Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

Coronavirus in West Bengal: উত্তরে একদিনেই করোনায় মৃত্যু ১৪ জনের, উদ্বেগ

স্বাস্থ্য দফতর কর্তারা ও চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন,  হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন, বেশিরভাগই বয়স্ক ও অন্য রোগে ভোগা মানুষ।

বেপরোয়া: এখনও মাস্ক ছাড়া বেরোচ্ছেন অনেকেই।

বেপরোয়া: এখনও মাস্ক ছাড়া বেরোচ্ছেন অনেকেই। নিজস্ব চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:২১
Share: Save:

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ কমলেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দৈনিক মৃত্যু।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ১৪ জন। এ বছর একদিনে এই নিয়ে তৃতীয়বার ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল এই জেলায়। এর আগে ২০ এবং ২৪ জানুয়ারি ১৪ জন করে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। দৈনিক সংক্রমণ কমলেও মৃত্যুর হার কমছে না বলেই চিকিৎসকদের মত। শুক্রবার অবশ্য মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমে হয়েছে ৯। যদিও সংখ্যাটা কখন আবার লাফিয়ে বাড়বে, তা নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসকেরা।

৯ ডিসেম্বর জেলায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৫৩ জন। ওই দিন জেলায় করোনায় মারা গিয়েছিলেন ৬ জন। বৃহস্পতিবার জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫২৪ জন। অথচ, মারা গিয়েছেন ১৪ জন!

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে ১-২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় করোনায় মারা গিয়েছেন ১৭৫ জন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে (১-৩১ ডিসেম্বর) করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮৪ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যের জেলাগুলির মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম স্থানে আছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যে মারা গিয়েছেন ৩৬ জন। তার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনারই ১৪ জন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, ওমিক্রনের থাবায় এ বার সব থেকে বেশি ঝুঁকি বয়স্ক ও কোমর্বিডিটি থাকা রোগীদের। এ বার এঁদেরই মৃত্যু বেশি হচ্ছে। বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বছর করোনায় যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের প্রায় সকলেরই বয়স ষাটের উপরে। তাঁরা কেউ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন।’’

স্বাস্থ্য দফতর কর্তারা ও চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন, বেশিরভাগই বয়স্ক ও অন্য রোগে ভোগা মানুষ। বয়স্ক ও কোমর্বিডিটি থাকা মানুষদের উপরে পরিবারের সদস্যদের বিশেষ নজর রাখতে হবে। বয়স্ক মানুষদের হালকা জ্বর, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, শরীর দুর্বল হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়া চলবে না। খুব প্রয়োজন ছাড়া বয়স্কদের বাড়ির বাইরে বের না হওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। মাস্ক পরে বাড়িতে বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষের কাছে যেতে হবে পরিবারের অন্যদের।

চিকিৎসকের কাছে গেলে অন্য রোগ থাকলে তার প্রেসক্রিপশন দেখাতে হবে। বাড়িতে বাইরের লোকজন এলে বয়স্কদের দূরে রাখতে হবে। কোমর্বিডিটি থাকা মানুষদের নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা খুবই কম। বারাসত জেলা হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ১০০টি শয্যা আছে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বারাসত হাসপাতালে একজনও করোনা রোগী ভর্তি নেই।

রাজ্যে অধিকাংশ সংক্রমণের প্রধান প্রজাতি হিসেবে ওমিক্রনকে চিহ্নিত করা হলেও এ রাজ্যে এখনও ডেল্টা প্রজাতি সক্রিয় রয়েছে বলে সর্তক করে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ফলে মানুষকে আরও কিছুদিন সতর্ক থাকতেই হবে। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে চলতে হবে।

এ দিকে, করোনা সংক্রমণ কমতে থাকায় কিছু মানুষের মধ্যে গা-ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। এখন বিয়ের মরসুম। দেখা যাচ্ছে, বিয়ে বাড়িগুলিতে শারীরিক দূরত্ববিধি উড়িয়ে ভিড় হচ্ছে। নাচগান হচ্ছে। অনেকেরই মাস্ক থাকছে না। বাজার-হাটে, যানবাহনে শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় থাকছে না। লোকাল ট্রেনে ৫০ শতাংশ যাত্রী যাতায়াত করার কথা থাকলেও বনগাঁ- শিয়ালদহ লোকালের কামরায় ভিড়ের কারণে দাঁড়িয়ে থাকারই জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যেও কিছুটা শিথিলতা দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন সচেতন নাগরিকেরা।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপসকুমার রায় বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ কমলেও মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। মাস্ক পরতে হবে। স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে। মানুষ বেপরোয়া মনোভাব দেখালে পরিস্থিতি আবারও খারাপ হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE