Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের হয়ে ভোটের কাজে নামলেন দুলাল

স্থানীয় সূত্রের খবর, দুলালবাবুর দলে ফেরাটা ইতিমধ্যেই কাজ দিতে শুরু করেছে। পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন এক কর্মাধ্যক্ষ ও তাঁর অনুগামীরা বিজেপি-তে যোগ দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন অবশ্য তাঁরা ওই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছেন।

দুলাল বর।

দুলাল বর।

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৫৮
Share: Save:

অনেক দিনের ধোঁয়াশা কাটিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে এসেছেন দুলাল বর। দল বদলের পরে পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করে বাগদার বিধায়ক এ বার কোমর বেঁধে নেমেও পড়লেন দলীয় কাজে।

মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত দুলাল বর ব্যস্ত থাকলেন প্রার্থী তালিকা প্রস্তুতির কাজে। সকাল থেকে বহু মানুষ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসায়’ তাঁরা দুলালবাবুকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। তাঁর ফোন সর্বক্ষণ বেজেই চলেছে। দুলালবাবুর কথায়, ‘‘তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব আমাকে পঞ্চায়েত ভোটে দলের হয়ে কাজ করতে বলেছেন। সেই কাজই শুরু করেছি। সকাল থেকে কয়েক’শো ফোন এসেছে। মানুষ ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।’’

দুলালবাবু তৃণমূলে ফেরায় দুলাল-ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের একটি বড় অংশের কর্মী-সমর্থক খুশি হয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, এ বার তাঁরা দলে গুরুত্ব ফিরে পাবেন। তবে বেশ কিছু নেতা এখনও জল মাপছেন। দলের মধ্যে যাঁরা বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক তথা মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ, তাঁরা দুলালবাবুর ফিরে আসাটাকে ভাল চোখে দেখছেন না। এরকম এক নেতার কথায়, ‘‘দুলালবাবুর দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি দলের তরফে প্রকাশ্যে জানানো হয়নি।’’

ব্লক কমিটির কার্যকরী সভাপতি পরিতোষ সাহা ও স্থানীয় হেলেঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অনিমেষ বাইনেরা জানান, ‘‘আমরা দল করি। দলের নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে সম্মান করি।’’ দুলাল-ঘনিষ্ঠ নেতা তরুণ ঘোষের কথায়, ‘‘দুলালবাবু দলে ফিরে আসায় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ফিরে এসেছে। পঞ্চায়েত ভোটেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’’

হঠাৎ কেন দুলালবাবুকে ফিরিয়ে নিল দল?

জেলা ও স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে কোন্দল মিটিয়ে নিয়ে বাগদাতে মজবুত সংগঠন তৈরির লক্ষ্যেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের বাইরে থাকলেও দলের মধ্যে দুলালবাবুর অনুগামীর সংখ্যা কম ছিল না। তা ছাড়া অধুনা বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গেও দুলালবাবুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গোপন নয়। তাঁর বাড়ির সামাজিক অনুষ্ঠানেও মুকুরবাবুকে আসতে দেখা গিয়েছে। দুলাল বা তাঁর অনুগামীরা যাতে বিজেপি-তে চলে না যান, সেই জন্যই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত নিলেন। এটি নিঃসন্দেহে দলের থিংক-ট্যাঙ্কের তরফে একটি মাস্টার স্ট্রোক।

এমনিতেই বাগদা ব্লকে দলীয় কোন্দল দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে ক্রমশ মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছিল। এমতাবস্থায় দুলালবাবুর জনসমর্থনকে ভোটের আগে উপেক্ষা করতে পারেনি দল। বিশেষ করে ব্লকের সংখ্যালঘু মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। প্রতি বছর তিনি তাঁর বাড়িতে ইফতার পার্টি দেন। তাতে বহু সংখ্যালঘু মানুষ অংশ নেন। জেলা কমিটির তরফে দুলাল-ঘনিষ্ঠ ৩ নেতা-সহ মোট ৫ জনকে নিয়ে সর্বসম্মত ভাবে প্রার্থী ঠিক করতে মঙ্গলবার একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, দুলালবাবুর দলে ফেরাটা ইতিমধ্যেই কাজ দিতে শুরু করেছে। পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন এক কর্মাধ্যক্ষ ও তাঁর অনুগামীরা বিজেপি-তে যোগ দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন অবশ্য তাঁরা ওই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছেন।

কংগ্রেস ও বাম নেতৃত্ব অবশ্য বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না। বাগদার সিপিএম নেতা বাসুদেব বিশ্বাস বলেন, ‘‘সম্পর্কে দুলালবাবু আমার শ্বশুর। ওঁকে ফোন করে অভিনন্দন জানাব বেইমানি করবার জন্য। কারণ বিধানসভা ভোটে আমরা ওঁকে সমর্থন করেছিলাম।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি (গ্রামীণ) অমিত মজুমদার জানিয়েছেন, ‘‘দুলালবাবু তৃণমূলে যোগ দিলেন বা তৃণমূলের হয়ে কাজ করলেন, সেটা ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তবে একটা কথা বলব, কংগ্রেসের প্রতীকে বিধানসভা ভোটে জয়ী হলেও উনি কোনও দিন কংগ্রেসের সাংগঠনিক কাজ করেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE