দোকান থেকে চিপ্সের প্যাকেট চুরির অপবাদ দেওয়ায় ১৩ বছরের এক বালক আত্মহত্যা করেছে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায়। এ বার বিস্কুট চুরির সন্দেহে ১৩ বছরের এক বালককে কাঠের টুকরো দিয়ে মেরে নাক ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল দোকানদারের বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া এলাকার ঘটনা। শুধু তা-ই নয়, ছেলেটির বাবার অভিযোগ, সিটি স্ক্যান করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাঁদের পথ আটকায়। থানায় অভিযোগ না-করে দোকানদারের টাকা মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন এক পুলিশকর্মী। শেষমেশ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলেই অভিযোগ।
কয়েক দিন আগে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার গোঁসাইবেড় এলাকার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কৃষ্ণেন্দু দাসের আত্মহত্যা নাড়িয়ে দিয়েছে সকলকে। অভিযোগ, বছর তেরোর ওই কিশোরকে চোর সন্দেহে কান ধরে ওঠবোস করান দোকানদার। মা-ও ছেলেকে শাসন করেন। ওই চুরির ‘অপবাদ’ সহ্য করতে না পেরে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হয় ছেলেটি। চিরকুটে লিখে যায়, সে চুরি করেনি। অন্য দিকে, হাবড়া থানার সংহতি স্টেশন লাগোয়া শলুয়া এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় হালদারের দাবি, সোমবার সকালে ছেলেকে ২০ টাকা দিয়ে তিনি কাজে চলে গিয়েছিলেন। বিকেলে ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলছিল। তার পর সংহতি শলুয়া রেলগেট লাগোয়া একটি মুদি দোকানের সামনে বিস্কুট কেনার জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে ছিল আরও পাঁচ খুদে। বিস্কুট কিনে টাকা দেওয়ার আগেই ছেলের দুই বন্ধু চলে যায়। তখন পাশের এক দোকানদার ওই মুদির দোকানদারকে জানান, তাঁর মনে হচ্ছে বিস্কুট নিয়ে ওই দুটো ছেলে পালিয়েছে। এই কথা শোনামাত্র দোকানমালিক ধরেন তাঁর ছেলেকে। দোকানের সামনে পড়ে থাকা একটি কাঠের টুকরো কুড়িয়ে সেটা দিয়ে মারধর করেন তাঁর ছেলেকে। সেটা দেখে ভয়ে ছেলের বন্ধুরা দৌড় দেয়।
আরও পড়ুন:
সঞ্জয়ের দাবি, তাঁর ছেলেকে মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন ওই দোকানদার। সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়ার চিৎকারে স্থানীয়েরা ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। বাবার দাবি, ‘‘ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগে মারধর করল। তার পর তাকে ডাক্তারের কাছে না-নিয়ে গিয়ে প্রমাণ লোপাটের জন্য দোকানের সামনে পড়ে থাকা তাজা রক্তের দাগ ধুতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দোকানমালিক।’’ তাঁর দাবি, ছেলেকে নিয়ে মছলন্দপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন তিনি। ডাক্তারবাবু ছেলের সিটি স্ক্যান করানোর কথা বলেন। সেইমতো ছেলেকে নিয়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন। তখন সংহতি স্টেশনের কাছে পথ আটকায় হাবড়া থানার বাউগাছি ফাঁড়ির পুলিশ। ওই পুলিশকর্মী অভিযোগ না-করে দোকানদারের টাকা মিটিয়ে দিতে বলেন। তিনি তা অস্বীকার করেন এবং সোমবার রাত ১২ টা নাগাদ হাবড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। অন্য দিকে, ওই দোকানদার মারধরের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন লাঠি উঁচিয়ে শাসন করছিলাম, তখন ছেলেটি পালাতে চায়। সেই সময় ওর নাকে লেগে গিয়েছে।’’ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।