E-Paper

ছ’বছর ধরে রাস্তাতেই অঙ্গনওয়াড়ির ক্লাস 

অঙ্গনওয়াড়ির এক কর্মী জানান, ২০১৩ সালে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি চালু হয়। সে সময়ে প্রতি মাসে তাঁর বেতন থেকে ১০০ টাকা করে ভাড়া বাবদ দিতেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২২
খোলা আকাশের নীচে চলছে ক্লাস।

খোলা আকাশের নীচে চলছে ক্লাস। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।

ঢালাই রাস্তার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে ইটের রাস্তা। সেই রাস্তার একদিকে বসতবাড়ির গাছগাছালির বেড়া, অন্যদিকে নিকাশি নালা। সেই রাস্তাতেই চট-মাদুর পেতে পড়াশোনা করে শিশুরা। পাশেই একটি ত্রিপল খাটিয়ে চলে মিড-ডে মিলের রান্না। গত ছ’বছর ধরে এ ভাবেই চলছে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের পূর্ব মামুদপুরের ৭ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। অভিযোগ, প্রশাসনে বিষয়টি বার বার জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।

হিঙ্গলগঞ্জের শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও) শ্যামল দত্ত সমস্য়ার কথা মানছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে কেউ জমি দান করতে চাইছেন না বলে শুনেছি। আবার সরকারি ভাবে জমি কিনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র করার সুযোগ নেই। তবে একটু ভাল পরিবেশের মধ্যে যাতে কেন্দ্রটি চলে, তা দেখা হচ্ছে।’’

ওই অঙ্গনওয়াড়ির এক কর্মী জানান, ২০১৩ সালে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি চালু হয়। সে সময়ে প্রতি মাসে তাঁর বেতন থেকে ১০০ টাকা করে ভাড়া বাবদ দিতেন তিনি। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি বিনামূল্যে তাঁর বাড়ির বারান্দায় দু’বছর কেন্দ্রটি চালাতে দেন। তারপর থেকে আর কোনও ঘর না মেলায় নারকেলতলা-মামুদপুর খেয়াঘাট রাস্তার পাশেই কেন্দ্র চালানো শুরু হয়। একপাশে ত্রিপল ঝুলিয়ে তার নীচে উনুন তৈরি করে চলে রান্না।

এই কেন্দ্রের উপভোক্তা শিশুর সংখ্যা ৪২। বসার জায়গা না থাকায় বেশিরভাগ অভিভাবকই সন্তানকে কেন্দ্রে পাঠাতে চান না। খুব বেশি হলে ৮-১০ জন শিশু পড়াশোনা করতে আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়েরা এসে খিচুড়ি নিয়ে চলে যান। অভিভাবকদের অভিযোগ, রোদ-বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নীচে বসতে হয় শিশুদের। শুধু তাই নয়, পাশের ঢালাই রাস্তা দিয়ে সবসময় সাইকেল, বাইক, অটো, টোটো, ইঞ্জিন ভ্যান, ছোট গাড়ি চলাচল করে। ফলে, যে কোনও সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে তাঁদের।

অভিভাবক দেবিকা গুড়িয়া, ভারতী মান্নারা বলেন, ‘‘সামান্য পরিকাঠামোটুকুও যদি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে না থাকে তা হলে আমরা কোন ভরসায় বাচ্চাদের এখানে পাঠাব? তা ছাড়া যে ভাবে রাস্তার পাশে ত্রিপল ঝুলিয়ে রান্না হয়, তা অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক। যে কোনও সময় খাবারে কিছু পড়তে পারে।’’

কেন্দ্রের সহায়িকা অপর্ণা প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমাদের কোনও শৌচাগার বা জলের ব্যবস্থাও নেই। প্রয়োজনে স্থানীয় বাসিন্দাদের শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। রান্নার কাজ, বাসন ধোয়া, চাল, ডাল, বাসনপত্র রাখতেও ভরসা পড়শিদের বাড়ি।’’

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মঞ্জুশ্রী ঘোষ বলেন, “রাস্তার পাশে খোলামেলা জায়গায় বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে খুব সাবধানে থাকতে হয়। এমন পরিবেশে রান্নাও করাও বিপজ্জনক।
জোরে হাওয়া বা বৃষ্টিতে খুবই সমস্যা হয়। এ ভাবেই এত বছর ধরে কেন্দ্র চলছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Hingalganj

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy