Advertisement
E-Paper

দেগঙ্গায় জ্বরে মৃত্যু অব্যাহত

রোগ মোকাবিলায় গ্রামবাসীরা যে সরকারি উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন, তা মানতে চাননি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘সরকারের পক্ষ থেকে দেগঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির করে রোগীদের চিকিৎসা চলছে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০০
বৃহস্পতি দাস

বৃহস্পতি দাস

জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায়। ষষ্ঠী থেকে দশমী— পুজোর পাঁচ দিনে আট জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে এক কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতে। চিকিৎসায় গাফিলতি, পর্যাপ্ত চিকিৎসক না-থাকার পাশাপাশি সরকারি উদাসীনতাকেই এ জন্য দায়ী করছেন এলাকার মানুষ। মশা মারতে নিজেরাই চাঁদা তুলে ওষুধ কিনে ছড়ানো শুরু করেছেন তাঁরা।

প্রশাসনের হিসেবে অগস্টের গোড়া থেকে এ পর্যন্ত এই ব্লকে জ্বরে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক জন মারা গিয়েছেন ডেঙ্গিতে। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি, মৃতের সংখ্যাটা আরও বেশি। তার মধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তও রয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রশাসন সে কথা লিখছে না বলে তাঁদের দাবি।

রোগ মোকাবিলায় গ্রামবাসীরা যে সরকারি উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন, তা মানতে চাননি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘সরকারের পক্ষ থেকে দেগঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির করে রোগীদের চিকিৎসা চলছে।’’ কিন্তু এলাকাবাসীর প্রশ্ন, সরকারি ব্যবস্থা যদি যথাযথ থাকে, তা হলে এত দিন পরেও জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন?

গত শনিবার দেগঙ্গা ব্লক অফিসে আসেন উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রাহুল রায়। ছিলেন ১৩টি পঞ্চায়েতের প্রধান ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। সেখানে জ্বর প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (ব্লিচিং, চুন ও মশা মারার ব্যবস্থা) ও চিকিৎসকের অভাব নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়। স্বাস্থ্যশিবির বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। দেগঙ্গার বিডিও দেবব্রত সাউ বলেন, ‘‘মশা মারার যন্ত্র না মেলায় সাধারণ যন্ত্র দিয়ে প্রতিটি পঞ্চায়েতে কেরোসিন, ফিনাইল ছড়ানো চলছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতর ব্লিচিং পাউডার ও চুন ছড়াচ্ছে।’’

সোমবার মামুরাবাদ গ্রামের জুলেখা খাতুন (১২) নামে ষষ্ট শ্রেণির এক ছাত্রী কলকাতার শিশু হাসপাতালে মারা যায়। তার আগে পুজোর কয়েক দিনে দেগঙ্গার দোহাড়িয়া-২, বেলেডাঙা, কাউকেপাড়া, শিমুলিয়া, গিলেবাড়ি, আবজানগর ও মামুরাবাদ গ্রামের এক জন করে মোট সাত জন জ্বরে মারা যান। অষ্টমীর দিন ডেঙ্গিতে মারা যান বেড়াচাঁপা-১ পঞ্চায়েতের বেলেডাঙা দাসপাড়ার বাসিন্দা, বেড়াচাঁপা শহিদুল্লাহ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী বৃহস্পতি দাস (১৮)। পুজোর কয়েকদিন আগে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে স্থানীয় বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়ে। সেখান থেকে বারাসত জেলা হাসপাতাল এবং পরে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। অষ্টমীর ভোরে সেখানেই বৃহস্পতি মারা যান।

বৃহস্পতির মা রিনাদেবীর আক্ষেপ, ‘‘পুজোর ছুটিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন না। অথচ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই মেয়ে যথাযথ চিকিৎসা পায়নি।’’ বৃহস্পতির মৃত্যুর খবর গ্রামে আসতেই পুজোর আনন্দ ফিকে হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ঢাক ও মাইকের শব্দ। শঙ্কর দাস নামে এক গ্রামবাসীর অভিযোগ, ‘‘এখানে বহু মানুষ জ্বরে আক্রান্ত। কোনও স্বাস্থ্য শিবির নেই। আতঙ্কে দিন কাটছে।’’

কিছুদিন আগে জ্বর নিয়ে দেগঙ্গার যাদবপুর গ্রামের মামুদ গাইনের বাড়িতে এসেছিলেন তাঁর মেজো মেয়ে রোজিনা বিবি। প্রথমে বারাসত হাসপাতাল, পরে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রবিবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। তার চল্লিশ মিনিটের মধ্যে বারাসত হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর বোন রেহেনার। জ্বর হওয়ায় ওই দুপুরে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। মৃতাদের ভাই হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঘরে ঘরে জ্বর। মাইক প্রচার চলছে, অথচ স্বাস্থ্যশিবিরে ডাক্তার নেই।’’

সোমবার যাদবপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে চাঁদা তুলে মশা মারার তেল কিনে ছড়াচ্ছেন। সালাউদ্দিন গাইন, বিশ্বজিৎ নাথের মতো কয়েক জন গ্রামবাসী বলেন, ‘‘সরকারি উদ্যোগ নেই। তাই নিজেরাই নেমে পড়েছি।’’

Death toll Dengue Malaria fever Water pollution Mosquitoes দেগঙ্গা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy