Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩
Panihati

Pantihati: কাঁধে করে এনে অস্থায়ী শিবিরে শুরু প্রাথমিক চিকিৎসা

পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিত্রটা হঠাৎ এমনই হয়ে উঠেছিল। যা উত্তরোত্তর বাড়তে দেখে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

অসুস্থ হয়ে পড়া এক ব্যক্তিকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

অসুস্থ হয়ে পড়া এক ব্যক্তিকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২২ ০৬:৫১
Share: Save:

হঠাৎই যেন যুদ্ধকালীন তৎপরতা! সাইরেন বাজিয়ে ঢুকছে একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স। রাস্তা ফাঁকা করছেন উত্তেজিত পুলিশকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে কাউকে স্ট্রেচারে, কাউকে আবার হাত-পা ধরে টেনে নামানো হচ্ছে। যাঁদের নামানো হচ্ছে, তাঁদের অনেকেরই জ্ঞান নেই। কেউ অস্ফুটে আবার বলছেন, ‘‘বাবা গো, মা গো।’’ হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও তখন ভিড়ে তিলধারণের জায়গা নেই। দ্রুত তাঁদের দেখার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন চিকিৎসকেরা। কোথাও শয্যা ফাঁকা করার কাজ করা হচ্ছে, আবার কোথাও স্ট্রেচারেই শুইয়ে দিয়ে নাড়ি টিপে দেখা হচ্ছে ‘অবস্থা’।

Advertisement

রবিবার দুপুরে পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিত্রটা হঠাৎ এমনই হয়ে উঠেছিল। যা উত্তরোত্তর বাড়তে দেখে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। রবিবার বেলার দিক থেকে এই বিপত্তির সূত্রপাত হয় পানিহাটির দণ্ডমহোৎসব মেলা ঘিরে লাগামছাড়া ভিড়কে কেন্দ্র করে। ভিড়ের চাপে সেখানে বেলার দিকে পরিস্থিতি কার্যত হাতের বাইরে চলে যায়। ভিড়ের মধ্যে অসুস্থ হতে থাকেন একের পর এক পুণ্যার্থী। পরে অসুস্থ তিন জনকে পানিহাটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া বেশ কয়েক জন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পানিহাটি, সাগর দত্ত হাসপাতাল-সহ আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

এ দিন প্রথমে মা শুক্লা পালের অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে পানিহাটি হাসপাতালে পৌঁছে যান মীনাক্ষী বণিক। সেখানে পৌঁছে মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এর কিছু পরেই জানতে পারেন বেঁচে নেই তাঁর বাবা সুভাষ পালও।

বেলা বাড়তেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে দেখে পানিহাটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক বিশ্বজিৎ দাসের নেতৃত্বে চিকিৎসকের একটি দলকে পাঠানো হয় মেলা প্রাঙ্গণে। মেলা সংলগ্ন পানিহাটি ত্রাণনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে অসুস্থদের চিকিৎসায় একটি অস্থায়ী শিবির তৈরি করা হয়। পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি স্থানীয় একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সরা আসেন ওই অস্থায়ী শিবিরে। সেখানে কাউকে খাটে শুইয়ে, কাউকে স্কুলের ভিতর কোনও মতে রেখেই প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয়।

Advertisement

একটা সময়ে পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে অসুস্থদের ওই শিবিরে নিয়ে আসার জন্য স্ট্রেচারও পাওয়া যাচ্ছিল না। কখনও কাঁধে তুলে, আবার কখনও কয়েক জন মিলে কোনও মতে ধরাধরি করেও শিবিরে আনতে দেখা গেল। অসুস্থ হয়েছেন শুনতে পেলেই রাস্তাতে গিয়েও চলেছিল চিকিৎসা। পরিস্থিতি মাঝে এমন হয় যে রোগী রাখার জায়গাও ছিল না। অস্থায়ী শিবিরে চিকিৎসা চলা এক মহিলা আতঙ্কিত গলায় বলে ওঠেন, ‘‘হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে পড়ে যাই। ওঠার শক্তি ছিল না। কয়েক জন ধরে এখানে নিয়ে আসেন। বাড়ির লোক, বাকিরা কোথায় কিচ্ছু জানি না।’’

ওই অস্থায়ী শিবিরে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সঙ্কটজনক রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল হাসপাতালে। শিবিরের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়েই অসুস্থ হচ্ছেন মানুষ। এখানেই স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।’’

এ দিকে দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতালে আহতদের খোঁজে ভিড় করতে থাকেন আত্মীয়েরা। চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়ে অস্থায়ী শিবিরের বাইরেও ভিড় করেন অনেক আত্মীয়। পরিচিতের হাসপাতালে ভর্তির খবর শুনে সেখানে পৌঁছে যান অনিতা মণ্ডল নামে এক পরিজন। তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার খবর শুনে প্রথমে ওই এলাকার মেডিক্যাল ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে বলে দেওয়া হয় যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পানিহাটি হাসপাতালে দাঁড়িয়ে রয়েছি প্রায় এক ঘণ্টা। এখনও তাঁকে দেখতে পাইনি। আদৌ কি দেখতে পাব?’’ পরে অবশ্য আত্মীয়ের দেখা পেয়ে আশ্বস্ত হন অনিতা। কে, কোথায় ভর্তি আছেন, সেটা জানতে এ ভাবেই চরম ভোগান্তি হয় পরিজনেদের। অসুস্থদের খোঁজে উদ্‌ভ্রান্তের মতো এ দিক-ও দিক ছুটে বেড়াতে দেখা যায় অনেককেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.