Advertisement
E-Paper

‘রবীন্দ্রনৃত্য’ এ বার পাঁচ বছরের পাঠ্যক্রম

মঞ্চে অস্ফুট আলো। ‘আমার অঙ্গে অঙ্গে কে বাজায় বাঁশি...।’ আনন্দ-বিষাদ তরঙ্গিত হচ্ছে মণিপুরি বা ওড়িশির লাস্যে। অর্জুনের পৌরুষ প্রকাশ পায় কথাকলির পদচারণায়। কখনও গুজরাতি গরবা, কখনও বাংলার বাউল, নানা নাচের ধারায় ফোটে রবীন্দ্রনাথের গানের ভাব, ছন্দ, রস। অথচ রবীন্দ্রসঙ্গীত যে ভাবে সঙ্গীতশিক্ষার একটি বিশিষ্ট ধারা হিসেবে গড়ে উঠেছে, রবীন্দ্রনৃত্য তেমন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। এ বার সেই উদ্যোগই নিচ্ছে বিশ্বভারতী। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে শুরু হচ্ছে রবীন্দ্রনৃত্যের পাঠক্রম। যা সম্পূর্ণ করলে পাওয়া যাবে ‘বি মিউজ’, ‘এম মিউজ’ ডিগ্রি।

‘তাসের দেশ’ নৃত্যনাট্যের কলাকুশলীদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ। ছবি বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের সৌজন্যে প্রাপ্ত।

‘তাসের দেশ’ নৃত্যনাট্যের কলাকুশলীদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ। ছবি বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের সৌজন্যে প্রাপ্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৪ ০৪:০৭
Share
Save

মঞ্চে অস্ফুট আলো। ‘আমার অঙ্গে অঙ্গে কে বাজায় বাঁশি...।’ আনন্দ-বিষাদ তরঙ্গিত হচ্ছে মণিপুরি বা ওড়িশির লাস্যে। অর্জুনের পৌরুষ প্রকাশ পায় কথাকলির পদচারণায়। কখনও গুজরাতি গরবা, কখনও বাংলার বাউল, নানা নাচের ধারায় ফোটে রবীন্দ্রনাথের গানের ভাব, ছন্দ, রস।

অথচ রবীন্দ্রসঙ্গীত যে ভাবে সঙ্গীতশিক্ষার একটি বিশিষ্ট ধারা হিসেবে গড়ে উঠেছে, রবীন্দ্রনৃত্য তেমন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। এ বার সেই উদ্যোগই নিচ্ছে বিশ্বভারতী। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে শুরু হচ্ছে রবীন্দ্রনৃত্যের পাঠক্রম। যা সম্পূর্ণ করলে পাওয়া যাবে ‘বি মিউজ’, ‘এম মিউজ’ ডিগ্রি।

শুক্রবার রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত রবীন্দ্রনৃত্যের পাঠ্যক্রমের কথা ঘোষণা করেন। কেন এর প্রয়োজন? তাঁর উত্তর, “গত একশো বছর রবীন্দ্রনৃত্যের চর্চা হচ্ছে। এই রাজ্যের নিজস্ব শিল্পধারাগুলির অন্যতম হয়ে উঠেছে রবীন্দ্রনৃত্য। কিন্তু তাকে প্রথাগত পঠন-পাঠনের মধ্যে নিয়ে আসার কাজটা বাকি ছিল। সেটাই শুরু করল বিশ্বভারতী।”

১৮৯৯ সালে ত্রিপুরায় গিয়ে বুদ্ধিমন্ত সিংহের মণিপুরি নাচ দেখে মুগ্ধ হ’ন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর আগ্রহে বুদ্ধিমন্ত সিংহ, নবকুমার সিংহ, আমুবি সিংহের মতো মণিপুরি নৃত্যগুরুরা শান্তিনিকেতনে এসে নাচ শেখান। তাঁর নৃত্যনাট্যে কথাকলি, গরবা, বাউলের আঙ্গিকও আসে। ‘রবীন্দ্রনৃত্য’ বলতে অনেকেই বোঝেন, রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে নাচ। তাকে একটি স্বতন্ত্র নৃত্যধারা বলে ধরা হয় না। এখন কেন তাকে একটি ‘বিষয়’ করে তোলা হচ্ছে?

রবীন্দ্র-গবেষক অরুণ বসুর দাবি, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতোই রবীন্দ্রনৃত্য একটি বিশিষ্ট শিল্পধারা। “রবীন্দ্রসঙ্গীতকে আশ্রয় করে, রবীন্দ্রনাথের নান্দনিক ভাবনাকে অনুসরণ করে, বিবিধ নৃত্যের আঙ্গিকে রবীন্দ্রনৃত্যের রূপকল্প তৈরি হয়েছে। বহুদিন আগেই এর ব্যাকরণসম্মত চর্চা শুরু করার দরকার ছিল,” বলেন তিনি। তাঁর মতে, এতদিন বিচ্ছিন্ন, এলোমেলো ভাবে রবীন্দ্রনৃত্যের চর্চা চলছিল। এখন তাকে সংহত করে, নির্দিষ্ট সৌষ্ঠবে, নিয়মশৃঙ্খলায় আবদ্ধ করার কাজ শুরু হবে।

ভারতীয় নৃত্যের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন সুনীল কোঠারি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উদয়শংকর অধ্যাপক সুনীলবাবু জানান, রবীন্দ্রনাথের ধারায় নাচ অনেকেই করে, কিন্তু তা প্রায় ‘হাতের পাঁচ’ বলে ধরে নেওয়া হয়। তার সূক্ষ্ম দ্যোতনা বোঝার চেষ্টা হয় না। “রুক্মিনী দেবী আরুন্ডেল ভরতনাট্যম, গুরু ভেম্পতি চিন্না সত্যম কুচিপুড়ি, ঝাভেরি বোনেরা মণিপুরি, যতীন গোস্বামী অসমের সত্রিয় নৃত্যধারায় রবীন্দ্রনৃত্য পরিকল্পনা করেছেন।” এই সমৃদ্ধ নৃত্যধারাকে বিধিবদ্ধ চর্চার মধ্যে আনা দরকার, বলেন তিনি।

রবীন্দ্রনৃত্যের পাঠক্রম পরিকল্পনা করেছেন সঙ্গীতভবনের অধ্যাপক শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, পাশ্চাত্য ব্যালে থেকে সাবেকি লোকনৃত্য, নানা আঙ্গিকে রবীন্দ্রনৃত্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথের দেড়শো বছরের জন্মোৎসবের সময়ে বহু প্রযোজনা থেকে স্পষ্ট হল, রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে যে ভাবে নাচের পরিকল্পনা করেছিলেন, তার মূল আঙ্গিক বজায় থাকছে এখনকার কোরিওগ্রাফিতেও। “বৈচিত্র এসেছে, কিন্তু আমূল পরিবর্তন হয়নি। রবীন্দ্রনৃত্যকে তাই নাচের একটি বিশিষ্ট ধারা বলে গ্রহণ করা চলে,” দাবি করেন শ্রুতি।

রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপর স্বরলিপির কড়া অনুশাসন চাপানোর জন্য বিশ্বভারতীর প্রতি ভীতি তৈরি হয়েছিল এক সময়ে। রবীন্দ্রনৃত্যকেও কি তেমন নির্দিষ্ট ছাঁচে বেঁধে ফেলা হবে? “কখনওই না,” বলেন শ্রুতি। “এটা রবীন্দ্রনাথ-প্রবর্তিত নৃত্যধারাকে বোঝা, রপ্ত করার একটা বিধিসম্মত চেষ্টা।” আজও শান্তিনিকেতনের প্রযোজনাগুলিতে নৃত্য-পরিকল্পনা, বেশভূষা, আলো, মঞ্চসজ্জাতে রবীন্দ্রনাথ, প্রতিমা দেবী, নন্দলাল বসুর নান্দনিক চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু তার বিশ্লেষণ, আলোচনা হয়নি বললেই চলে। অথচ এর চর্চা থেকে সমকালীন নাচ, নাটকের শিল্পীরাও অনেক উপাদান পেতে পারেন।”

রবীন্দ্রনৃত্যের পাঠক্রমে ছাত্র-ছাত্রীদের মণিপুরি, কথাকলি, ভরতনাট্যমের মতো ধ্রুপদী নাচের চর্চার পাশাপাশি বাউল, ঢালি, রায়বেঁশের মতো বাংলার লোকনৃত্যও শিখতে হবে। তত্ত্বের পাঠে সনাতন ভারতীয় নৃত্যধারাগুলির বিবর্তন, রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলালের নন্দনতত্ত্ব, শান্তিনিকেতনে নৃত্যচর্চার ইতিহাস পড়তে হবে।

রবীন্দ্রনৃত্যের এই পাঠক্রম দেখে মতামত দিয়েছেন রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ শঙ্খ ঘোষও। তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনৃত্য নাম দিয়ে একটি পদ্ধতি অনেক দিন ধরে চলছে। তার নির্দিষ্ট কোনও রূপরেখা আছে কি না, না থাকলে কী করে রূপরেখা দেওয়া যায়, এর ইতিহাস কী, এ বিষয়গুলি শিক্ষাজগতে নিয়ে আসা দরকার।”

rabindra jayanti viswabharati

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।