নি।

এবং এই দাবির প্রতি কটাক্ষও কম হয়নি। সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে মমতার দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ গ্রেফতার হয়েছেন। অনেকে গ্রেফতার না-হলেও অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন বলে সিবিআই সূত্রের খবর। ওই দাগ সত্ত্বেও মমতা বা তাঁর দল কী ভাবে নিজেদের ধোপদুরস্ত বলে দাবি করে, সেই প্রশ্ন বারবার তুলেছে বিরোধীরা। এমনকী কুণাল ঘোষ, আসিফ খানের মতো একদা তৃণমূল-ঘনিষ্ঠেরাও এ বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে দলকে রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলেছেন।

তাতে অবশ্য নেত্রীর নিজের ও দলের প্রচারে ভাটা পড়েনি। বরং চিন সরকারের এক শীর্ষ কর্তার ‘শংসাপত্র’ পেয়ে সপার্ষদ মমতা উৎফুল্ল। যা নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। কী রকম?

চিনা নেতা মমতার এমন প্রশংসা করেছেন শুনে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, ‘‘উনি সত্যি এ সব বলে থাকলে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু অমিতবাবু চিনা ভাষার অনুবাদ ঠিক বুঝতে পেরেছেন তো? কারণ হিলারি ক্লিন্টন যখন কলকাতায় এসেছিলেন, তখন খুচরো-ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে কি হয়নি, তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় হয়।’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের মন্তব্য, ‘‘বেজিংয়ে কি সারদা কেলেঙ্কারির খবর পৌঁছায়নি? ঠিক খোঁজ রাখলে চিনের প্রতিনিধিও মমতাদেবীকে সততার নয়, সারদার প্রতীক বলতেন।’’

অর্থমন্ত্রী অবশ্য বিরোধীদের কটাক্ষ উড়িয়ে দিয়েছেন। ‘‘চিনারা কখনও বাড়তি কথা বলতে অভ্যস্ত নয়।’’— বলেছেন তিনি। অমিতবাবুর দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ওঁদের (চিনাদের) এই মনোভাব দু’দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে। পশ্চিমবঙ্গে চিনা বিনিয়োগ আনার কাজও সহজ হবে।’’

বৈঠকের পরে দৃশ্যত খুশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মিস্টার লি আমাকে চিনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমিও চিনের বাণিজ্যমন্ত্রীকে তাঁর প্রতিনিধিদল নিয়ে জানুয়ারির বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে আমাদের মধ্যে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একাধিক বোঝাপড়া হবে। সাংস্কৃতিক বিনিময়ও হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগে বেজিং বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরাও এশিয়া পরিকাঠামো ব্যাঙ্ক থেকে মেয়াদি ঋণ নিয়ে রাজ্যের উন্নতি করতে চাই।’’

চিনা ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সে দেশের আরও চার মন্ত্রী এ দেশে এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁরা এ দিন রাতে দিল্লি চলে গিয়েছেন। এ দিন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি যাওয়া ছাড়াও রাজভবনে রাজ্যপালের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন লি। ভাজা মুগের ডাল, ঝিঙে-আলু পোস্ত, পরোটা, লুচি পটলের দোরমার মতো নিরামিষ বাঙালি পদে চিনা প্রতিনিধিদের আপ্যায়ন করেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

অঙ্ক বিশারদ চিনা ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজারহাটের ইকো পার্কের সৌন্দর্য দেখেও মুগ্ধ হয়েছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy