E-Paper

কর্মবিরতি রাজ্য জুড়ে, মৃত ২ রোগী

আরজি করে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রেক্ষিতে দোষীদের শাস্তির দাবি এবং নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি তুলে রাজ্য জুড়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা সোমবার কর্মবিরতি পালন করেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৪৫
সোমবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না।

সোমবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

আরজি করে তখন চলছিল কর্মবিরতি। সোমবার এরই মধ্যে ট্রমা বিভাগে এক রোগীর মৃত্যু হয়। মৃতের নাম সুমন সরকার। পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, গত শুক্রবার থেকে তিনি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও শনি এবং রবিবার কার্যত কোনও চিকিৎসাই হয়নি সুমনের। একই ভাবে বহির্বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ থাকায় সেখানে চিকিৎসা করাতে এসে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালেও পিয়ারুল শেখ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

আরজি করে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রেক্ষিতে দোষীদের শাস্তির দাবি এবং নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি তুলে রাজ্য জুড়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা সোমবার কর্মবিরতি পালন করেন। কোথাও আবার তাঁদের সঙ্গে এই আন্দোলনে যোগ দেন সিনিয়র ডাক্তারেরাও। ফলে রাজ্যের কোথাও বহির্বিভাগ, কোথাও তার সঙ্গে অন্য বিভাগেও কাজ বন্ধ থাকে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য জুড়ে দিনভর ভোগান্তি গিয়েছে রোগীদের। খোদ আরজি কর এবং মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে দু’টি মৃত্যুর কারণ হিসেবেও কর্মবিরতির দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে।

আরজি করে মৃত, বছর সাঁইত্রিশের সুমন সরকারের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি বারাসতের কামাখ্যা মন্দির এলাকার বাসিন্দা। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, শুক্রবার বিকেল থেকে তাঁদের রোগীর চিকিৎসায় অবহেলা শুরু হয়। পরিবারের ঘনিষ্ঠ দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘‘বড় ডাক্তারবাবুর সঙ্গে এক দিনই কথা বলার সুযোগ হয়েছে। রবিবার সারাদিন ডাক্তার ছিল না। আমি নার্সের ঘরে ভুলবশত ঢুকে পড়েছিলাম। এর ফলে উনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেন। আমাকে ঘর থেকে বের করে দেন।’’ মৃত্যুর শংসাপত্র পেতেও তাঁদের দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে বলে দীপঙ্কর জানান।

সোমবারই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে এসে মৃত্যু হয় পিয়ারুল শেখের (৩৫)। তাঁর বাড়ি বেলডাঙার সুজাপুরের রাধাবল্লভপুরে। তাঁর জ্বর হয়েছিল। সেই সঙ্গে মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। বুকে ব্যথা হয়েছিল। পরিবারের দাবি, ভর্তি করাতে এসে চার ঘণ্টা ধরে সেখানে কার্যত বিনা চিকিৎসায় পড়ে ছিলেন। যদিও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের এমএসভিপি অনাদি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। তবে মৃতের পরিবারের লোকজন আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি। খুব খারাপ অবস্থায় এসেছিলেন।প্রাথমিক চিকিৎসাও পেয়েছেন। তার পরে মৃত্যু হয়েছে।’’

মৃতের কাকা মহম্মদ বরুহানউদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা জরুরি বিভাগেই ওকে প্রথম নিয়ে এসেছিলাম। সেখানে পিয়ারুলকে একটি ইঞ্জেকশন ও স্যালাইন দেওয়ার পরে বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে বলা হয়। ডাক্তার দেখার পরে ভর্তি করতে হবে কি না, ঠিক করবেন বলেছিলেন। কিন্তু বহির্বিভাগে কোনও ডাক্তার ছিল না।’’

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও এ দিন কর্মবিরতিতে যাওয়া ডাক্তারদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের আবেগ নিশ্চিত ভাবে যুক্তিগ্রাহ্য। প্রতিবাদও ন্যায্য। মুখ্যমন্ত্রী সিবিআইয়ের কথা বলেছেন, অধ্যক্ষ বদলি হয়েছেন। তার পরেও যদি আপনারা কর্মবিরতি চালান, তা হলে জেলায় জেলায় রোগীর পরিবারেরা অসহায় হয়ে পড়ছেন। বিনা চিকতিৎসায় চার ঘণ্টা পড়ে থেকে মৃত্যুও হয়েছে।’’

সোমবার অবশ্য কর্মবিরতিরফলে রাজ্য জুড়ে রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

R G Kar Medical College and Hospital Kolkata Police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy