Advertisement
১০ মে ২০২৪

বিডিও অফিসে ফরমান, সিগারেট খেলেই ফাইন

দীর্ঘ ক্ষণ ধরে অফিসে কাজ করতে করতে একটু ক্লান্তি এসেছিল। একটা সিগারেট ফুঁকে ফের কাজে মন দেবেন, এমটাই ভেবেছিলেন তিনি। সেই মতো অফিসের ঘরে বসেই পকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে দিয়ে তাতে সবে আগুন ধরিয়েছেন। ঠিকমতো একটা সুখটানও দেওয়া হয়নি। তক্ষুণি হাজির নজরদারি কমিটির সদস্যেরা। ওই কর্মীকে পাকড়াও করলেন তাঁরা। জ্বলন্ত সিগারেট ফেলে তো দিতেই হল, উল্টে জরিমানা গুণতে হল নগদ ১০০ টাকা।

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৭
Share: Save:

দীর্ঘ ক্ষণ ধরে অফিসে কাজ করতে করতে একটু ক্লান্তি এসেছিল। একটা সিগারেট ফুঁকে ফের কাজে মন দেবেন, এমটাই ভেবেছিলেন তিনি। সেই মতো অফিসের ঘরে বসেই পকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে দিয়ে তাতে সবে আগুন ধরিয়েছেন। ঠিকমতো একটা সুখটানও দেওয়া হয়নি। তক্ষুণি হাজির নজরদারি কমিটির সদস্যেরা। ওই কর্মীকে পাকড়াও করলেন তাঁরা। জ্বলন্ত সিগারেট ফেলে তো দিতেই হল, উল্টে জরিমানা গুণতে হল নগদ ১০০ টাকা।

আইন-কানুন এমনই কড়া বাগদা বিডিও অফিসে। সম্প্রতি বিডিও মালবিকা খাটুয়া বৈঠক করে নির্দেশ জারি করেছেন, অফিস ঘরে তো বটেই অফিস চত্বরেও কেউ সিগারেট-বিড়ি ফুঁকতে পারবেন না। ধরা পড়লে দিতে হবে ১০০ টাকা জরিমানা। শুধু সরকারি কর্মচারীরাই নন, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, কর্মাধক্ষ্য সকলেই ওই নিয়মের আওতায় পড়েছেন।

বিডিওর সিদ্ধান্তে অনেকেই খুশি নন। বিশেষ করে যাঁদের সিগারেটে আসক্তি রয়েছে, তাঁরা তো ননই। আড়ালে তাঁদের কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেল, “ম্যাডামের এ সব বাড়াবাড়ি। নিজে ধূমপান না করলে ধূমপায়ীদের সমস্যা বুঝবেন কী করে? এ ভাবে কি আমরা ধূমপায়ীরা সারাটা দিন কাটাতে পারি?” প্রকাশ্য অবশ্য কেউ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না। কিন্তু হঠাত্‌ কেন এমন সিদ্ধান্ত? বিডিও বলেন, “কয়েক দিন আগে স্বচ্ছ ভারত অভিযান কর্মসূচি পালনের জন্যে জেলাশাসকের অফিস থেকে চিঠি আসে। প্রায়ই দেখা যায়, অফিস ঘরে বা চত্বরে পোড়া সিগারেট-বিড়ি বা প্যাকেট পড়ে আছে। ওই কর্মসূচি পালনের জন্য বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অফিস ঘরে বা চত্বরে কেউ সিগারেট-বিড়ি খেতে পারবেন না। ওই মর্মে নির্দেশের কথা সকলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোটা অফিস চত্বরই নন-স্মোকিং জোন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।”

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু নির্দেশ দেওয়াই নয়, নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে কিনা তা দেখতে ছয় সদস্যের একটি নজরদারি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ওই কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি, ক্যাশিয়ারের পদও আছে। তাঁরা গোটা অফিসে ঘুরে ঘুরে নজর রাখছেন। নির্দেশের প্রতিলিপি এখনও দেওয়ালে সাঁটা হয়নি। তবে প্রিন্ট আউট বের করে রাখা হয়েছে। শীঘ্রই তা সেঁটে দেওয়া হবে বলে প্রশাসনের কর্তারা জানালেন। কিন্তু তার আগেই অবশ্য মুখে মুখে ওই নির্দেশের কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। পঞ্চায়েত সমিতিও এ বিষয়ে বিডিওকে সহযোগিতা করছে।

রোজ নানা কাজে ব্লক থেকে বহু সাধারণ মানুষ বিডিও অফিসে আসেন। তাঁরা সিগারেট-বিড়ি খান। তাদের ক্ষেত্রে কি এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে? বিডিও বলেন, “সাধারণ মানুষকে সিগারেট-বিড়ি খেতে দেখলেই তাঁদের গিয়ে নিষেধ করা হচ্ছে।” তবে তাঁদের এখনই জরিমানা করা হচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন মালবিকাদেবী। কিন্তু তা হলে এখন কী করবেন দফতরের ধূমপায়ীরা? নির্দেশ মেনে চলতে গেলে, নেশা চাগাড় দিলে অফিসের বাইরে যেতে হচ্ছে। না হলেই জরিমানা। নির্দেশে কাজ দিচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন কর্তাব্যক্তিরা। মালবিকাদেবী বলেন, “অল্প দিনেই ব্যাপক সাড়া মিলেছে। কেউ আর সিগারেট-বিড়ি এখানে খাচ্ছেন না।” জরিমানার টাকা সমাজসেবামূলক কোনও কাজে ব্যয় করা হবে বলে জানান বিডিও।

যাঁরা সিগারেট-বিড়ি খান না, তাঁরা ওই সিদ্ধান্তে খুবই মজা পাচ্ছেন। এক কর্মীর কথায়, “পাশে বসে একটার পর একটা সিগারেট উড়িয়ে দেন কেউ কেউ। নিষেধ করলেও পাত্তাই দিতেন না। অনেক সময়ে প্লিজ বলে দায় সারতেন। সহকর্মীদের খুব কড়া ভাষা বলাও তো যেত না। কিন্তু আমাদের অনেকের তো অস্বস্তিই হত। এ বার সে সব বন্ধ।”

কিন্তু নিয়মের গুঁতোয় অফিসের পাশের রাস্তায় সিগারেট খেতে খেতে অনেকেই গজ গজ করছেন। আবার অন্য প্রতিক্রিয়াও আছে। একজনকে বলতে শোনা গেল, “ভালই তো। সিগারেট খাওয়া খুবই বেড়ে গিয়েছিল। কিছুতেই কমাতে পারছিলাম না। এখন নিয়ম মানতে গিয়ে বদভ্যেস একটু কমেছে। সিগারেট খেতে ঘন ঘন বাইরে যেতে আর কার ভাল লাগে।” সরকারি কর্মীদের অনেকে জানালেন, বাড়ির মেয়ে-বউরা অনেকে বিডিওর সিদ্ধান্তে বেশ খুশি। এক জনের ঘরণী নাকি আবার বলেছেন, “নাও, এ বার ঠ্যালা সামলাও। ঘরের লোকের কথা তো কোনও দিন শুনলে না, এ বার বসের ঝাড় খাও।”

তবে অন্য মতও রয়েছে। বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তরুণ ঘোষ বলেন, “দিন কয়েক আগে অফিসের বাইরে গিয়ে সিগারেট খেতে গিয়েই তো দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়েছিলাম। অফিস চত্বরের মধ্যে একটি স্মোকিং জোন তৈরি করে দেওয়া উচিত।” বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কমাধক্ষ্য কার্তিক বাইন বলেন, “বাথরুমে বা ছাদে গিয়ে গোপনে অনেকে সিগারেট খাচ্ছেন। তবে ওই সিদ্ধান্ত সকলে মেনে নিয়েছেন।”

তাতেও কী আর ধূমপায়ীদের ক্ষোভ সামাল দেওয়া যায়! একজনকে বলতে শোনা গেল, “বিডিও কি সর্বত্র সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে পারবেন? না পারলে খামোখা শুধু এখানে ওই নিয়ম চালু করে কী লাভ?” মন্তব্য শুনে তাঁরই এক অ-ধূমপায়ী সহকর্মী হাসি হাসি মুখে বললেন, “চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম ভায়া, শুরুটা না হয় এখান থেকেই হোক!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE