E-Paper

স্টেশনের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষায় হাতেখড়ি পথশিশুদের

যাঁদের উদ্যোগে এই পাঠশালা শুরু, তাঁদের অন্যতম স্বর্ণদীপ দাস। রাজপুরের বাসিন্দা, সমাজতত্ত্বে স্নাতক ওই যুবক সংসার চালাতে একটি খাবারের দোকান চালান। পাশাপাশি, নিয়ম করে চালান এই পাঠশালা।

সমীরণ দাস 

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৩৮
মনোযোগী: সোনারপুর স্টেশনের বাইরে চলছে পাঠশালা।

মনোযোগী: সোনারপুর স্টেশনের বাইরে চলছে পাঠশালা। —নিজস্ব চিত্র।

কারও বয়স চার-পাঁচ বছর, কারও একটু বেশি। কেউ থাকে রেললাইনের ধারের বস্তিতে। কারও ঠিকানা প্ল্যাটফর্ম। সারা দিন কাজ বলতে ট্রেনে, প্ল্যাটফর্মে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করা। ছোটখাটো চুরি, ছিনতাইয়েও হাতেখড়ি হয়েছিল কারও কারও। কেউ আবার নেশার জগতে চলে যাচ্ছিল। ২০১৯ সালে এমনই জনা ২০ ছেলেমেয়েকে জড়ো করে বিনামূল্যে পড়ানো শুরু করেন এলাকার কয়েক জন যুবক-যুবতী। পাঁচ বছর পেরিয়েও সোনারপুর স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে, এক চিলতে খোলা জায়গায় নিয়ম করে বসছে সেই পাঠশালা।

যাঁদের উদ্যোগে এই পাঠশালা শুরু, তাঁদের অন্যতম স্বর্ণদীপ দাস। রাজপুরের বাসিন্দা, সমাজতত্ত্বে স্নাতক ওই যুবক সংসার চালাতে একটি খাবারের দোকান চালান। পাশাপাশি, নিয়ম করে চালান এই পাঠশালা। স্বর্ণদীপ জানাচ্ছেন, সোনারপুর প্ল্যাটফর্মে ভিক্ষা করে বেড়ানো ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুরু হয়েছিল পড়ানো। ধীরে ধীরে আশপাশের বিভিন্ন স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম বা রেল বস্তির ছেলেমেয়েরা এসে জোটে। তাদের পড়তে দেখে পথচলতি অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়ান। তা দিয়েই খাতা-পেনসিল, বইপত্র কেনা হয়। খাবারের ব্যবস্থাও হয়ে যায় মাঝেমধ্যে। করোনা কালে কিছুটা অনিয়মিত হলেও বন্ধ হয়নি পড়াশোনা। সেই সময়ে কমিউনিটি কিচেনের মাধ্যমে পরিবার-সহ এই সব ছেলেমেয়েদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল।

২০ জন থেকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন ৪০ ছাড়িয়েছে। বিকেল হলেই তারা চলে আসে। সোম থেকে শুক্র পড়ানো হয়। শনি-রবি তাদের নানা কর্মসূচিতে শামিল করার চেষ্টা হয়। বৃষ্টি হলে খোলা জায়গায় পড়ানো যায় না। তখন ক্লাস বসে প্ল্যাটফর্মের ছাউনি বা ওভারব্রিজের উপরে। অভিযোগ, তাতে মাঝেমধ্যেই বাধা দেয় রেল পুলিশ। তখন বন্ধ রাখতে হয় পাঠশালা।

স্বর্ণদীপ বলেন, “এদের বেশির ভাগেরই পরিবারে আগে কেউ কখনও স্কুলে যায়নি। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পরিবারের অনেকের অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। এরাও হয়তো সেই দিকেই চলে যেত। সেই জায়গাতেই আমরা কয়েক জন লড়াইটা চালাচ্ছি। শিক্ষা তো মানুষের অধিকার। আমাদের লক্ষ্য, এই ছেলেমেয়েগুলোকে সেই শিক্ষাটা দেওয়া।” পাঠশালায় পড়তে আসা অনেককেই স্বর্ণদীপরা স্কুলে ভর্তি করেছেন। গত বছর একটি মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। স্বর্ণদীপরা চান, আরও বেশি পথশিশুকে পাঠশালায় শামিল করে শিক্ষার আলো দেখাতে। তাঁর কথায়, “বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা পাঠশালাটা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই, আগামী দিনে বিভিন্ন এলাকায় পথশিশুদের এমন পাঠশালা গড়ে উঠুক। শিক্ষাই পারবে এদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sonarpur Tuition

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy