বহু দিন পরে এমন সহজ চলাফেরা ফুটপাথে। বৃহস্পতিবার তোলা ছবি। ইনসেটে, ফুটপাথের আগের চেহারা।
শহরকে যানজটমুক্ত করতে এবং পথচারীদের ফুটপাথ ফিরিয়ে দিতে বুধবার যে উদ্যোগ করেছে ডায়মন্ড হারবারের প্রশাসন ও পুলিশ, তাতে খুশি নাগরিকেরা।
কিন্তু তাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা এ কথাই বলে, হকার উচ্ছেদের কর্মসূচি মাঝে মধ্যে নেওয়া হলেও পরিস্থিতি কিছু দিনের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কয়েক মাস আগে ডায়মন্ড হারবার স্টেশনের হকার উচ্ছেদের পরেও দেখা গিয়েছে, কিছু দিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে গিয়েছে প্রায় সারা প্ল্যাটফর্মই।
ডায়মন্ড হারবারের ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের স্টেশন মোড় থেকে কলকাতার দিকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে জেলা হাসপাতাল। অন্য দিকে, প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, আদালত, পর্যটকন কেন্দ্র। এত দিন স্টেশন থেকে বেরিয়ে জেলা হাসপাতালের দিকে যাওয়ার যে ফুটপাথ ছিল, তার দু’দিকের অংশই হকারদের দখলে চলে গিয়েছিল। পথচারীরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে হাঁটেন। এমনিতেই মূল সড়কে দু’দিকে ভ্যান, অটো, টোটো, সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার উপরে যাত্রীরা পথে নেমে পড়ায় গাড়ি চলাচলের অংশ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে প্রতিদিনের যানজটে পড়াটাই সাধারণ নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
রাস্তার দু’দিকের ফুটপাথে ডালা নিয়ে বসতেন শ’খানেক দোকানদার। পাশাপাশি ছিল বেশ কিছু গুমটি দোকান। সমস্ত কিছু হঠিয়ে দেওয়ায় পরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সুনসান ফুটপাথ। তবে হকারদের দাবি, এ ভাবে সরাসরি পেটে লাথি মারা ঠিক হল না। বিকল্প ব্যবস্থা না করেই তুলে দেওয়া হল। এ নিয়ে পথে নেমে আন্দোলন কথা কিছু ভাবছেন? হকাররা অবশ্য বলছেন, ‘‘উন্নয়নের স্বার্থে আমরা এখনই আন্দোলনের পথে নামছি না।’’
তবে না আঁচালে বিশ্বাস নেই, বলছেন নাগরিকদের অনেকে।
তাঁদের অভিযোগ, এর আগেও বার কয়েক ফুটপাথ থেকে হকারদের তোলা হয়েছে। কিন্তু কয়েক দিন কাটতে না কাটতেই অবস্থা আবার যে কি সেই। শহরের প্রৌঢ় বাসিন্দা শঙ্কর মালাকার, লক্ষ্মী দেবশর্মারা বলেন, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে প্রতিটি ভোটের মুখে হকার উচ্ছেদ বা যানজট সমস্যা মেটানোর প্রতিশ্রুতি সব দলের মুখে শুনে এসেছি। কিন্তু এত দিনেও কেউ পাকাপাকি ভাবে কোনও কথাই রাখেনি। এ বার দেখা যাক কী হয়! রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার অভাবেই হকারেরা প্রশ্রয় পাচ্ছেন বলে মনে করেন শহরবাসীর একটা বড় অংশ। তবে এ বার রাস্তার ধারের যে সব গুমটি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা আগে দেখেননি এলাকার মানুষ। ফলে দখল সরানোর ব্যাপারে প্রশাসন ও শাসক দলের বাড়তি সদিচ্ছা আছে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদারের বক্তব্য, ‘‘মানুষের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে কিছু করা যাবে না। সুস্থ ভাবে চলাচল করুক সকলে, সেটাই লক্ষ্য থাকা উচিত। তবে যে সমস্ত হকারেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে মার্কেট নির্মাণের জন্য জমির সন্ধান চলছে।’’ ফুটপাথ দখলমুক্ত করার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি।
ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, ‘‘এই শহরের মুল সমস্যা যানজট। আর যানজটমুক্ত শহর তৈরি করতে আমরা হকার উচ্ছেদ করেছি। বিভিন্ন গাড়ির পার্কিং কোথায় হবে, তা-ও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফের যদি কোনও হকার ফুটপাথে বসেন, তাঁর জরিমানা বাড়ানো হবে।’’ পাশাপাশি মহকুমাশাসকের আশ্বাস, কেউ যাতে ফের ফুটপাথে বসতে না পারে, সে জন্য নজরদারির ব্যবস্থা থাকছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy