Advertisement
১৬ মে ২০২৪

খুন বাজি ফাটানোর প্রতিবাদে, দু’জনের যাবজ্জীবন

কালীপুজোতে শব্দবাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। সেই ‘অপরাধে’ চপার দিয়ে তাঁকে কোপানো হয়েছিল। শাবলের আঘাতে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাথা। ইট গিয়ে মুখ থেঁতলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল নালায়। প্রাণে বাঁচতে পারেননি তিনি।

শেখর কীর্তনিয়া ও (ডান দিকে) গৌতম বল্লভ। —নিজস্ব চিত্র।

শেখর কীর্তনিয়া ও (ডান দিকে) গৌতম বল্লভ। —নিজস্ব চিত্র।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র
বারাসত ও অশোকনগর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৫
Share: Save:

কালীপুজোতে শব্দবাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। সেই ‘অপরাধে’ চপার দিয়ে তাঁকে কোপানো হয়েছিল। শাবলের আঘাতে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাথা। ইট গিয়ে মুখ থেঁতলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল নালায়। প্রাণে বাঁচতে পারেননি তিনি।

প্রায় তিন বছর আগে এমন নৃশংস ভাবে খুন হওয়ার পরে রাজ্যের অষ্টম শব্দ-শহিদের তালিকায় নাম উঠে গিয়েছিল অশোকনগরের পিন্টু বিশ্বাসের। সেই খুনের ঘটনায় বিচার পেল পিন্টুবাবুর পরিবার। বুধবার বারাসত জেলা আদালতের পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপন মণ্ডল অশোকনগরেরই বাসিন্দা গৌতম বল্লভ এবং শেখর কীর্তনিয়া নামে দুই যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেন। এই নিয়ে রাজ্যে দ্বিতীয় কোনও শব্দ-শহিদের পরিবার সুবিচার পেল। এখনও বিচারাধীন রয়েছে এ সংক্রান্ত ৬টি মামলা। এ দিনের রায়কে স্বাগত জানিয়ে পরিবেশকর্মীরা বাকি মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি তুলেছেন।

পিন্টুবাবু হত্যা-মামলার সরকারি আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘যে রকম নৃশংস ভাবে পিন্টুবাবুকে খুন করা হয়েছিল, তাতে বিরলতম এই মামলার গুরুত্ব বিচার করে বিচারক দ্রুত সাজা দিয়েছেন। মামলায় ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।’’ রায়ে খুশি পিন্টুবাবুর স্ত্রী নমিতাদেবী। এ দিন তিনি বা পরিবারের কেউ আদালতে যাননি। পরে নমিতাদেবী বলেন, ‘‘দোষীরা শাস্তি পাওয়ায় আমরা খুশি। খুনিদের সাজার জন্য আমাকে প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছিল।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোকনগরের আস্রফাবাদের এজি কলোনির সুকান্ত পল্লির বাসিন্দা, বছর চল্লিশের পিন্টুবাবু খুন হন ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর। সে দিন ছিল কালীপুজো। সন্ধ্যা থেকেই পাড়ার ছেলেরা বিকট শব্দে বাজি ফাটাচ্ছিল। পিন্টুবাবুর পড়শি এক বৃদ্ধা তার দিন চারেক আগে মারা গিয়েছিলেন। বাড়িতে ছিলেন তাঁর অসুস্থ স্বামী। সে কারণে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ পিন্টুবাবু বাজি ফাটানো নিয়ে আপত্তি তোলেন। তার পরেই গৌতম, শেখররা এলাকার কয়েক জনকে নিয়ে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

পিন্টুবাবুর স্ত্রী গৌতম, শেখর-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন থানায়। পুলিশ গৌতম, শেখর ছাড়াও সমীর বিশ্বাস নামে এক যুবককে ধরে। পরে গৌতম ও সমীর হাইকোর্ট থেকে জামিন পায়। পুলিশ বাকি তিন জনকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দেয়। পরবর্তী সময়ে গৌতমকে পুলিশ ফের গ্রেফতার করে। পুলিশের খাতায় এখনও চার অভিযুক্ত পলাতক। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সাক্ষীদের যথাযথ ভাবে সাক্ষ্য দেওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বারাসত আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী শান্তময় বসু বলেন, ‘‘মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে।’’

অশোকনগরে পিন্টুবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে তাঁর আইটিআই পাঠরত মেয়ে পায়েলের। তবে, তিনি সাজা নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। পিন্টুবাবুর স্ত্রী ও ছেলে বাড়িতে ছিলেন না। পিন্টুবাবু খুন হওয়ার পরে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি উঠেছিল। তা এখনও মেলেনি।

এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পিন্টুবাবুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি সরকারের ভাবা উচিত। খুনিদের যাতে দ্রুত সাজা হয় সে জন্য আমরা পদক্ষেপ করেছিলাম। বাকি মামলাগুলিরও যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সে জন্য চেষ্টা জারি থাকবে।’’ একই সুরে আর এক পরিবেশকর্মী নব দত্ত বলেন, ‘‘এই রায়ের ফলে যারা শব্দকে হাতিয়ার করে দৌরাত্ম্য করে তারা নিশ্চয়ই সাবধান হবে। বাকি মামলাগুলিরও দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রশাসনের উদ্যোগী হওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE