Advertisement
E-Paper

বাইশ কেজি সোনার প্রতিমা ইন্দ্রজিতের

সতেরো বছর ধরে এমনই নানা উপকরণ দিয়ে প্রতিমা তৈরি করে দর্শনার্থীদের মন কেড়ে চলেছেন হাবড়ার বাণীপুরের মনসাবাড়ি এলাকার যুবক বছর সাঁইত্রিশের ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার।

মূল্যবান: সোনা-হিরের সাজে দেবী। ছবি: সুজিত দুয়ারি

মূল্যবান: সোনা-হিরের সাজে দেবী। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৩
Share
Save

কখনও তাঁর প্রতিমা তৈরির উপকরণ সামুদ্রিক জীবাশ্ম। কখনও গাছের ছাল, হোগলাপাতা। কখনও সোনা, হিরে, মুক্তো।

সতেরো বছর ধরে এমনই নানা উপকরণ দিয়ে প্রতিমা তৈরি করে দর্শনার্থীদের মন কেড়ে চলেছেন হাবড়ার বাণীপুরের মনসাবাড়ি এলাকার যুবক বছর সাঁইত্রিশের ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার। এ বার তিনি গড়েছেন তিনটি দুর্গা প্রতিমা। একটি হিরে ও সোনা দিয়ে। দ্বিতীয়টি পাট দিয়ে। অন্যটি দেশিবিদেশি ৩৯ রকম গাছের শুকনো ডাল, পাতা, ছাল, ফুল-ফল দিয়ে।

হিরে ও সোনা দিয়ে তৈরি প্রতিমাটি দেখা যাবে সোদপুরের শহিদ কলোনি সর্বজনীন আয়োজিত পুজোয়। ইন্দ্রজিৎ জানান, ‘‘ওই প্রতিমায় দেবীর উচ্চতা দশ ফুট। এতে সোনা ব্যবহার করা হয়েছে ২২ কেজি।’’

সোনা-হিরের হ্যাপা কম নাকি! যেখানে প্রতিমা গড়়ছেন শিল্পী, সেখানে বসানো হয়েছিল ১৩টি সিসি ক্যামেরা। শিল্পী জেলা পুলিশের কাছে মূর্তি গড়াকালীন তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে একজন অফিসারের নেতৃত্বে পাঁচজন পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়ছিল। তারা এগারোদিন ইন্দ্রজিতের কর্মশালা পাহারা দিয়েছে। এ ছাড়াও হাবড়া থানার পুলিশ শিল্পীর বাড়ি-এলাকায় মোবাইল ভ্যান নিয়ে নিয়মিত টহলও দিয়েছে।

শুধু কি শিল্পীর ‘ওয়ার্কশপে’ই এই প্রহরা? না। তাঁর সোনা-হিরের প্রতিমা যেখানে যাচ্ছে সেই সোদপুরের শহিদ কলোনি সর্বজনীনের তরফেও তাদের মণ্ডপের বাইরে পুলিশি ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রতিমা তৈরির কোনও প্রথাগত শিক্ষা ছিল না ইন্দ্রজিতের। ছোটবেলায় ছবি আঁকা শিখতেও তাঁর প্রবল অনীহা ছিল। বয়স যখন মেরেকেটে দশ-বারো, ছবি আঁকার বড় বোর্ডটিতে ছবি আঁকতে আঁকতে আলস্যে ও অনীহায় ক্রমশ শুয়ে পড়ত সে। বাবা সুভাষ প্রচণ্ড রেগে যেতেন তা দেখে। একদিন ছেলেকে সে জন্য মেরেওছিলেন খুব। সেই ছেলেই পরে প্রতিষ্ঠিত প্রতিমাশিল্পী হলে ছেলেকে সে দিন মারার জন্য তাঁর আপসোস হয়। সেই আপসোস পুরোটা আজও যায়নি।

কী ভাবে শুরু হয়েছিল ইন্দ্রজিতের শিল্পীজীবন?

২০০১ সালে বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে দিঘা বেড়াতে গিয়েছিলেন ইন্দ্রজিৎ। সেখানে হঠাৎই তাঁর নজরে পড়ে সমুদ্রতটে শিল্পীরা সামুদ্রিক নানা উপকরণ দিয়ে মূর্তি তৈরি করছেন। বিষয়টা মনে ধরে যায় তাঁর। তিনি সেই সব মূর্তির ছবি তুলে আনেন।

সেবারই পাড়ার ক্লাবে শামুক, ঝিনুক, শঙ্খ, ইত্যাদি দিয়ে ছোট্ট একটি কালীপ্রতিমা গড়েন। সাড়াও মেলে। রাজ্যের তৎকালীন দমকলমন্ত্রীর নজরে পড়ে প্রতিমাটি। তিনি ইন্দ্রজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে দিয়ে ওই সব সামুদ্রিক উপকরণ সহযোগেই একটি সরস্বতীমূর্তি তৈরির বায়না দেন। গড়া হয় সেই মূর্তি। তারকেশ্বরের একটি লাইব্রেরিতে মূর্তিটি আজও রয়েছে।

ইন্দ্রজিতের দুর্গাপ্রতিমা তৈরির শুরুটা অবশ্য ঠিক পরের বছরে। ২০০২ সালে। সে বারও সামুদ্রিক উপকরণ দিয়ে প্রতিমা গড়েই বনগাঁয় তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আরও নানা উপকরণ দিয়ে প্রতিমা গড়েছেন তিনি। প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি তিনি প্রতিমার সঙ্গে মানানসই মণ্ডপও তৈরি করেন।

জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে ক্রমে ইন্দ্রজিতের প্রতিমা গোটা রাজ্যে পাড়ি দেয়। কলকাতার পুজো উদ্যোক্তারাও তাঁর কাছ থেকে থিমের দুর্গা নিয়ে গিয়েছেন। ত্রিপুরা, অরুণাচলপ্রদেশেও গিয়েছে তাঁর তৈরি ৪ টন ওজনের শ্বেতপাথরের দুর্গা। তবে শিল্পীর নিজের কাছে এখনও সেরা কয়েক বছর আগে তৈরি করা তাঁর মুক্তোর একটি প্রতিমা।

তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ইন্দ্রজিৎ জানান, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা নেই। যখন যেমন ভাবনা আসে, সেই মতো কাজ করি। ভবিষ্যতেও একই ভাবে প্রতিমা তৈরি করব।’’

নিজের কাজ নিয়ে তাঁর কোনও অনুভূতি নেই?

আছে বইকী। তিনি আনন্দ পান, যখন দেখেন, তাঁর তৈরি প্রতিমা দেখতে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। শুধু ভিড়ই জমাচ্ছেন না, তাঁরা মুক্তকণ্ঠে তাঁর কাজের প্রশংসাও করছেন।

Idol Durga Puja Durga Puja 2018 Gold

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}