E-Paper

বহির্বিভাগে রোগী দেখেন স্বাস্থ্যকর্মী, অভিযোগ

মিতপুকুরিয়া সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বারাসত ২ ব্লক, দেগঙ্গা ব্লকের ফলতি বেলিয়াঘাটা ও বকজুড়ি পঞ্চায়েতের গ্রামগুলির নানা বয়সের বাসিন্দারা রোগের চিকিৎসা করাতে আসেন।

ঋষি চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৬
মিতপুকুরিয়া সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী দেখা চলছে।

মিতপুকুরিয়া সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী দেখা চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

খাতায়-কলমে এক জন চিকিৎসক, মেডিক্যাল অফিসার ও ফার্মাসিস্ট আছেন। কিন্তু সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন বহির্বিভাগে বসে রোগী সামলান স্বাস্থ্যকর্মী!

বারাসত ২ ব্লকের শাসন থানা এলাকার মিতপুকুর সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র এ ভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে। কেন্দ্রটি শাসন থানার মিতপুকুরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত হলেও পাশের দেগঙ্গা ব্লকের কয়েক হাজার রোগী এখানে আসেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাঁরা কখনওই চিকিৎসকের দেখা পান না। ফার্মাসিস্ট ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পরীক্ষা করে ওষুধ দেন। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের দাবি, কয়েক মাস আগে এক জন চিকিৎসক ও মেডিক্যাল অফিসার যোগ দিয়েছেন। তাঁদের আশপাশের হাসপাতাল সামলাতে হয়। তাঁরা অনুপস্থিত থাকলে ফার্মাসিস্ট রোগী দেখেন। ওষুধ সাজিয়ে রাখা ও নথিপত্রের কাজ করতে হয় তাঁকেই। ওই সময়ে রোগী এলে ওষুধ দেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী।

তবে বাস্তব ছবিটা আলাদা বলেই দাবি গ্রামের মানুষের।

দিন কয়েক আগে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, বহির্বিভাগে কয়েক জন রোগী দাঁড়িয়ে আছেন। ভিতরে বসে রোগীকে পরীক্ষা করে ওষুধ দিচ্ছেন এক কর্মী। এক বৃদ্ধার কাছে শুনলেন, শরীরের কোথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। সব শুনে তাঁকেও ওষুধ দিলেন।

মিতপুকুরিয়া সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বারাসত ২ ব্লক, দেগঙ্গা ব্লকের ফলতি বেলিয়াঘাটা ও বকজুড়ি পঞ্চায়েতের গ্রামগুলির নানা বয়সের বাসিন্দারা রোগের চিকিৎসা করাতে আসেন। খাতায়-কলমে দেখানো আছে, ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয় এখানে। দশটি শয্যা দিয়ে পরিষেবা ব্যবস্থা দেওয়ার কথাও আছে। বাস্তবে আজও তা চালু হয়নি। ভবনের মধ্যে পড়ে আছে শয্যাগুলি। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। বার বার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এ দিকে, সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর চলছে। ফলে এখানকার হাল কবে ফিরবে, তা নিয়ে সন্দেহ বেড়েছে।

দেগঙ্গার বাসিন্দা গোলাম আইয়া বলেন, “যত বার এসেছি, সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক জন আমাকে দেখে ওষুধ দিয়েছেন। ছ’মাস ধরে ওষুধ খাচ্ছি। উপশম হচ্ছে না।” শাসনের বাসিন্দা মহম্মদ আকবর আলি, সাজেদা বিবি, তামিনা খাতুন জানান, চিকিৎসকের কথা জানতে চাইলে রেগে গিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মী। ওঁরাই রোগের কথা শুনে ওষুধ দেন।

সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, “আমি আমার কাজ সম্পর্কে কোনও কথা বলব না।” ফার্মাসিস্ট সুমন দাসের কথায়, “স্বাস্থ্যকর্মী রোগী দেখে ওষুধ দিচ্ছেন, এই অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের উপস্থিতিতেই তিনি রোগীদের ওষুধ দেন। এখানে আমরা চার জন খাতায়-কলমে রয়েছি। দু’জনকে অন্য হাসপাতাল সামলাতে হয়। আমি ও ওই স্বাস্থ্যকর্মী এ দিকের দায়িত্ব সামলাই। যখন আমি নথিপত্রের কাজ করি, ওষুধ সাজাই, তখন উনি ওষুধ দেন। চিকিৎসা উনি করেন না।”

বারাসত ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরিত মল্লিক বলেন, “সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সদস্য সংখ্যা কম আছে বলে জানি না। তবে স্বাস্থ্যকর্মী রোগী দেখে ওষুধ দিচ্ছেন, এটা জানা ছিল না। ঘটনা সত্যি হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। স্বাস্থ্য দফতরেও বিষয়টি জানাব।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Barasat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy