Advertisement
E-Paper

Crime against Women: ‘ভুল করেছিলাম ষোলো বছরের মেয়ের বিয়ে দিয়ে’

শিবিরে উপস্থিত ছিলেন হিঙ্গলগঞ্জের এক মহিলা। তিনি পাচার হয়ে যান। পরে পুলিশ উদ্ধার করে। তিনিও শোনান ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা।

বার্তা: নাটকের মাধ্যমে চলছে সচেতনতার পাঠ।

বার্তা: নাটকের মাধ্যমে চলছে সচেতনতার পাঠ। নিজস্ব চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২২ ০৬:২৮
Share
Save

কেউ অল্প বয়সে ভালবাসার ফাঁদে পা দিয়ে নারী পাচারের শিকার হয়েছিল। কেউ আঠারো বছরের আগে বিয়ে করে অত্যাচারিত। এমন অনেকে মেয়ে তাঁদের জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন স্কুলের ছাত্রী ও অভিভাবকদের সামনে। নাটকের মাধ্যমেও দেখানো হল, ঘরে-বাইরে কী ভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় মেয়েরা।

শনিবার আন্তর্জাতিক মানব পাচার বিরোধী দিবস। তার আগে, শুক্রবার সচেতনতা শিবির হল হাসনাবাদ ব্লক প্রশাসন ও চাইল্ড লাইনের তরফে, হাসনাবাদের চকপাটলি হাইস্কুলে।

এক মহিলা ছাত্রীদের জানান, তার পরিবার আঠারো বছরের আগেই বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের পরে পড়াশোনা করানো হবে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তবে সে কথা রাখেনি কেউ। সারাক্ষণ ছোট্ট শরীরে সংসারের কাজ সামলাতে হত। জীর্ণ শরীরে সন্তান ধারণ করতে বাধ্য করা হয়। পুষ্টিকর খাবার পেতেন না। বাচ্চার অপুষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দেয়।

এর কয়েক বছরের মধ্যে স্বামী ভিন্‌ রাজ্যে কাজে গিয়ে মারা যান। মহিলাকেও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন বাপের বাড়িতে থাকেন। মহিলার কথায়, ‘‘ছাত্রীরা পড়াশোনা করে স্বনির্ভর হও। তারপরে বিয়ে। ১৮ বছর হলেই বিয়ে করতে হবে, এমনও নয়। পরিবার যদি ১৮ বছরের আগেই বিয়ে দিতে চায় এবং বোঝায় বিয়ের পরেও পড়াশোনা করতে পারবে— সে কথায় কান দিও না। বিয়ের পর পড়াশোনা হয় না।”

মহিলা আরও বলেন, ‘‘আমাকে দ্রুত বিয়ে দিয়ে বাবা-মা ভেবেছিলেন, বোঝা নামিয়ে ফেলা গেল। এখন ওঁরা বুঝতে পারছেন, সমস্যা আরও বেড়েছে।’’

শিবিরে উপস্থিত ছিলেন হিঙ্গলগঞ্জের এক মহিলা। তিনি পাচার হয়ে যান। পরে পুলিশ উদ্ধার করে। তিনিও শোনান ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। মহিলা জানান, বয়স তখন ষোলো। ফোনে রং নম্বরের সূত্রে আলাপ হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক যুবকের সঙ্গে। ওই যুবক বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গুজরাত নিয়ে যায়। এরপরে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। যৌন পেশায় নামতে বাধ্য করে কিশোরীকে। কৌশলে একদিন বাড়িতে ফোন করেন তিনি। পরিবার পুলিশকে জানালে পুলিশ উদ্ধার করে। অভিযুক্ত যুবক গ্রেফতার হয়।

এই অভিজ্ঞতা শুনিয়ে ছাত্রীদের সচেতন করে তিনি বলেন, “কোনও অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনও ভাবে আলাপ হওয়ার পরে বিয়ের ফাঁদে পা দিও না কেউ।”

শিবিরে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি ভুল করেছি, লুকিয়ে ষোলো বছরের মেয়েকে দিয়েছিলাম। বিয়ের ৪ মাসের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যায়। এখন বুঝি, অল্প বয়সে বিয়ে দিলে অনেক জ্বালা। বিয়ের আগে যে যতই বোঝাক ছেলে খুব ভাল, তা হলেও নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেবেন না। আমি মেয়েকে আবার পড়াচ্ছি। স্বনির্ভর করতে চাই।’’

সচেতনতা শিবিরে ছিলেন হাসনাবাদের যুগ্ম বিডিও ফয়জ়ল আহমেদ, হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি লক্ষ্মী দলুই, সহ সভাপতি ইসকেন্দার গাজি, চকপাটলি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয়কৃষ্ণ দাস, চাইল্ড লাইন সদস্যেরা। যুগ্ম বিডিও বলেন, “ব্লকের মধ্যে সব থেকে বেশি নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার খবর এই পাটলি খানপুর পঞ্চায়েত থেকে পাই। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। না হলে বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করা কঠিন।”

চাইল্ড লাইনের সাব সেন্টার কেয়া হাসনাবাদের ডিরেক্টর সাকিলা খাতুন বলেন, ‘‘আমরা অনেক বলেছি সচেতন হতে। এ বার চেষ্টা করা হল ভুক্তভোগীদের মুখ থেকে তাঁদের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সচেতন করতে।”

Women Trafficking Human Traffcking Crime against Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy