Advertisement
০৭ মে ২০২৪
last rites

১০৮ বছরের জীবন শেষ, বৃদ্ধার দেহ নিয়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে কীর্তনের দল-সহ শ্মশানের পথে ছেলেরা

বুধবার সুমিত্রাবালার দেহ কাঁধে নিয়ে শান্তিপুর শ্মশানে যাওয়ার জন্য শোভাযাত্রা শুরু করেন তাঁর ছেলে ও নাতিরা। সঙ্গে ছিলেন আত্মীয়-স্বজনেরাও। সব মিলিয়ে যে সংখ্যাটা প্রায় ২০০।

বৃদ্ধা মায়ের দেহ সৎকার করতে যাওয়ার পথে ঢাকঢোল, তাসা-ব্যাঞ্জো বাজিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ হেঁটে এগোতে থাকেন তাঁর পরিবারের সদস্য-সহ প্রতিবেশীরা।

বৃদ্ধা মায়ের দেহ সৎকার করতে যাওয়ার পথে ঢাকঢোল, তাসা-ব্যাঞ্জো বাজিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ হেঁটে এগোতে থাকেন তাঁর পরিবারের সদস্য-সহ প্রতিবেশীরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫০
Share: Save:

১০৮ বছরের মায়ের মৃত্যুতে শোকের আবহ নয়। উল্টে ঢাকঢোল পিটিয়ে, তাসা-ব্যাঞ্জো বাজিয়ে, কীর্তনের দলের সঙ্গে উৎসবের মেজাজে শোভাযাত্রা করে বৃদ্ধার দেহ সৎকারের জন্য শ্মশানে নিয়ে গেলেন তাঁর ছেলেরা। তাঁদের দাবি, বৃদ্ধার নাতিদের ইচ্ছায় এমন শোরগোল করে আনন্দ সহকারে মায়ের শেষকৃত্য করা হয়েছে। বুধবার এ হেন কাণ্ড দেখে অবশ্য ‘বিশুদ্ধবাদীদের’ সমালোচনার মুখে পড়েছেন বৃদ্ধার পরিবার-পরিজনেরা।

নদিয়ার শান্তিপুর শহরের সুত্রাগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুমিত্রাবালা বিশ্বাসের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার মধ্যরাতে। সরকারি নথি অনুযায়ী, তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৮। বৃদ্ধার পরিবার জানিয়েছে, মাসখানেক ধরে রোগে ভুগছিলেন সুমিত্রাবালা। বার্ধক্যজনিত কারণেই তিনি মারা যান।

স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, প্রায় ২৮ বছর আগে সুমিত্রাবালার স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ৮০। তার পর থেকে ৭ ছেলে, ১২ জন নাতি এবং তাঁদের সন্তানসন্ততি মিলিয়ে ৫২ জনের পরিবারে দিন কাটছিল বৃদ্ধার। বুধবার সকালে সুমিত্রাবালার দেহ সৎকারের জন্য শ্মশানে নিয়ে যাওয়া পথে শোকের বদলে আনন্দের আমেজ দেখা গিয়েছে।

বুধবার সুত্রাগড় থেকে সুমিত্রাবালার দেহ কাঁধে নিয়ে শান্তিপুর শ্মশানে যাওয়ার জন্য শোভাযাত্রা শুরু করেন তাঁর ছেলে ও নাতিরা। সৎকার করতে যাওয়ার পথে ঢাকঢোল, তাসা-ব্যাঞ্জো বাজিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ হেঁটে এগোতে থাকেন তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন আত্মীয়-স্বজনেরাও। সব মিলিয়ে যে সংখ্যাটা প্রায় ২০০। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রতিবেশী মহিলা। কীর্তনের দলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে থাকে শবদেহের যাত্রা।

বৃদ্ধার মৃত্যুতে এ হেন উৎসব কেন? সুমিত্রাবালার এক নাতি অমর বিশ্বাসের কথায়, ‘‘আমাদের ঠাকুরমাকে স্বর্গযাত্রা করাতেই এ ব্যবস্থা। কারণ তিনি সৌভাগ্যবতী। আর আমরাও ভাগ্যবান যে তাঁকে কাঁধে নিয়ে শেষযাত্রা করতে পারছি।’’ মায়ের শেষকৃত্যে শোক ভুলে এমন আয়োজন কেন করলেন ছেলেরা? এ প্রশ্নের সম্মিলিত জবাব দিয়েছেন তাঁর ছেলেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘মায়ের নাতিনাতনিরাই বায়না ধরেছে, তাদের দিদিমা-ঠাকুরমাকে বাজনা সহযোগে শ্মশানের পথে নিয়ে যাবে। তাদের ইচ্ছা মতোই বাজনা এবং কীর্তন সহযোগে কাঁধে করে মায়ের দেহ নিয়ে হেঁটে শ্মশানের দিকে নিয়ে যাই আমরা।’’

যদিও এ সব দেখেশুনে স্থানীয়দের একাংশ সমালোচনা করতে ছাড়েননি। এলাকার এক বাসিন্দা রমেন ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘কালে কালে আর কত কী-ই বা দেখব! এ তো রীতিমতো শোভাযাত্রা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

last rites Nadia Crematorium
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE