Advertisement
E-Paper

পুকুরের নোনা জলে বাড়ছে ইলিশের চারা

পুকুরে জাল ফেলে মিলছে ইলিশ। তা-ও আবার ডিমভরা! রূপোলি শস্য নিয়ে বাঙালির চিরন্তন আবেগ উস্কে দিয়ে গবেষণার এমনই ফল মিলেছে কাকদ্বীপে।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৭
দিব্যি বাড়বাড়ন্ত ইলিশের। নিজস্ব চিত্র।

দিব্যি বাড়বাড়ন্ত ইলিশের। নিজস্ব চিত্র।

পুকুরে জাল ফেলে মিলছে ইলিশ। তা-ও আবার ডিমভরা!

রূপোলি শস্য নিয়ে বাঙালির চিরন্তন আবেগ উস্কে দিয়ে গবেষণার এমনই ফল মিলেছে কাকদ্বীপে। সৌজন্যে, কেন্দ্রীয় নোনা জলজীব পালন অনুসন্ধান কেন্দ্র (সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অফ ব্র্যাকিশ ওয়াটার অ্যাকোয়া কালচার, সংক্ষেপে সিবা)। তবে যে সব ভোজনরসিক ইলিশের আশায় বছরভর অপেক্ষায় থাকেন, তাঁদের জন্য গবেষকরা জানাচ্ছেন, আপাতত বাজারে দেখা মেলার সম্ভাবনা নেই পুকুরের ইলিশের। আড়াই বছরের গবেষণার এই ফসল নেহাতই পরীক্ষামূলক।

তবে পুকুরে ইলিশ চাষের এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজ্য মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান সোমেন সাহু। তাঁর কথায়, ‘‘এই পদ্ধতি এখনও অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক না হলেও অদূর ভবিষ্যতে বাঙালির পাতে ইলিশের আকাল মেটাতে পারে।’’ মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও বলেন, ‘‘কাকদ্বীপের পুকুরে কেন্দ্রীয় সংস্থার ইলিশ চাষ নিঃসন্দেহে ভালে উদ্যোগ। আগামী দিনে এখানে ডিম ফুটিয়ে ইলিশের বাচ্চা জন্মানো শুরু হলে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।’’

বুধবার কাকদ্বীপে ওই সংস্থায় গিয়ে দেখা গেল, প্রায় ৯০০ বর্গমিটারের একটি পুকুরে চাষ হয়েছে ইলিশ। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বাজার থেকে এক গ্রাম ওজনের খুদে চারা সংগ্রহ করে গবেষণা কেন্দ্রে আনাই ছিল সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। তবু নদীতে জন্মানো প্রায় ৮০০ মাছের চারা জোগাড় করে ছাড়া হয় নোনা জলের পুকুরে। বিশাল ওই পুকুরে কৃত্রিম স্রোত তৈরির ব্যবস্থা আছে। পাম্প চালিয়ে বুদবুদ তৈরি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অপ্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বিভিন্ন সময়ে ইলিশের গায়ে হরমোন ইঞ্জেকশন দিতে হয়েছে। মূলত প্রাণিকণা, উদ্ভিদকণা খায় ইলিশ। মাছের পাকস্থলী পরীক্ষা করে তাদের পেটে সহ্য হয়, এমন খাবারও তৈরি করা হয়েছে গবেষণাগারে।

আড়াই বছরের সেই যত্নআত্তির ফলে গায়ে-গতরে বেড়েছে ইলিশের বংশ। গড়ে ৪২৩ গ্রাম ওজন এখন তাদের, জানালেন বিজ্ঞানীরা। শুধু তা-ই নয়, কয়েকটি ইলিশের পেটে ডিমও এসেছে। সেই ডিম ফুটিয়ে চারা বের করা এ বার বিজ্ঞানীদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। সংস্থার বিজ্ঞানী দেবাশিস দে বলেন, ‘‘যে ৮০০ চারা ছাড়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ মাছ বেঁচে রয়েছে।’’

সংস্থার অধিকর্তা কেকে বিজয়নের দাবি, পুকুরে এমন ইলিশ প্রতিপালন করে বড় করে তোলার নজির ভারতে এই প্রথম। তবে পুকুরে ইলিশ প্রতিপালনের খরচ এখনও নির্ধারণ করে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। আরও নানা কারণে ব্যবসায়িক ভাবে প্রকল্প কতটা সফল হতে পারে, সে সব চিন্তাও আপাতত মাথায় নেই তাঁদের।

কিন্তু স্বাদ কেমন হবে পুকুরের ইলিশের?

সেটাও আপাতত ভাবতে রাজি নন গবেষকেরা। সৃষ্টির আনন্দেই মজে তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে পদ্মা-গঙ্গার প্রবাদপ্রতিম রুপোলি ফসলের ঘাড়ে এখনই শ্বাস ফেলছে না পুকুরের ইলিশ!

সহ প্রতিবেদন: মেহবুব কাদের চৌধুরী

Hilsa Pond Kakdwip
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy