আয়লার জলোচ্ছ্বাস কেড়ে নিয়েছিল পাথরপ্রতিমার প্রত্যন্ত দ্বীপভূমির আশা, ভরসা সব কিছু। ২০১১ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে যে নতুন স্বপ্ন সেই সব মানুষ দেখেছিলেন, তা আবার ভেঙে গিয়েছে ভঙ্গুর রিংবাঁধের মতোই। গত পাঁচ বছরে বাঁধের কাজ পাথরপ্রতিমায় শেষ করতে পারেনি নতুন সরকার। প্রত্যন্ত দ্বীপগুলিতে পর্যাপ্ত আলোও পৌঁছয়নি। নিচু তলার তৃণমূল নেতাদের গোষ্ঠীকোন্দলে বার বার কাজ আটকে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
আর এই প্রেক্ষিতেই ভোটের ময়দানে আত্মবিশ্বাসী কংগ্রেসের ফণিভূষণ গিরি। অন্য দিকে, তৃণমূলের প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক সমীর জানার ব্যক্তিত্ব আর উন্নয়নের স্লোগানকেই সামনে রাখছে ঘাসফুল শিবির। ফণিভূষণবাবুর বিরুদ্ধে তাঁরই দলের কিছু নেতা চিটফান্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টিকে অস্ত্র করে মিছিল থেকে পদযাত্রা সব জায়গায় ওই প্রাক্তন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন সমীরবাবুরা। বলছেন, ‘‘আমরা তো বলিনি এমন কথা, ওঁর দলের লোকই বলছেন।’’ সমীরবাবুর দাবি, পাথরপ্রতিমার মূল ভূখণ্ডে বিদ্যুৎ এসেছে। বিভিন্ন জায়গায় ফ্লাড সেন্টারের কাজ চলছে। বাঁধের কাজ হয়েছে ২০ কিলোমিটার। এত কাজ আমরা করেছি, তাই ভয়টা কী?’’
ভয় অবশ্য অন্য জায়গায়। ফণিভূষণবাবুরা দাবি করছেন, আয়লার কাজ হওয়ার কথা ছিল মোট ৪২টি পয়েন্টে। কিন্তু কাজ হয়েছে মাত্র ২০ কিলোমিটার। ভোটের আগে সবে কাজ শুরু হয়েছে রামগঙ্গা, ব্রজবল্লভপুর শ্রীধরনগর, দুর্বাচটি, কে-প্লট, লক্ষ্মীজনার্দনপুরের মতো কিছু এলাকায়।
বিরোধী শিবির আরও বলছে, একটা ভাল স্টেডিয়াম নেই পাথরপ্রতিমায়। ১০০ দিনের কাজে ৬০ হাজার জবকার্ড রয়েছে। কিন্তু গড়ে ২১ দিন মতো কাজ পেয়েছেন মানুষ।
ফণিবাবুর দাবি, ‘‘বামেদের আমলে বিদ্যুতের কাজ অনেকটা হয়ে গিয়েছিল। তারপরে এখনও জি-প্লট, শ্রীধরনগর, অচিন্তনগরের মতো এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি।’’ চিটফান্ডের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নিয়ে আসলে ব্যক্তিগত কুৎসা রটানো হচ্ছে, অভিযোগ ফণিবাবুর। শাসক বিরুদ্ধে দলের সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছেন দিগম্বরপুর, হেরম্বগোপালপুর, জি-প্লটের মতো কয়েকটি জায়গায়।
তবে সমীরবাবু এ সব অভিযোগ খারিজ করে দাবি করছেন, বামেদের আমলে যা সন্ত্রাস হয়েছে, তৃণমূলের জমানায় তার প্রায় কিছুই হয়নি।
বিজেপি প্রার্থী শ্রীধরচন্দ্র বগরী আবার দাবি করছেন, তাঁর ভোট বাড়বে। তৃণমূলের একাংশের তরফে চাপা কানাঘুষো চলছিল, এসইউসির ভোট তলে তলে নাকি তাদের দিকেই আসবে। তবে তা স্পষ্ট ভাবে খারিজ করে দিয়েছেন এসইউসির জেলা নেতারা। তাঁদের দাবি, আলাদা ভাবে দাঁড়ানোর জন্য দলের একনিষ্ঠ ভোটগুলি তাঁদের ঝুলিতেই যাবে।
তবে সাধারণ ভোটারদের অনেকেরই বক্তব্য, বাঁধ ভাঙা জলোচ্ছ্বাস দেখা পাথরপ্রতিমার মানুষ ভোটের আগে আয়লার দিনগুলোর কথা একবার নিশ্চয়ই ভাববেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy