হাসপাতালের পথে আহত বিধায়ক, ইনসেটে ভাঙা গাড়ির কাচ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
সকাল তখন সাড়ে ৯টা। বিধানসভায় যাবেন বলে বাড়ি গোপালনগরের থেকে বেরিয়েছিলেন বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। চালকের পাশের সিটে বসেছিলেন। গাড়িতে অন্য কেউ ছিলেন না।
বিধায়কের অভিযোগ, বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার এগোতেই ঘোষপাড়ায় গাড়ি লক্ষ্য করে উড়ে আসে ইট-পাটকেল। গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে যায়।
বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘চালক গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেন। আচমকাই এক যুবক গাড়ির উপরে লাফিয়ে পড়ে দরজা খোলার চেষ্টা করতে থাকেন। আমি নেমে আসি।’’ বিশ্বজিতের অভিযোগ, কোমরে গোঁজা আগ্নেয়াস্ত্র বের করতে চেয়েছিলেন হামলাকারী যুবক। বাধা দেওয়ায় বাঁশ দিয়ে মারা হয় বিধায়ককে। এলাকার লোকজন চলে এলে পালিয়ে যান ওই যুবক।
গোটা ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
তৃণমূলের টিকিটে ভোটে জেতা বিশ্বজিৎ কয়েক মাস আগে দিল্লিতে গিয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। তাঁর সঙ্গে বনগাঁ পুরসভার কয়েক জন কাউন্সিলরও যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। পুরসভার ক্ষমতা হাতছাড়া হতে বসে তৃণমূলের। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটে শান্তনু ঠাকুরের জেতার পরে এমনিতেই এলাকায় বিজেপির পক্ষে হাওয়া ছিল। বনগাঁ পুরসভার কাউন্সিলরদের অনেকে বিজেপিতে যাওয়ায় এবং এক বিধায়কও পদ্ম শিবিরে যোগ দেওয়ায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি হয়।
স্বভাবতই তখন ব্যাকফুটে তৃণমূল। যদিও পরে পুরসভায় তারা পালে হাওয়া ফিরে পায়। দলত্যাগী কাউন্সিলরদের ৫ জন ফিরে আসেন তৃণমূলে। বেশ কিছু দিন পুর পরিষেবা বিপর্যস্ত থাকার পরে স্বাভাবিক হয়েছে কাজকর্ম। কিন্তু তৃণমূলের এখনও গলার কাঁটা হয়ে বিধঁছে বিশ্বজিতের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঘটনা।
তাঁর উপরে হামলা, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগের পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্তই দেখছে বিজেপি শিবির। সে কথা মনে করছেন বিশ্বজিৎ নিজেও। আপাতত কলকাতার একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন তিনি। দলের বিধায়কের পক্ষ নিয়ে বিজেপি নেতারাও বলছেন, তিনি ‘চক্রান্তের শিকার’। বিশ্বজিতের বক্তব্য, ‘‘দল বদলানোর পরে আমার দেহরক্ষী তুলে নেওয়া হয়। এখন প্রতারণার মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। সবটাই রাজনৈতিক আক্রোশ।’’
সে কথা অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূল। দলের নেতাদের বরং অভিযোগ, টাকা নিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। এত দিন সেটা ধামাচাপা ছিল। কিন্তু মানুষ এখন মুখ খুলছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘গোটা ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। আর তা ছাড়া, আমরা বিশ্বজিৎকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলে মনেই করি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy