Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বেআইনি সিরাপ বিক্রির অভিযোগ, গ্রেফতার যুবক

বনগাঁ মহকুমা জুড়ে যুবকদের নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। কয়েক বছর আগেও বনগাঁতে যুবকেরা হেরোইন ও গাঁজার নেশা করত। হেরোইনের খুচরো কারবারেরও রমরমা ছিল। পুলিশি ধরপাকড়ের পর হেরোইনের খুচরো কারবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

ধৃত: তপনকুমার মণ্ডল।

ধৃত: তপনকুমার মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া নেশার সিরাপ ও ট্যাবলেট বিক্রির অভিযোগে পুলিশ এক যুবককে গ্রেফতার করল। শনিবার রাতে বনগাঁ থানার পাইকপাড়া এলাকা থেকে তপনকুমার মণ্ডল নামে ওই যুবককে ধরা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, তার বাড়ি কোড়ালবাগান এলাকায়। ধৃতের কাছ থেকে পুলিশ ৪৯ বোতল কোডাইন ফসফেট ও নেশার ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। ধৃতকে রবিবার বনগাঁ জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশ মাদক আইনে মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাইকপাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় তপনের ওষুধের দোকান। সে হাতুড়ের কাজও করত। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ওই ওষুধের দোকান থেকে তপন দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যুবকদের কাছে নেশার কাফ সিরাপ ও ট্যাবলেট বিক্রি করছিল। এক যুবকের কথায়, ‘‘তপনকে আমরা নিষেধ করেছিলাম বেআইনি ভাবে নেশার ওষুধ বিক্রি না করতে। কিছুদিন বন্ধ রাখার পর সম্প্রতি ফের সে বেআইনি কারবার শুরু করেছিল।’’ শনিবার স্থানীয় এক যুবক তপনের দোকানে গিয়ে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া নেশায় সিরাপ চান। এবং তা পেয়েও যান। এরপরই এলাকার লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে তাকে ধরে।

বনগাঁ মহকুমা জুড়ে যুবকদের নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। কয়েক বছর আগেও বনগাঁতে যুবকেরা হেরোইন ও গাঁজার নেশা করত। হেরোইনের খুচরো কারবারেরও রমরমা ছিল। পুলিশি ধরপাকড়ের পর হেরোইনের খুচরো কারবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হেরোইন গাঁজার জায়গা নেয়, কাফ সিরাপ ও বিভিন্ন নেশার ট্যাবলেট। বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা, গোপালনগর এলাকায় এখন চলছে এই নেশার রমরমা। অতীতে এই নেশার কবলে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। অনেকেই স্নায়ু রোগে আক্রান্ত। তাঁদের গা-হাত কাঁপে। অনেক শিক্ষিত যুবকেরাও নেশায় আসক্ত। নেশায় টাকা জোগাড় করতে বাড়ি থেকে জিনিসপত্র চুরি করে যুবকেরা। সংসারে অশান্তি লেগে আছে।

কী ভাবে কাফ সিরাপ জোগাড় করেন যুবকেরা?

চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া নেশার সিরাপ ও ট্যাবলেট বিক্রি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তা সত্ত্বেও মহকুমার বহু ওষুধের দোকান থেকে বেশি দামে গোপনে নেশাড়ুদের কাছে বিক্রি করা হয়। নেশায় আসক্ত যুবকেরা ওষুধের দোকানে গিয়ে ইশারায় সেই ওষুধের কথা বলেন। এরপর গোপনে তা হাতে পেয়ে যান। দোকানিরা প্রথমেই কেউ গেলে সিরাপ ও ট্যাবলেট তার কাছে বিক্রি করেন না। অন্য নেশাড়ুদের রেফারেন্স ছাড়া বিক্রি করা হয় না। বাংলাদেশেও কাফ সিরাপ ও ট্যাবলেটের চাহিদা রয়েছে। চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে তা চলে যাচ্ছে।

দিন কয়েক আগে বিএসএফ ঘুনার মাঠ এলাকা থেকে প্রচুর কাফ সিরাপ -সহ এক ব্যক্তিকে ধরেছিল। সীমান্তের একটি পরিত্যক্ত ঘরে কাফ সিরাপ জড়ো করা হয়েছিল পাচারের জন্য।

বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ মহকুমাতে প্রায় ১০০টি ওষুধের দেকান রয়েছে। যার কোনও সরকারি লাইসেন্স নেই। ওই সব দোকান থেকে কাফ সিরাপ ও ট্যাবলেট বেআইনি ভাবে বিক্রি করা হয়। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াও ওই সিরাপ ও ট্যাবলেট বিক্রি করতে হলে তার হিসাব রাখতে হয়। ড্রাগ কন্ট্রোলের কাছে জানাতে হয়। সংগঠনের জেলার সহ সভাপতি অপূর্ব দাস বলেন, ‘‘আমাদের সংঠনের সদস্যকে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছে তাঁরা যেন চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেউ কাফ সিরাপ ও নেশার ট্যাবলেট বিক্রি না করেন। সংগঠনের কোনও সদস্য তা করেনও না। বেআইনি দোকানিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে ড্রাগ কন্ট্রোলকে বলা হয়েছে। আমরা সহযোগিতা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bongaon Syrup Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE