বাটাগুর বাঁচাতে সক্রিয় বন দফতর। —নিজস্ব চিত্র।
অতি বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা’ (নর্দার্ন রিভার টেরাপিন) সংরক্ষণে ফের অভিনব উদ্যোগ রাজ্য বন দফতরের। কিছু দিন আগেই প্রথম বার আইইউসিএন-এর লাল তালিকায় ঠাঁই পাওয়া কচ্ছপের দেহে জিপিএস ট্রান্সমিটার বসিয়ে ছাড়া হয়েছিল সুন্দরবনের মুক্ত পরিবেশে। জিপিএস ট্রান্সমিটারের সাহায্যে তাদের প্রতি দিনের জীবনযাত্রার খুঁটিনাটি জানতেই ‘সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প’ (এসটিআর) এবং ‘সুন্দরবন জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ক্ষেত্র’ কর্তৃপক্ষের ওই উদ্যোগ ছিল। এ বার বাটাগুরের সংখ্যা বাড়াতে আগামী ১০ বছর ধরে পাইলট প্রজেক্ট চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসটিআর এবং টার্টেল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স (টিএসএ)। সোমবার আন্তর্জাতিক কচ্ছপ দিবস উপলক্ষে সুন্দরবনের সজনেখালিতে আয়োজিত হয় একটি বিশেষ কর্মশালা। সেখানেই লুপ্তপ্রায় এই কচ্ছপের সংরক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়৷ পাশাপাশি ট্রান্সমিটার বসানো আরও একটি কচ্ছপকে এ দিন গভীর জঙ্গল লাগোয়া নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাটাগুর বাসকার প্রজাতির চলাফেরা, পছন্দের পরিবেশ ও যাত্রাপথ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য জানতে গত ১৯ জানুয়ারি ন’টি কচ্ছপের দেহে ট্রান্সমিটার লাগিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল নদীতে। তার মধ্যে দু’টি কচ্ছপ চলে গিয়েছিল বাংলাদেশে৷ সে দেশের বনবিভাগ ট্রান্সমিটার লাগানো দু’টি কচ্ছপকেই উদ্ধার করে। সেই দু’টি কচ্ছপকে আগামী ২৫ মে ফের নদীতে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এসটিআর কর্তৃপক্ষ।
তবে এই ট্রান্সমিটার লাগানো কচ্ছপগুলির থেকে বহু তথ্য এসেছে এসটিআর এবং টিএসএ-র গবেষকদের কাছে। সোমবার আয়োজিত কর্মশালায় সেই তথ্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হয়। ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবনে এই কচ্ছপের সংখ্যা ছিল ১২টি। কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৭০। এ বার লুপ্তপ্রায় কচ্ছপদের বাঁচাতে সুন্দরবনের স্কুলের পড়ুয়া এবং স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সোমবার কচ্ছপ নিয়ে একটি পোস্টারও প্রকাশ করা হয়। যেখানে স্থান পেয়েছে প্রায় ২০টি কচ্ছপ। যার মধ্যে গাঙ্গেয় কাছিম (নিলসনিয়া গ্যাঞ্জেটিকা), ময়ুরপঙ্খী কাছিম (নিলসনিয়া হুরাম)-সহ প্রায় ১৪টি প্রজাতির কচ্ছপ লুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায় রয়েছে। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল জে টি ম্যাথু, প্রধান মুখ্য বনপাল(বন্যপ্রাণ) দেবল রায়, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা তাপস দাস, সহ-ক্ষেত্র অধিকর্তা জোনস জাস্টিন, টার্টেল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স-এর ডিরেক্টর শৈলেন্দ্র সিংহ প্রমুখ। তাপস বলেন, ‘‘আগামী ১০ বছর ধরে সুন্দরবনের নদ-নদীতে বাটাগুর প্রজাতির কচ্ছপের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করা হবে৷ ইতিমধ্যেই ডিম ফুটে বাচ্চাও তৈরি করা হয়েছে। অবলুপ্তির হাত থেকে এই ধরনের কচ্ছপকে বাঁচাতে একাধিক উদ্যোগ যেমন নেওয়া হয়েছে, আগামী দিনে তেমনই আরও পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy