Advertisement
০৪ জুন ২০২৪
চলছে খুচরো ব্যবসাও
Heroin

বনগাঁয় ‘হোম ডেলিভারি’ হেরোইনের

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাঁদের প্রতিরোধে প্রকাশ্যে হেরোইনের বিক্রি অনেকটাই বন্ধ হয়েছিল। আবার ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২১ ০৬:২৪
Share: Save:

দেশলাই কাঠির ওজনের সমপরিমাণ হেরোইনের দাম ২০০ টাকা। ঠিক লোককে চিনে মোবাইলে বরাত দিলে ঘরে পৌঁছে যাবে সেই মাদক। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে যোগসূত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির। তার সন্ধান মিললেই কেল্লা ফতে। করোনা-আবহে বনগাঁর অনেক জায়গাতেই চলছে মাদকের ‘হোম ডেলিভারি’। পুলিশ এই তথ্য জানে না, এমনটা নয়। অভিযানও চলে। তবু পাকাপাকি বন্ধ হয় না কারবার।

দিন কয়েক আগের ঘটনা। বনগাঁর মতিগঞ্জ হাট এলাকায় হেরোইনের খুচরো কারবারি এক যুবককে ‘পুরিয়া’ দিতে এসেছিল। বাসিন্দারা তাদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। বনগাঁ শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় এখন নতুন করে হেরোইনের খুচরো কারবার শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। কারবারিদের একাংশও নেশায় আসক্ত।

পুলিশের দাবি, নিয়মিত ধরপাকড় করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাঁদের প্রতিরোধে প্রকাশ্যে হেরোইনের বিক্রি অনেকটাই বন্ধ হয়েছিল। আবার ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে। বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘হেরোইন কারবারি ও নেশাসক্তদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে মানুষকে সচেতনও করা হচ্ছে।’’

শনিবার ছিল বিশ্ব মাদক বিরোধী দিবস। বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রচারে যোগ দেন বহু তরুণ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন একদল, যাঁরা অতীতে নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। এখন সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছেন। জোটবদ্ধ হয়ে তৈরি করেছেন ‘বনগাঁ রিকভারিং গ্রুপ’। পঁচিশ সদস্যের এই সংগঠন এখন মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর কাজ করছেন। চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের বন্দোবস্তও করছেন। ২০১৬ সালে সংগঠনটি তৈরি হয়েছিল জনা পাঁচেক যুবককে নিয়ে। ধীরে ধীরে সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। কারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছেন, তাদের খুঁজে বে র করেন সংগঠনের সদস্যেরা। তারপরে শুরু হয় চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং। নেশামুক্তি কেন্দ্রে চলে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ। পুলিশ-প্রশাসনও সাহায্য করছে। অনেকেই নেশা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। তাঁদেরই অনেকে মাদকে আসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর কাজে সামিল হচ্ছেন।

এ দিন সকাল থেকে বনগাঁ শহরে মাদকের বিরুদ্ধে ওই যুবকেরা প্রচারে নামেন। পথচারী ও যানচালকদের মধ্যে সচেতনতার প্রচার করেন। লিফলেট বিলি করা হয়। প্রচার চলে মাইকেও। বনগাঁ থানার উদ্যোগে মাদক-বিরোধী পদযাত্রায় যোগ দেন অনেকে। প্রচারে ওই যুবকেরা নিজেদের জীবনের কাহিনী তুলে ধরেন। সংগঠনের তরফে সংকর্ষণ আচার্য বলেন, ‘‘নেশা করে একটা সময়ে আমরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম। পরিচিতরা আমাদের দেখলে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। কোনও সম্মান ছিল না। আমাদের সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি।’’

সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত দেবাশিস দে, প্রথম পাল, রতন হালদার, কালাম মণ্ডল, পাপিন সরকাররা এক সময়ে হেরোইন ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রথম দিকে বন্ধুরা বিনামূল্যে তাঁদের মাদক জোগান দিতেন। আসক্ত হওয়ার পরে মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে কেউ বাড়ির জিনিসপত্র, গয়না চুরি করে বিক্রি করেছেন। এ নিয়ে বাড়িতে অশান্তি লেগেই থাকত। দেবাশিস ও প্রথমদের কথায়, ‘‘ওই সময়ে পাড়া-প্রতিবেশীরা কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন না। বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না। নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা করিয়ে এখন সুস্থ জীবনে ফিরেছি। মানুষের থেকে ভাল ব্যবহার পাচ্ছি।’’ সংকর্ষণের কথায়, ‘‘মাদকাসক্ত নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য চুরির মতো অপরাধ করে। চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং করিয়ে ওদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Heroin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE