Advertisement
E-Paper

১৯টি লাশে চোকাতে হল নৌকাডুবির দাম

তিনটে দেহ আগেই মিলেছিল। একে-একে আরও ষোলোটা দেহ ফিরিয়ে দিল ভাগীরথী। নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা সোমবার দিনের শেষে গিয়ে দাঁড়াল উনিশে। এর মধ্যে এক জনের দেহ রাত পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি। নিখোঁজ অন্তত আরও এক জন। সাড়ে তিন বছরের শিশু থেকে পঞ্চাশ পেরোনো গেরস্থ, তরতাজা কিশোরী থেকে সাতাশ ছোঁয়া তরুণ। শনিবার রাতে ঝড়-থামা টালমাটাল নদীতে এঁদের সকলেই কালনা থেকে নৌকায় উঠেছিলেন। কিন্তু শান্তিপুরে আর ফিরতে পারেননি।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০৩:৩৬
মারা গিয়েছে বছর চোদ্দোর স্বাতী বিশ্বাস। শোকার্ত মা। ছবি :সুদীপ ভট্টাচার্য।

মারা গিয়েছে বছর চোদ্দোর স্বাতী বিশ্বাস। শোকার্ত মা। ছবি :সুদীপ ভট্টাচার্য।

তিনটে দেহ আগেই মিলেছিল।

একে-একে আরও ষোলোটা দেহ ফিরিয়ে দিল ভাগীরথী। নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা সোমবার দিনের শেষে গিয়ে দাঁড়াল উনিশে। এর মধ্যে এক জনের দেহ রাত পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি। নিখোঁজ অন্তত আরও এক জন।

সাড়ে তিন বছরের শিশু থেকে পঞ্চাশ পেরোনো গেরস্থ, তরতাজা কিশোরী থেকে সাতাশ ছোঁয়া তরুণ। শনিবার রাতে ঝড়-থামা টালমাটাল নদীতে এঁদের সকলেই কালনা থেকে নৌকায় উঠেছিলেন। কিন্তু শান্তিপুরে আর ফিরতে পারেননি।

রবিবারের আছড়ে পড়া ক্ষোভের বদলে এ দিন ছিল শ্মশানের নীরবতা। বিশেষ করে নদিয়ার দিকে। বেশির ভাগই যে শান্তিপুর থেকে নৃসিংহপুর ঘাট পেরিয়ে বর্ধমানের দিকে গিয়েছিলেন ভবা পাগলার মেলায়।

শনিবার রাত থেকেই পাগলের মতো কেঁদে চলেছেন নৃসিংহপুরের কল্পনা হালদার। নিজের মেয়ে, চোদ্দো বছরের কাকলি আর পাশের বাড়ির দুই বোন, এগারো বছরের রিয়া আর পাঁচ বছরের তৃষাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মেলায় গিয়েছিলেন। জলে পড়েও তিনি রিয়া-তৃষাকে নৌকার খোলে তুলে দিয়েছিলেন। ‘‘আমার মেয়েটা যে কোথায় চলে গেল, আর খুঁজেই পেলাম না’’— এইটুকু বলেই কান্নায় ফের দুমড়ে যায় তাঁর গলা।

গোপপাড়ার অনিল বিশ্বাস শনাক্ত করেছেন ছেলে রামপ্রসাদ (৩৬) আর সাড়ে তিন বছরের নাতি আকাশের দেহ। নৃসিংহপুর মধ্যপাড়ার স্বাতী বিশ্বাসের (১৪) দেহ শনাক্ত করেছেন জ্যাঠা। বর্ধমানের ধাত্রীগ্রামে বাড়ি
সাবিত্রী বর্মণের। মা আর মেয়েকে নিয়ে নদী পেরিয়ে নৃসিংহপুরে বাপের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। ছ’বছরের মেয়ে লক্ষ্মীর মরা মুখ দেখেছেন ভোরে। তার পরে দিনভর নদীর ঘাটে ঘুরেছেন আর চিৎকার করে বলেছেন, ‘‘আমার মেয়ে ফিরিয়ে দাও...!’’

নদীর পাড়ে ছড়িয়ে পড়ে ডুবন্ত মানুষগুলোর পা থেকে ভেসে যাওয়া চটি-জুতো। রবিবার জনরোষে আগুন লাগা নৌকাগুলোর আধপোড়া খোল পড়ে এক পাশে। গাছের নীচে শ্রান্ত র‌্যাফ। নদীর বুকে চিরে স্পিড বোট দিনভর ছুটেছে সিভিল ডিফেন্স এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দলের (এনডিআরএফ) সদস্যদের নিয়ে। এঁদের মধ্যে আট জন ‘ডিপ ডাইভার’। রবিবারই নদীতে ডুবুরি নামানো হয়েছিল। কিন্তু স্রোতের
চাপে তাঁরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। নৌকা নিয়ে নিখোঁজদের আত্মীয়রাও রাতভর খুঁজে বেরিয়েছেন। নদিয়ার সাহেবডাঙা এলাকার প্রতাপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমার নিজের আত্মীয়কে না পেলেও অন্য চারটি দেহ তুলেছি।’’ কালনা খেয়াঘাটের আশপাশ থেকে ন’টা দেহ মেলে, নৃসিংহপুরের কাছ থেকে ওঠে বাকি দশটা।

নৃসিংহপুর থেকে কালনাঘাট ফেরি সার্ভিস আপাতত বন্ধ রেখেছে কালনা পুরসভা। ঘাট মালিকেরা রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত চুক্তি
মানেননি বলে এ দিনই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ষথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে নদীর দু’পারেই। নদিয়ায় পুলিশকে আক্রমণ ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে রবিবার রাতে ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সকলকেই ১৪ দিনের জন্য জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

সন্ধ্যায় বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় নৃসিংহপুরে এসে নৌকা নিয়ে কালনার দিকে যান। তবে বিক্ষোভের মুখে পড়ে সেখানে নামতে পারেননি। শান্তিপুরেই ফিরে আসতে হয় তাঁকে। মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছে।

died drowning
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy