E-Paper

জলে ডুবেছে আনাজ খেত, ক্ষতির আশঙ্কায় ভাঙড়ের চাষি

জেলায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আনাজ চাষ হয়। এর মধ্যে ভাঙড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০ হেক্টরের বেশি জমির অগ্রিম শীতকালীন আনাজ বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং, মুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৩৪
টানা বৃষ্টিতে ভাঙড়ে ফুলকপি চাষ এ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

টানা বৃষ্টিতে ভাঙড়ে ফুলকপি চাষ এ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে মাঠঘাট, আনাজের খেত। বিভিন্ন এলাকায় জলের তলায় শীতকালীন আনাজ, ধান। প্রবল বৃষ্টির কারণে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং, ক্যাপসিকাম, ঝিঙে, পটল, লঙ্কা, টমেটো-সহ বিভিন্ন ধরনের আনাজের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়, জীবনতলা, জয়নগর, কুলতলি-সহ বিভিন্ন এলাকায় অগ্রিম শীতকালীন আনাজের চাষ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় ফুলকপি, বাঁধাকপি ধরেছে। ভাঙড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় এখনই উঠতে শুরু করেছে সেই কপি। ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের একটি কপির দাম ২৫-৩০ টাকা। পুজোর আগে কপি, পালং, ক্যাপসিকাম-সহ বিভিন্ন আনাজ ওঠার কথা ছিল।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ খেতের বাঁধাকপি, ফুলকপি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আনাজ চাষ হয়। এর মধ্যে ভাঙড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০ হেক্টরের বেশি জমির অগ্রিম শীতকালীন আনাজ বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং, মুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভাঙড়ের চাষি আনোয়ার আলি বলেন, ‘‘ধারদেনা করে এক বিঘা জমিতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করে আউশ ধান, ২৫ কাঠা জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে সব শেষ করে দিল। পুজোর আগেই কপি বাজারে ওঠার কথা ছিল। মহাজনের ধার শোধ করে নতুন করে চাষ করা সম্ভব নয়। এখন কী করব বুঝতে পারছি না!’’

ভাঙড়ের চিলেতলা গ্রামের চাষি কার্তিক মণ্ডল বলেন, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজোয় মায়ের ভোগের জন্য খিচুড়ি রান্না করা হয়। ভোগ রান্নার জন্য ফুলকপি, বাঁধাকপির চাহিদা থাকে ভাল। ওই সময়ে বাজারে ওঠা নতুন কপির দাম ভালই পাওয়া যায়। কিন্তু বৃষ্টি সব শেষ করে দিল। প্রায় এক বিঘা জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে কপি চাষ করেছিলাম। বাজারে ওই কপি উঠলে ৬০-৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হত। সব শেষ হয়ে গিয়েছে। ভেবেছিলাম কপি বিক্রি করে বৌ, বাচ্চাদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেব। কিন্তু তা আর হল না!’’

ভাঙড়ের ৬টি পঞ্চায়েতের ১১৭টি দলের ১৭৫০ জন কৃষককে নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘ভাঙড় ভেজিটেবিল ফার্মাস প্রডিউসার কোম্পানি।’ সেখানকার চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার বলেন, ‘‘টানা বৃষ্টিতে আনাজের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ভাঙড়ের আনাজ কলকাতার ৭০টি সুফল বাংলার স্টলে এবং বিদেশে পাঠানো হয়। চাহিদা অনুযায়ী ভাঙড়ে ইতালিয়ান ও চাইনিজ আনাজও উৎপাদিত হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে চাষিদের ক্ষতি হয়েছে।’’ এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা তথা দেশ-বিদেশে চাহিদা রয়েছে ভাঙড়ের আনাজের। কিন্তু বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানতে পারছি। বহু চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে চাষিদের জন্য কিছু করা যায় কি না, তার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর কৌশিক চক্রবর্তী জানান, বৃষ্টির ফলে অগ্রিম শীতকালীন আনাজ ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাকের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য চাষিদের ‘পলি হাউসের’ মাধ্যমে জলদি জাতের আনাজ চাষের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে বৃষ্টিতে আনাজের ক্ষতি হবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bhangar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy