Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পড়ব, দেখব সংসারটাকে, বিয়ে ঠেকিয়ে সঙ্কল্প ছাত্রীর

অর্পিতা জানিয়ে দেয়, সে এখন বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না। মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের ছাত্রী অর্পিতার এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার কথা। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতির কাছে গিয়ে সব জানায় সে। চন্দনবাবু টানা কয়েক দিন ধরে অর্পিতার বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে বোঝান।

অর্পিতা অধিকারী

অর্পিতা অধিকারী

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪২
Share: Save:

বাড়ির লোক বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কেনা হয়ে গিয়েছিল বিয়ের শাড়ি, গয়না। বরাত দেওয়া হয়েছিল ডেকরেটরকেও। দু’বাড়িতেই ছাপা হয়ে গিয়েছিল বিয়ের কার্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেঁকে বসল পাত্রীই। ১৭ বছরের অর্পিতা অধিকারী জানিয়ে দিল, বিয়ে সে করবে না।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের নালুয়া গ্রামের বাসিন্দা গণেশ অধিকারী তাঁর মেয়ে অর্পিতার বিয়ে ঠিক করেছিলেন জয়নগরের সুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে। ঠিক হয়, মিষ্টির দোকানের কর্মী সুব্রতের সঙ্গে অর্পিতার বিয়ে হবে আগামী বৃহস্পতিবার। কিন্তু অর্পিতা জানিয়ে দেয়, সে এখন বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না। মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের ছাত্রী অর্পিতার এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার কথা। পরীক্ষা ২৭ মার্চ থেকে। তারই মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতির কাছে গিয়ে সব জানায় সে। চন্দনবাবু টানা কয়েক দিন ধরে অর্পিতার বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে বোঝান। কথা বলেন তাঁদের পড়শিদের সঙ্গেও।

অর্পিতারা তিন বোন। অর্পিতাই বড়। বাবার নির্দিষ্ট রোজগার নেই। মা পাপিয়াদেবী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। মাসে রোজগার বড়জোর চার হাজার টাকা। পাপিয়াদেবী সোমবার বললেন, ‘‘আমাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। ভাল পাত্রের সন্ধান পেয়ে ভেবেছিলাম, মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেব।’’ কিন্তু টেস্টে প্রায় ৮০ শতাংশ নম্বর পাওয়া অর্পিতা এ দিন জানায়, বিয়ে নয়, পড়াশোনা করবে সে। তাই এক রকম মরিয়া হয়েই শেষ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষককে সব জানায়।

আরও পড়ুন: সামোসা থেকে সিগারেট, সঙ্কেতেই কারবার

চন্দনবাবু জানান, তিনি যে শুধু অর্পিতার পরিবারকে বিষয়টি বুঝিয়েছেন, তা নয়। পাত্রের বাড়িতেও বোঝাতে হয়েছে। বিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে শুনে পাত্র পক্ষ জানিয়েছিল, বিয়ে উপলক্ষে তাদের ইতিমধ্যে ১৯ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। বিয়ে ভাঙলে সেই টাকা দিতে হবে কনে পক্ষকে। চন্দনবাবু বললেন, ‘‘অনেক বুঝিয়ে-সুজিয়ে ওঁদের নিরস্ত করা গিয়েছে।’’

সাহসে ভর করে নাবালিকা অর্পিতা বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। নালুয়া গ্রামে এখন অন্যতম প্রধান আলোচ্য সে-ই। তবে সমালোচনায় কান দিচ্ছে না ওই কিশোরী। ‘‘বিয়েটা ভেঙে দিয়েছি। পাড়ার লোক এই নিয়ে নানা কথা বলছে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ভূগোল নিয়ে পড়ব। বাড়িতে খুব অভাব। চাকরি করে সংসারটাকে দেখতে চাই,’’ বলল অর্পিতা।

চন্দনবাবু জানান, আপাতত অর্পিতা স্কুলের হস্টেলে থাকবে। পরীক্ষা দেবে সেখান থেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE