Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
শ্যামনগর

প্ল্যাটফর্মের এ মাথা থেকে ও মাথা ঠাসা নানা পসরায়

প্রতিবাদ করলেই মুশকিল। উড়ে আসবে ঝুড়ি ঝুড়ি কটূক্তি। অতএব, ভিড়ের মধ্যে ঠ্যালাগুঁতো খেতে খেতে হকারদের দাবড়ানি শুনেই ট্রেন থেকে ওঠা-নামা করেন শ্যামনগর স্টেশনের নিত্যযাত্রীরা।

ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে স্টেশনের পাশের রাস্তাও। নিজস্ব চিত্র।

ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে স্টেশনের পাশের রাস্তাও। নিজস্ব চিত্র।

বিতান ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০২:৩৩
Share: Save:

প্রতিবাদ করলেই মুশকিল। উড়ে আসবে ঝুড়ি ঝুড়ি কটূক্তি। অতএব, ভিড়ের মধ্যে ঠ্যালাগুঁতো খেতে খেতে হকারদের দাবড়ানি শুনেই ট্রেন থেকে ওঠা-নামা করেন শ্যামনগর স্টেশনের নিত্যযাত্রীরা।

চিত্রটা মূলত ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের। ২ নম্বরে হকার থাকলেও ভিড় ট্রেনে ওঠা-নামায় ততটা সমস্যা হয় না। ৩ আর ৪ অবশ্য তেমন ভিড়ভাট্টা নেই। বরং সকাল-বিকেলে বৃদ্ধদের ভ্রমণ আর বিশ্রামের জায়গা এই প্ল্যাটফর্ম।

কাগজে-কলমে ‘মডেল স্টেশন’ শ্যামনগর। শিয়ালদহ মেন লাইনের এই স্টেশন প্রত্যেক দিন রেলকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা আয় দেয়। তবু শ্যামনগর স্টেশন যাত্রী পরিষেবায় পিছিয়ে। তার অন্যতম কারণ হল, হকার। গুমটি দোকান, ঝাঁকা, ঝুড়ির সারি তো রয়েইছে। ফল, কেক, মিষ্টি থেকে মনোহারি সামগ্রী— এমনকী, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসও মেলে স্টেশনে। দেখলে মনে হবে গোটা একটা বাজার বসেছে।

১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম-লাগোয়া ব্যারাকপুর ঘোষপাড়া রোড। এটি শিল্পাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। স্টেশন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে শ্যামনগর কালীবাড়ি, আর তার পাশে গঙ্গার ফেরিঘাট। ফলে গঙ্গার ও পাড়ের বাসিন্দারাও শ্যামনগর স্টেশনটি ব্যবহার করেন। বিকেলে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আপ ট্রেন ঢোকার পরে অফিস ফেরত যাত্রীদের হুড়মুড়িয়ে নামতে গিয়ে হকারদের ঝাঁকা ঝুড়িতে হোঁচট খেয়ে পড়ার ঘটনা হামেশাই ঘটে। বাইরে টিকিট কাউন্টারের কাছেও যাত্রীদের লাইন দেওয়ার জায়গায় হকারদের ভিড়। ধাক্কাধাক্কি করেই টিকিট কাটতে হয়।

দিন কয়েক আগে বারুইপুরে হকার উচ্ছেদ নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছিল। তার পর দিনই রেল সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানেরা যাত্রী পরিষেবার স্বার্থে হকারদের সরার কথা বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। এই স্টেশনে হকার তুলতে গিয়ে বেশ কয়েকবার নাজেহাল হয়েছে রেল। রেলের আধিকারিকেরা মাঝে মধ্যেই দোকান পিছনোর কথা বলে যান। কিন্তু ওইটুকু মাত্র। তারপর আবার যে কে সেই।

শ্যামনগর রেল স্টেশনে হকার্স ইউনিয়নের নেতা সন্তোষ দেবনাথ বলেন, ‘‘কিছু গরিব পেটের দায়ে হকারি করেন। বিকল্প কর্মসংস্থান নেই। কারও ক্ষতিও তো করেন না। তা হলে অসুবিধা কোথায়? যাত্রীরা সমস্যায় পড়লে এই হকাররাই আগে দৌড়োন।’’ স্টেশনের দু’পাশে ২৩ ও ২৪ নম্বর রেলগেট। দু’দিকেই ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম বরাবর দোকানের সারি। প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে অনেকেই লাইন বরাবর হেঁটে গিয়ে রেলগেট পার হন। লাইনের পাশে হরেক রকমের দোকানে ভিড় জমে সকাল সন্ধ্যা। ট্রেন যায় গা ঘেঁষে। উনিশ-বিশ হলেই মৃত্যু অবধারিত।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই হকারদের পিছনে শাসকদলের নেতাদের মদত আছে। সে কারণে এঁদের কেউ কিছু বলতে পারেন না। সমস্যার মধ্যে দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। শাসকদলের ক্ষমতার কাছে হার মানতে বাধ্য হয় রেলের আইন-কানুনও।

পূর্ব রেলের মোটরম্যানদের অনেকেই জানালেন, শ্যামনগর স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পরে লাইনের ধারে দোকানগুলির জন্য হর্ন বাজাতে বাজাতে যেতে হয় ২৪ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে চা এবং অন্য খাবারের দোকান। সেখানে সাইকেল আর মোটরবাইকের ভিড়। দাঁড় করানো বাইকে সওয়ারীদের আড্ডা। এখানেও প্রশ্ন সেই যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের। টিকিট কাউন্টারের সামনে মশলা মুড়ি, প্লাস্টিকের সরঞ্জাম, আপেল, পেয়ারার ঝুড়ি তবু যাত্রীরা ধৈর্যশীল। শ্যামনগর আতপুরের সজল সরকার, প্রণব বিশ্বাসদের কথায়, ‘‘প্রত্যেক দিন ১০টা-৫টার ডিউটি। ছুটে গিয়ে ট্রেন ধরি। ফেরার পথে কতক্ষণে ঘরে ফিরব সেই তাড়া। হকারদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। আর আমরা বললে প্রত্যুত্তরে গায়ে জল ঢেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।’’

১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম ফল নিয়ে বসেন অসীম দাস। হকারদের রুটি-রুজি নিয়ে সোচ্চার তিনিও। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সব হকার সমান নন। কাল যদি গোটা স্টেশন চত্বর থেকে হকারদের সরিয়ে ফাঁকা করে দেওয়া হয় তাতে হয় তো অনেকের সুবিধা হবে। তবে যাত্রীদের অসুবিধাও হবে। যাওয়া-আসার পথে এই স্টেশন থেকে নিত্যযাত্রীরা সস্তায় বাজার করেন।’’ তা বলে স্টেশনে সকাল সন্ধ্যা যাত্রীদের দাঁড়ানোর জায়গাটুকু কেড়ে নিয়ে বাজার বসবে? অনেক যাত্রীই তা মেনে নিতে নারাজ।

হকারদের দাবি, রেলের জায়গায় বেচাকেনা করার জন্য রেল কাগজে-কলমে কোনও চুক্তি করে না ঠিকই। রেলের আধিকারিক থেকে কর্মীদের একটা অংশ টাকা পয়সা নিয়ে বসার অনুমতি দেয় বলে অভিযোগ। যে জন্য খুব নাড়াচাড়া না হলে হকারদের সরানোর কথা ভাবতে চান না কেউই। ভাবলেও সেটা সাময়িক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hawkers problem station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE