Advertisement
১১ মে ২০২৪
Hingalganj

Hingalganj: ‘পড়া চালিয়ে যেতে হলে কাজও করতে হবে’

এ বছরই মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেছে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের স্যান্ডেলবিল পঞ্চায়েত এলাকার ১৩ নম্বর গ্রামের বাসিন্দা পল্লবী।

লড়াকু: পল্লবী সরকার। নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: পল্লবী সরকার। নিজস্ব চিত্র

নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ০৬:৩৫
Share: Save:

টেবিলে ছড়ানো নানা মাপের ছিটের কাপড়, রঙিন সুতো। পাশে রাখা রয়েছে সদ্য তৈরি করা বেশ কিছু মাস্ক, কাপড়ের ব্যাগ। চাকা ঘুরিয়ে ছোট ছোট দু’হাতে এক মনে সেলাইয়ের কাজ করছে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পল্লবী সরকার। পরিবারে আর্থিক অনটন নিত্যসঙ্গী। তাই নিজের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাড় করতে এই কাজ বেছে নিয়েছে সে। তার কথায়, ‘‘গরমের ছুটিতে স্কুল বন্ধ। সেলাইয়ের কাজ শিখে রোজগারের চেষ্টা করছি যাতে নিজেই পড়াশোনার খরচ চালাতে পারি।’’

এ বছরই মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেছে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের স্যান্ডেলবিল পঞ্চায়েত এলাকার ১৩ নম্বর গ্রামের বাসিন্দা পল্লবী। হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউটশন স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিও হয়েছে সে। পড়াশোনায় আগ্রহী হলেও পরিবারে উপার্জন তেমন নেই। তার বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি জানান, তাঁর একার আয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কষ্ট করে পড়াশোনা করেই মাধ্যমিক পাশ করেছে পল্লবী। সে জানায়, সব বই কিনে দিতে পারেননি বাবা। গৃহশিক্ষকও রাখা সম্ভব হয়নি। তবে এবার আর পড়াশোনার সঙ্গে আপোস করতে রাজি নয় পল্লবী। নিজের পড়ার খরচ নিজেই চালানোর জন্য গরমের ছুটিতে সেলাই শিখেছে সে। পল্লবী জানায়, বাড়ির পাশেই একজন প্রশিক্ষক তাকে বিনামূল্যে সেলাইয়ের কাজ শিখিয়েছেন। ইতিমধ্যে মাস্ক, কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করা শিখে গিয়েছে সে। এখন সায়া তৈরির কাজ শিখছে।

পল্লবীর কথায়, ‘‘বাবার তেমন রোজগার নেই। এদিকে সামনের বছর আমি দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠব। ভাল রেজাল্টের জন্য বইপত্র কেনা ও গৃহশিক্ষক রাখার প্রয়োজন হবে। তাই নিজেই রোজগারে উদ্যোগী হয়েছি।’’ যদিও কাজের ফাঁকে পড়াশোনার জন্য সময় বের করা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে সে। তার কথায়, ‘‘স্কুল খুললেও সেলাইয়ের কাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। পড়া চালিয়ে যেতে হলে কাজও করতে হবে। আশা করি, দু’দিকই সামাল দিতে পারব।’’

পল্লবীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী জানান, লকডাউনে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক পড়ুয়া কাজে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। গরমের লম্বা ছুটি পেয়েও অনেকেই ফের কাজ খুঁজে নিচ্ছে। এরা বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে। তবে এর ফলে স্কুলছুটের প্রবণতাও বাড়তে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল খুললে সব পড়ুয়া ক্লাসে আসুক সেটাই চাই।’’ পল্লবীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে খুব ভাল লাগছে। স্কুল খুললে ওর পড়াশোনা চালাতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Hingalganj madhyamik exam madhyamik candidate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE