Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ফের মৃত্যু তরুণ প্রতিবাদীর

পথবাতি ভাঙাটাই অভ্যাস শ্যামলদের

রাস্তার ধারের বিদ্যুতের খুঁটিতে অনেক বাল্ব-টিউবই নিয়মিত ভেঙে যায় দত্তপুকুরের কুলবেড়িয়ায়। এলাকাবাসী বলছেন, “বাল্ব-টিউব ঠিক থাকলে তো রাতের কাজ-কারবারে বাধা পড়বে শ্যামলের! এলাকায় নানা অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালাতে ও আর ওর দলবলই তো ভাঙে লাইটগুলো!” সপ্তাহ দুয়েক আগে কুলবেড়িয়ায় এই পথ-বাতি ভাঙা নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুরনো দুষ্কৃতী শ্যামল কর্মকার ও তার দলবলের যে বিরোধ শুরু হয়েছিল, পরিবারের ধারণা, তারই জেরে খুন হয়ে গিয়েছেন কলেজ-ছাত্র সৌরভ চৌধুরী।

বামনগাছির কাছে যশোহর রোডে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের লাঠি।

বামনগাছির কাছে যশোহর রোডে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের লাঠি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দত্তপুকুর শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০৩:০৫
Share: Save:

রাস্তার ধারের বিদ্যুতের খুঁটিতে অনেক বাল্ব-টিউবই নিয়মিত ভেঙে যায় দত্তপুকুরের কুলবেড়িয়ায়। এলাকাবাসী বলছেন, “বাল্ব-টিউব ঠিক থাকলে তো রাতের কাজ-কারবারে বাধা পড়বে শ্যামলের! এলাকায় নানা অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালাতে ও আর ওর দলবলই তো ভাঙে লাইটগুলো!”

সপ্তাহ দুয়েক আগে কুলবেড়িয়ায় এই পথ-বাতি ভাঙা নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুরনো দুষ্কৃতী শ্যামল কর্মকার ও তার দলবলের যে বিরোধ শুরু হয়েছিল, পরিবারের ধারণা, তারই জেরে খুন হয়ে গিয়েছেন কলেজ-ছাত্র সৌরভ চৌধুরী। একই মত স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশেরও।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৭-৯৮ সালে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি বছর ছত্রিশ-সাঁইতিরিশের শ্যামলের। সেই সময় দত্তপুকুর এলাকার দাপুটে দুষ্কৃতী সমরেশ ব্রহ্মের শাগরেদ হয়ে ভয় দেখানো, তোলাবাজির মতো কাজে হাত পাকায় এই যুবক। পরে সমরেশ খুন হয়ে যেতে তার শূন্যস্থানে বসে পড়ে শ্যামল। চোলাইয়ের ভাটি এবং ঠেক চালানো, তোলাবাজি, তোলা না পেলে ব্যবসায়ীদের দোকানে হামলা করা, মহিলাদের বিরক্ত করা-সহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মুখ খুলতে না চাওয়া স্থানীয় একাধিক লোকের অভিযোগ, কোমরে দেশি ৯ এমএম পিস্তল ঝুলিয়ে জনা আটেক সঙ্গীকে নিয়ে শ্যামল ঘুরে বেড়াত এলাকায়। তার সঙ্গে দেখা করতে দত্তপুকুর এলাকায় ঢোকা বহিরাগত দুষ্কৃতীর সংখ্যাও খুব কম নয় বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশের একটি সূত্র।

দুষ্কৃতীদের হাতে নিহত সৌরভ চৌধুরী।—নিজস্ব চিত্র

স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর আড়াই আগে মাটির রাস্তায় সাধারণের চলাচলের সুবিধার জন্য ইট পাততে গিয়ে শ্যামলের বিরাগভাজন হয় কুলবেড়িয়া এলাকার এক যুবক। যুবকটিকে শ্যামল এবং তার দলবল বাঁশ দিয়ে পেটায়। খুনের হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ। বছর দেড়েক আগে এলাকার একটি মোবাইলের দোকানে লুঠ, ভাঙচুর এবং দোকানদার পুলিশে খবর দেওয়ায় ভয় দেখানোর অভিযোগও রয়েছে রোগাটে চেহারার শ্যামলের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাম বা তৃণমূল কোনও আমলেই পুলিশ সে ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বলে ক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের। জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, “শ্যামলের বিরুদ্ধে খুব বড় কোনও অভিযোগ কখনই ছিল না। অভিযোগ পেলেই ওকে ধরা হয়েছে। সে সব মামলায় জামিন পেয়ে ও এলাকায় ঢুকে ফের গণ্ডগোল শুরু করেছে।”

২০১১-র জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে শ্যামল তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় বলে তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি। সেই সময় থেকে দাপটও বাড়ে তার। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তাকে ঘুরতে দেখেছেন অনেকেই। শাসক দলের পঞ্চায়েত স্তরের এক নেতার সঙ্গে শ্যামলের ঘনিষ্ঠতাও চোখ এড়ায়নি এলাকাবাসীর। তবে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব শ্যামলের সঙ্গে দলের ঘনিষ্ঠতার দাবি মানতে নারাজ।

কুলবেড়িয়ায় একটি শনি মন্দিরের পাশে কালভার্টের ধারে সঙ্গীদের নিয়ে বসে মাঝেমধ্যেই মদ্যপান করত শ্যামল। অভিযোগ, সেই সময় কাছাকাছি একটি ট্রান্সফর্মার থেকে সে ও তার সঙ্গীরা ‘ফিউজ’ খুলে নিত। ভেঙে দিত পথ-বাতিও। সপ্তাহ দু’য়েক আগে তেমনই এক পর্বে এলাকার কয়েক জন প্রতিবাদ করেন। তখন শ্যামলরা তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। খবর জানাজানি হতে জনতা শ্যামল ও তার এক সঙ্গীকে ধরে গণপিটুনি দেয়। আহত হয়ে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি হয়েও সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালায় শ্যামল। দিন কয়েক আগে মোটরবাইকে চেপে তাকে ফের দত্তপুকুরে ঘুরতে দেখা গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের।

নিহত সৌরভের দাদা সন্দীপ চৌধুরী এ দিন বলেন, “শুক্রবার রাতে ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়ার আগে শ্যামলরা বলছিল, ‘সে দিন গণ্ডগোলের সময় তো তুই-ও ছিলি’। ওদের অপকর্মের প্রতিবাদ করাটাই কাল হল ভাইয়ের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE