Advertisement
E-Paper

এটিএমে টাকা চেয়ে বেরলো শুধুই রসিদ

কথা ছিল, শুক্রবার থেকে স্বাভাবিক হবে এটিএম পরিষেবা। কিন্তু তেমনটি হল না বললেই চলে। শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত বন্ধ ছিল বেশিরভাগ এটিএম। দুই জেলাতেই সকালে কয়েকটি এটিএম খুললেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টাকা শেষ হয়ে যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৮
ব্যাঙ্কে ভিড়। বন্ধ এটিএম। ক্যানিঙে সামসুল হুদার তোলা ছবি।

ব্যাঙ্কে ভিড়। বন্ধ এটিএম। ক্যানিঙে সামসুল হুদার তোলা ছবি।

কথা ছিল, শুক্রবার থেকে স্বাভাবিক হবে এটিএম পরিষেবা। কিন্তু তেমনটি হল না বললেই চলে। শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত বন্ধ ছিল বেশিরভাগ এটিএম। দুই জেলাতেই সকালে কয়েকটি এটিএম খুললেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টাকা শেষ হয়ে যায়। কোথাও কোথাও টাকার বদলে বেরিয়ে আসে শুধু রসিদ। টাকা বদলানোর জন্য ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিসগুলিতে ছিল দীর্ঘ লাইন।

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাকদ্বীপ শহরের দু’একটি ছাড়া সব এটিএমই বন্ধ ছিল। কাকদ্বীপ শহরের পোস্ট অফিসে এ দিন মাত্র ১০ লক্ষ টাকার নতুন নোট দেওয়া হয়েছিল। দুপুরের মধ্যেই সেই টাকা শেষ হয়ে যায়। ওই পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার প্রীতিময় মাইতি বলেন, ‘‘আমাদের এখানে গ্রাহক বেশি। আমরা সবাইকে সাধ্যমতো সাহায্য করতে চেষ্টা করছি। পুরনো নোট জমা নেওয়া হয়েছে।’’ ব্যাঙ্কগুলিতেও ছিল দীর্ঘ লাইন। শহর এলাকার ব্যাঙ্কগুলিতে তেমন সমস্যা না হলেও পাথরপ্রতিমা, সাগর এবং নামখানার মতো প্রত্যন্ত এলাকার ব্যাঙ্ক এবং পোস্টঅফিসগুলিতে দ্রুত টাকা শেষ হয়ে যায়। ব্যাঙ্ক থেকে ৪ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলা হলেও কয়েকটি ব্যাঙ্কে গ্রাহক-পিছু ১ হাজার করে দেওয়া হয়েছে। সাগরের বামনখালির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুকেতু মাইতি বলেন, ‘‘চার হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। পেলাম মাত্র ১ হাজার টাকা। সেটাও নিতে হয়েছে ১০ টাকার নোটে।’’ কাকদ্বীপের বহু প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাঙ্ক না থাকায় গ্রাহকদের কয়েক কিলোমিটার উজিয়ে শহরে আসতে হয়েছে। তাতেও অনেকে টাকা পাননি।

ডায়মন্ড হারবারের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় বেড়েছে। এই শহরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার কৃষ্ণচন্দ্র প্রসাদ বলেন, ‘‘৫০০, ১০০০ টাকার পুরনো নোটের বদলে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে।’’ ডায়মন্ড হারবার মহকুমা ডাকঘরে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার জমা নেওয়া হলেও উপ ডাকঘরগুলিতে সেই সুবিধা ছিল না। পেট্রোল পাম্পগুলিতে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত পুরনো নোট নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। অনেকেই ৫০০ এবং ১০০০ টাকা দিয়ে তেল নিতে চাইছেন। সেই নিয়ে গোলমালের ঘটনাও ঘটছে। ক্যানিং মহকুমার বেশিরভাগ এটিএম কাউন্টারই বন্ধ ছিল শুক্রবার। তবে চালু না থাকলেও অনেক এটিএমের সাটার খোলা ছিল। সেই দেখে অনেকে সেই এটিএমগুলিতে টাকা তোলার আশায় লাইন দিয়ে পরে ভুল বুঝতে পারেন।

বারাসত এবং মধ্যমগ্রামের কিছু এটিএম খোলা থাকলেও সেগুলিতে দুপুরেই টাকা ফুরিয়ে যায়। মধ্যমগ্রাম চৌমাথার কাছে একটি ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় বিক্ষোভ দেখান গ্রাহকেরা। পুলিশ গিয়ে এটিএমটি বন্ধ করে দেয়। বনগাঁ শহরের বিভিন্ন বাজারে ৪০০ টাকা কিংবা তার বেশি টাকার জিনিস কিনলে পুরনো ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এই মহকুমার পোস্টঅফিসগুলিতে এ দিন টাকা জমা নেওয়া হলেও টাকা দেওয়া হয়নি। ডাকঘর সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ডাকঘরে ৫০ হাজার টাকা কিংবা তার বেশি টাকা জমা রাখতে এলে আমরা প্যান কার্ড-সহ যাবতীয় পরিচয়পত্র জমা রেখে দিচ্ছি। শনিবার থেকে গ্রাহকেরা ডাকঘর থেকে টাকা তুলতে পারবেন।’’

বাজারে নোটের আকাল প্রভাব ফেলেছে বিয়েবাড়িতেও। গাইঘাটার বাসিন্দা এক ব্যক্তি টাকার জন্য হন্যে হয়ে এক এটিএম থেকে অন্য এটিএমে ঘুরছিলেন। টাকা না পেয়ে দৃশ্যতই হতাশ সেই ব্যক্তির ক্ষোভ, ‘‘প্রয়োজনীয় জিনিসের অর্ডার দেওয়া হলেও পেমেন্ট করতে পারছি না। এ দিকে সময় এগিয়ে আসছে।’’ বনগাঁর বাসিন্দা স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘‘ক’দিন পরেই বাড়িতে সামাজিক অনুষ্ঠান। মাছ ও সব্জি বাজার তো ধারে কিনতে পারব না। কী করে অনুষ্ঠান হবে বুঝতে পারছি না।’’ বসিরহাট মহকুমার কয়েকটি এটিএম খোলা থাকলেও সেখানে টাকার বদলে শুধু রসিদ বের হয়। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে এটিএমে ঢুকে শুধু রসিদ পেয়ে হতাশ এক যুবক রসিদটি পুড়িয়ে দিতে গেলে পুলিশ তাকে আটক করে।

নির্দেশ সত্ত্বেও কেন চালু হল না বেশিরভাগ এটিএম? দুই জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এটিএম কাউন্টারে ২০০০ টাকা রাখার জন্য প্রযুক্তি বদলাতে হবে। মেশিনের মধ্যে ১০০ টাকা রাখার পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ ছাড়াও, এটিএমের যন্ত্রাংশে কিছু বদল আনতে হবে। তাই একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে তাঁদের আশ্বাস, দু’এক দিনের মধ্যে পরিস্থিত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

ATM receipt
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy