অতিরিক্ত একটি ভবন নির্মাণের কথা জানিয়ে লোকমান আবারও উচ্চশিক্ষা দফতরে আবেদন করেন। সেই মতো উচ্চশিক্ষা দফতর ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা অনুমোদন করে। ২০১১ সালে সরকারের পালাবদল হয়। অভিযোগ, তারপর থেকেই কলেজের রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে শাসকদলের মধ্যে চাপানউতোর তৈরি হয়। এর মধ্যে কলেজের ‘অর্গানাইজিং কমিটি’ মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়ে তাঁকে অনুরোধ জানায়, পূর্ত দফতর বা জেলা পরিষদ বা এই জাতীয় সরকারি কোনও দফতরকে দিয়ে নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হোক। এ দিকে, শাসকদলের চাপে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম পদত্যাগ করেন বলে অভিযোগ। পরবর্তী সময়ে প্রদীপকুমার দে কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এ দিকে, কলেজে ছাত্র সংসদ না থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত শাসকদলের ছাত্র সংগঠন লোকমান মোল্লার পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে লোকমান কলেজের সভাপতি পদ ছেড়ে দেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পরিচালন সমিতি গঠন করে দেয়। সভাপতি হন যদুপতি দাস। তিনিও তিন মাসের মধ্যে পদত্যাগ করেন। এর পরে গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের অনুগামী ভোলানাথ পান্ডে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি হন। কিন্তু তিনিও কয়েক মাস পরে পদত্যাগ করেন। এর মধ্যে আবার কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপকুমার পদত্যাগ করে কলেজ ছেড়ে চলে যান। তাঁর জায়গায় অমিত বসাক অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। তিনিও নানা কারণে পদত্যাগ করেন। এর পরে রাজ্য সরকার ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসককে কলেজের প্রশাসক নিয়োগ করে। কলেজের বর্ষীয়ান শিক্ষক অরুণাভ রায় টিচার-ইন-চার্জ (টিআইসি) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
অভিযোগ, প্রতিনিয়ত বিক্ষোভের কারণে বহু ছাত্রছাত্রী সুকান্ত কলেজ ছেড়ে ক্যানিংয়ের বঙ্কিম সর্দার এবং গোসাবার পাঠানখালি হাজি দেশারত কলেজে ভর্তি হতে চলে যান। স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের অভিযোগ, কলেজের অতিরিক্ত ভবন নির্মাণের ওই টাকাটাই হল গোলযোগের মূল কারণ। সেই টাকা দীর্ঘ দিন ব্যাঙ্কে পড়ে থাকায় সুদ-সহ বেড়ে তা হয় ৩ কোটি ৫৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫১১ টাকা। ভবন তৈরি না হওয়ায় এই পুরো টাকাটাই ফেরত যায় বলে কলেজ সূত্রের খবর।
এ বিষয়ে কলেজের টিআইসি অরুণাভ রায় বলেন, ‘‘কলেজের অতিরিক্ত ভবন নির্মাণের টাকাটা বহু দিন ধরে পড়েছিল। আমার পূর্বতন কর্তৃপক্ষ নানা কারণে টাকাটা খরচ করতে পারেননি। আমরা টাকাটা খরচ করার চেষ্টা করেছিলাম। জেলা পরিষদকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম।’’ তিনি আরও জানান, জেলা পরিষদ থেকে কলেজের পাঁচিল তৈরির জন্য তাঁদের ‘এস্টিমেট’ দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়। তাঁরা আবারও তাদের চিঠি দেন। এর পরে টাকাটা ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি আসে।’’
ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক বন্দনা পোখরিয়াল বলেন, ‘‘আমি নতুন এসেছি। আমার আসার আগে কোনও একটা সমস্যায় কলেজে নতুন ভবন তৈরি করা যায়নি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টাকাটা ফেরতও গিয়েছে।’’
কলেজের প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লোকমান বলেন, ‘‘আমি অনেক চেষ্টা করে কলেজের অতিরিক্ত ভবন নির্মাণের জন্য টাকাটা সরকারের থেকে আদায় করেছিলাম। অথচ সেই টাকায় অতিরিক্ত ভবন তৈরি হল না। টাকাটা ফেরত চলে গেল। এটা আমার কাছে অত্যন্ত কষ্টের। অতিরিক্ত ভবনটি তৈরি না হওয়ার ফলে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা হবে। অনেক ছেলেমেয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।’’
এ বিষয়ে গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বলেন, ‘‘স্থানীয় কিছু দালাল সমস্যা তৈরি করায় কাজটা হল না। কিন্তু টাকাটা ফেরত গিয়েছে কিনা বলতে পারব না। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। টাকা ফেরত গিয়ে থাকলে তা অত্যন্ত দুঃখের।’’