E-Paper

সদ্যোজাতকে বাঁচাতে স্তন্যদানে এগিয়ে এলেন ১৫ জন মা

সম্প্রতি সদ্যোজাতকে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান দম্পতি। কয়েক দিন আগে তার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু তার পরে শিশুটির অন্ত্রে সংক্রমণ ধরা পড়লে তাকে ফের ভেন্টিলেশনে দিতে হয়।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:১৪

— প্রতীকী চিত্র।

হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পরে ভেন্টিলেশনে থাকা একরত্তির বেঁচে থাকার জন্য দিনে ৩৬০ মিলিলিটার মায়ের দুধ প্রয়োজন। মা অসুস্থ হওয়ায় তাঁর থেকে মিলছে দিনে মেরেকেটে ১০-১৫ মিলিলিটার। বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, রাঁচীর ওই দেড় মাসের শিশুকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন সদ্য মা হওয়া এই শহরের ১৫ জন তরুণী। তাঁদের স্তন্যপানেই ফের জীবনের দিশা দেখছে ওই শিশু।

শিশুর বাবা ধীরাজ কুমার বলছেন, ‘‘ছেলের হৃদ্য‌ন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, যে শিশুদের বয়স ছ’মাসের মধ্যে, তাদের মায়ের দুধই আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারে। সন্তানের অবস্থা খুবই খারাপ। অস্ত্রোপচারের পরে অন্ত্রে ও রক্তে সংক্রমণ হয়েছে। মাতৃদুগ্ধ না পেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। আমার সহকর্মীদের মাধ্যমে অনেক দাতার সন্ধান পেয়েছি। আরও প্রয়োজন।’’

ধীরাজ সল্টলেকে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন। দীপাবলির দিন তাঁর স্ত্রী মাণ্ডবী কুমারী রাঁচীর একটি হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। নবজাতকের নাম রাখা হয় কার্তিক। ধীরাজ বলেন, ‘‘জন্মের দশ-এগারো দিন পরেও বাচ্চা মায়ের দুধ খেতে পারছিল না। চিকিৎসক বলেছিলেন, ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। ছেলেকে রাঁচীরই একটি হাসপাতালে ভর্তি করাই। পরে জানা যায় ওর হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা আছে। অস্ত্রোপচার করতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে রাঁচীরই অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু ওখানে ছেলের অবস্থার আরও অবনতি হয়। এর মধ্যে হদ্‌যন্ত্রে সংক্রমণও ধরা পড়ে। ছেলেকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়।’’

সম্প্রতি সদ্যোজাতকে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান দম্পতি। কয়েক দিন আগে তার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু তার পরে শিশুটির অন্ত্রে সংক্রমণ ধরা পড়লে তাকে ফের ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। ধীরাজ বলেন, ‘‘সন্তানের জন্মের পরে আমার স্ত্রী সেভাবে স্তন্যদান করতে পারেননি। দুশ্চিন্তা, শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের কারণে উনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খুব বেশি হলে দিনে ২০ মিলিলিটার দুধ মিলছে স্ত্রীর থেকে। আমার সহকর্মীরা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ করে দাতার ব্যবস্থা করেছেন। সমাজমাধ্যমেও প্রচার চলছে।’’

সমাজমাধ্যমে বিষয়টি নজরে আসে সদ্য মা হওয়া সোদপুরের লোপামুদ্রা মুখোপাধ্যায়ের। কৃষিবিজ্ঞানে পিএইচডি করা লোপামুদ্রা বলেন, ‘‘আমার সন্তানের বয়স ছ’মাস। এক বন্ধুর সমাজমাধ্যমে পোস্ট দেখে বিষয়টি জানতে পারি। পোস্টে একটি ফোন নম্বর দেওয়া ছিল। ফোন করে জানাই, আমি সাহায্যে রাজি আছি। ওঁরা আমার বাড়ি থেকে দুধ সংগ্রহ করেছেন। প্রয়োজনে আমি বারবার স্তন্যদান করব। এটা কর্তব্য।’’

খড়দহের বাসিন্দা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী পল্লবী চট্টোপাধ্যায়ের সন্তানের বয়স ছ’মাস। তিনি ধীরাজের সন্তানের অসুস্থতার কথা জানতে পারেন তাঁর স্বামীর থেকে। পল্লবী বলেন, ‘‘যত দিন প্রয়োজন হবে আমি ওর জন্য স্তন্যদান করব। আমার মতো আরও অনেকে এগিয়ে এসেছে শুনেছি।’’

এসএসকেএম হাসপাতালে মাতৃদুগ্ধ ব্যাঙ্ক রয়েছে। কিন্তু তার প্রচার নেই। পল্লবী বলেন, ‘‘সন্তান জন্মানোর পরে আমার অনেক দুধ নষ্ট হয়েছে। ফোন করেও ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কিন্তু শুনেছি ওখানে অনেক শিশুর মায়ের দুধ প্রয়োজন হয়।’’ এসএসকেএমে ভর্তি রুগ্ন নবজাতক, যাদের মায়েরা কোনও কারণে তাদের স্তন্যপান করাতে পারছেন না, ওই ব্যাঙ্ক থেকে তারা মাতৃদুগ্ধ পায়। যাঁর উদ্যোগে ওই ব্যাঙ্কটি তৈরি হয়েছিল, সেই নবজাতক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরুণ সিংহ বলেন, ‘‘এখন আর মাদার্স মিল্ক ব্যাঙ্ক বলা হয় না। ব্যাঙ্ক বললেই একটা আর্থিক লেনদেনের কথা মনে আসে। এখন তাই বলা হয়, কম্প্রিহেনসিভ ল্যাকটেশনাল ম্যানেজমেন্ট সেন্টার। আরও প্রচার দরকার। অনেককেই জানেন না, এসএসকেএমের কেন্দ্রটি অত্যন্ত আধুনিক। গোটা এশিয়ায় এমন কেন্দ্র আর কোথাও নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

new born baby Breast milk Critical Condition

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy