Advertisement
E-Paper

চেলুয়ার চোরাই বিদ্যুৎ বন্ধ হতেই বৈধ মিটারের আবেদন

সিইএসসি-র লাইন থেকে বিদ্যুৎ চুরি করে তা আগরপাড়ার কুলি বস্তির বিভিন্ন ঘরে বিক্রি করা হত। অভিযোগে মহম্মদ ওসমান ওরফে চেলুয়াকে গত অগস্টে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১১
অবৈধ: আগরপাড়ার কুলি বস্তিতে এ ভাবেই হুকিং করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেন বহু বাসিন্দা। নিজস্ব চিত্র

অবৈধ: আগরপাড়ার কুলি বস্তিতে এ ভাবেই হুকিং করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেন বহু বাসিন্দা। নিজস্ব চিত্র

সূর্য ঢলতেই যেন ফের অন্ধকার নামছে কুলি লাইনে।

সিইএসসি-র লাইন থেকে বিদ্যুৎ চুরি করে তা আগরপাড়ার কুলি বস্তির বিভিন্ন ঘরে বিক্রি করা হত। অভিযোগে মহম্মদ ওসমান ওরফে চেলুয়াকে গত অগস্টে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বছর ৩০ এর যুবক চেলুয়ার ওই ব্যবসা থেকে মাসে তিন লক্ষ টাকা রোজগার ছিল বলেই তদন্তকারীদের দাবি। চোরাই বিদ্যুৎ কিনে ঘুপচি ঘরে আলো-পাখাই শুধু নয়, এসি কিংবা হিটারও জ্বালাতেন কুলি বস্তির বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ। উপভোক্তাদের তার জন্য মাসে মাত্র ৩০০ টাকা করে বিদ্যুৎ ভাড়া দিতে হত।

সিইএসসি-র দাবি, চেলুয়া গ্রেফতার হওয়ার পরে আগরপাড়া জুটমিলের ৮ নম্বর কুলি লাইনের বাসিন্দারা সতর্ক হয়েছেন। বেআইনি ভাবে চেলুয়ার বিদ্যুৎ নেওয়ার অভিযোগে কুলি লাইনের বাসিন্দা নবাব আলিকেও অগস্টেই গ্রেফতার করেছিল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। তার পরেই ধীরে ধীরে কামারহাটির বড় ও ছোট ছাইমাঠের কুলি লাইনের বাসিন্দারা সতর্ক হয়ে বৈধ উপায়ে বিদ্যুতের মিটার নিতে উদ্যোগী হয়েছেন। তার জেরে অনেক ঘরেই এখন সেই টিমটিমে আলো ছাড়া আর কিছুই জ্বলছে না।

তদন্তকারীরা জানান, ওই কুলি লাইন কার্যত চেলুয়া লাইনে পরিণত হয়েছিল। বিদ্যুৎ চুরি করে তা থেকে কুলি বস্তির বিভিন্ন ঘরে বিদ্যুৎ বিক্রি করত চেলুয়া। সেই চোরাই বিদ্যুতেই কুলি বস্তির একটি বড় অংশের বাসিন্দারা স্বাচ্ছন্দ্যের নানাবিধ বৈদ্যুতিন জিনিসপত্র ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ।

সিইএসসি জানাচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটি জুটমিলের লেবার কোয়ার্টার্স ওল্ড লাইনের ওই বস্তিতে কারও কারও ঘরে অবশ্য বৈধ উপায়ে বিদ্যুৎ নেওয়া হত। কিন্তু, তা দিয়ে বড়জোর টিমটিমে একটি আলো জ্বলত। ফলে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চেলুয়া স্বল্প মূল্যে বস্তিবাসীদের স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনযাত্রার লোভ দেখিয়ে নিজের ব্যবসা ফেঁদেছিল।

নিজস্ব পরিকাঠামো থেকে ওই বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা জানতে পারে ওই এলাকা থেকে ব্যবহারের তুলনায় টাকা আসছে সামান্যই। তখনই তাঁদের সন্দেহ হয়। সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ ব্যবহার সব চেয়ে বেশি হচ্ছিল সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আবার সন্ধ্যার পরে বাড়ছিল। সরেজমিনে গিয়ে সংস্থার আধিকারিকেরা দেখেন চেলুয়া লাইন দিয়ে প্রায় প্রতিটি ঘরে চুরি করা ওই বিদ্যুতের মাধ্যমে হিটার জ্বালিয়ে রান্না হচ্ছিল। হিটারে সব চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। কিন্তু, যে হেতু মিটারের বালাই নেই, তাই সকাল থেকে যাবতীয় রান্না চলত হিটারে। সন্ধ্যার পরে আবার চালু হত হিটার।

সিইএসসি-র কর্তারা জানান, প্রায় এক হাজার পরিবারের যেখানে প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার টাকার বিল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই হিসেবে টাকা তাঁদের কোষাগারে আসছিল না। তাঁদের দাবি, চেলুয়ার রাজ্যপাট

গুটিয়ে দেওয়ার পরে ওই এলাকায় হুকিংয়ের বেশির ভাগটাই কেটে দেওয়া গিয়েছে। তার পরেই সেপ্টেম্বর মাস থেকে কুলি লাইনের বাসিন্দারা অনেকেই এখন নতুন মিটারের জন্য আবেদন করতে শুরু করেছেন।

ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রে খবর, এর আগেও চেলুয়ার নামে থানায় অভিযোগ হওয়া সত্ত্বেও সে অধরা থেকে যায়। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই এই বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’’

তবে, কামারহাটি ছাড়াও হুকিংয়ের সমস্যা রয়েছে এলাকার অন্যত্রও। চেলুয়ার মতো পুলিশের সামনে উঠে এসেছে আরও বেশ কিছু নাম।

Agarpara Electric Hooking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy