Advertisement
২৪ মে ২০২৪
COVID-19

লাফিয়ে বাড়ছে করোনা

নতুন করে বাড়ছে সংক্রমণ। ভোটের বাজারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কী ভাবে রোখা সম্ভব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় স্বাস্থ্য আধিকারিক, চিকিৎসকেরা।

বেপরোয়া: রাজনৈতিক সভায় মাস্ক নেই প্রায় কারও মুখেই। এ ভাবেই বাড়ছে সংক্রমণের আশঙ্কা।

বেপরোয়া: রাজনৈতিক সভায় মাস্ক নেই প্রায় কারও মুখেই। এ ভাবেই বাড়ছে সংক্রমণের আশঙ্কা। নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২১ ০৫:৪০
Share: Save:

দিন কয়েক আগের ঘটনা। বনগাঁ ব্লকের বাসিন্দা এক ব্যক্তি দুবাই থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন। বিমানবন্দরে তাঁর কোভিড পরীক্ষার জন্য লালারস সংগ্রহ করা হয়। তাঁকে বলা হয়, রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে থাকতে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রিপোর্টে দেখা যায়, তিনি ব্রিটিশ স্ট্রেনে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব থেকে উদ্বেগের বিষয়, বনগাঁর ওই বাসিন্দাকে হোম আইসোলেশনে থাকার কথা বলা হলেও তিনি বাড়িতে ছিলেন না। রিপোর্ট আসার পরে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে তাঁর খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, তিনি নদিয়ায় আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছেন মেলা দেখতে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেলায় গিয়ে তিনি কত মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করছেন, তা শনাক্ত করা কার্যত অসম্ভব।’’

নতুন করে বাড়ছে সংক্রমণ। ভোটের বাজারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কী ভাবে রোখা সম্ভব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় স্বাস্থ্য আধিকারিক, চিকিৎসকেরা। সাধারণ মানুষজনও ইদানীং গা ছাড়া ভাব দেখাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে।

জনসমাবেশে করোনা বিধি মানতে দেখা যাচ্ছে না অধিকাংশ মানুষকে। মাস্ক ছাড়া হাট-বাজার, বাড়ি-দোকানে ঘুরছেন প্রার্থীরাও। তাঁদের সঙ্গে থাকা দলীয় কর্মী-সমর্থকদেরও মাস্কের বালাই নেই। থাকছে না শারীরিক দূরত্ব। গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন প্রার্থী বা নেতানেত্রীরাও সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠছে। প্রার্থীরা কেন ভোটদাতাদের করোনা বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন নাগরিকেরা।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। নিয়ম বলছে, ঘরে ঘরে প্রচারের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সঙ্গে সর্বাধিক পাঁচজন থাকতে পারবেন। আর রোড শো-র ক্ষেত্রে প্রার্থীর সঙ্গে সর্বাধিক থাকবে পাঁচটি গাড়ি। অভিযোগ, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় সেই নিয়ম ভাঙার ছবি সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। নিয়ম ভাঙলে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। কিন্তু সেই আইন প্রয়োগ হচ্ছে আর কই!

কী বলছেন নেতারা?

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা হাবড়ার তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রচারে বেরিয়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছি। মাস্ক পরছি। এর বাইরে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।’’ জেলা সিপিএম সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাস্ক পরা ছাড়া বাস্তবে করোনা বিধি মেনে চলা সম্ভব নয়। প্রার্থীর সঙ্গে হাত মেলানো, জড়িয়ে ধরা একটা রেওয়াজ। প্রার্থীর পক্ষে হাতে গ্লাভস পড়ে হাত মেলানোটাও কঠিন।’’ বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেব বলেন, ‘‘প্রচারে কর্মী সংখ্যা কম নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যতটা সম্ভব মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করা হচ্ছে।’’

মার্চের শুরুতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় দৈনিক সংক্রমণ নেমে এসেছিল পঞ্চাশের আশেপাশে। এখন সেটা আচমকাই বেড়ে একশোর বেশি হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় মৃতের সংখ্যা ২,৫৩০। শুক্রবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা, ১২,২৫,১৩৩ জন।

রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত লোকজন তো বটেই, সচেতনতা উধাও সাধারণ মানুষের মধ্যেও। পথেঘাটে শারীরিক দূরত্ব মানা, নিয়মিত বাইরে বেরোলে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার ইদানীং তেমন চোখে পড়ছে না। দল বেঁধে গল্পগুজব চলছে চায়ের দোকানে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ভ্যাকসিন নেওয়া মানে এই নয় যে মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করব না। ভিড়ের মধ্যে না যাওয়া, পরস্পরের সঙ্গে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা, মাস্ক পরা, সাবান বা স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে। করোনা চলে যায়নি, এটা মাথায় রাখতে হবে। সেফহোম ও কোভিড হাসপাতালগুলি প্রস্তুত রাখা রয়েছে আগের মতোই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE