একই পরিবারে আক্রান্ত ৫, একশো ছুঁল বনগাঁ ব্লক

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা একশো ছুঁল বনগাঁ ব্লকে। বনগাঁ মহকুমার তিনটি ব্লক এবং একটি পুরসভার মধ্যে বনগাঁ ব্লকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি।

প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ মহকুমায় বুধবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৫৮ জন। বুধবার বনগাঁ ব্লকে নতুন করে ১০ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, ‘‘বুধবার ১০ জনের লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। সকলে করোনা পজ়িটিভ। গাঁড়াপোতা গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকায় একই পরিবারের ৫ জন সদস্য-সহ ৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি আক্রান্তদের বাড়ি গঙ্গানন্দপুর এবং ছয়ঘরিয়া এলাকায়। বনগাঁ ব্লকে বুধবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০০। এর মধ্যে ৪১ জন অ্যাক্টিভ রোগী। বাকিরা সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনে বনগাঁ ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা এলাকায় ফিরে আসার পর থেকেই এখানে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছিল। এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবুও আক্রান্তের সংখ্যায় রাশ টানা যাচ্ছে না। এখন মূলত কলকাতা যোগাযোগ, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা মানুষ থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমা জুড়েই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বুধবার পর্যন্ত গাইঘাটা ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪ জন। বাগদা ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬। বাগদার বিএমওএইচ প্রণব মল্লিক বলেন, ‘‘বুধবার পুলিশের এক গাড়ির চালক-সহ দু’জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’’

বনগাঁ পুরসভা এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ জন। পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘মঙ্গল এবং বুধবার দু’দিনে শহরে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ জন। সকলের বাড়ি জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।’’ করোনার প্রকোপ কমাতে বনগাঁ পুরসভা এলাকায় রবিবার থেকে পূর্ণ লকডাউন শুরু হয়েছে। চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। শঙ্কর বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে কী ভাবে করোনা মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

মহকুমা জুড়ে করোনা বাড়লেও কিছু মানুষ এখনও সচেতন হচ্ছেন না। মাস্ক ছাড়াই তাঁরা ঘোরাঘুরি করছেন। শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। এরই মধ্যে অভিযোগ উঠছে, করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা মানুষজনও বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়ছেন। এমনকী, লালারস পরীক্ষা করতে দিয়ে রিপোর্ট আসার আগেও কেউ কেউ বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া মানুষের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই মৃতদেহ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। মৃতদেহের সংস্পর্শে আসছেন অনেকেই। পরে জানা যাচ্ছে, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘সচেতনতার অভাবের জন্যই মানুষ বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। প্রশাসনের উচিত আরও বেশি মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচি গ্রহণ করা। সমাজিক বা ক্লাব সংগঠনগুলিকে ওই কাজে যুক্ত করা প্রয়োজন।’’

মৃগাঙ্ক বলেন, ‘‘যত দিন না মানুষ সচেতন হবেন, তত দিন সংক্রমণ কমানো যাবে না। বাজারে, রাস্তায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাড়ি ফিরে হাত-পা ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।’’

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড় পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)