Advertisement
E-Paper

Honey Collection: মধু সংগ্রহে জঙ্গলে স্বামী, বিধবার বেশে বাড়িতে স্ত্রী

মধু সংগ্রহে যাওয়া মউলেদের স্ত্রীরা বাড়িতে নানা নিয়মকানুন পালন করেন এই সময়ে। অনেকে বিধবার বেশে থাকেন একদিন।

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৩৩
অপেক্ষা: রওনা দেবেন মউলেরা।

অপেক্ষা: রওনা দেবেন মউলেরা। নিজস্ব চিত্র।

করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে গত দু’বছর সুন্দরবনের জঙ্গলে মধু সংগ্রহ বন্ধ ছিল। এ বার অবশ্য বন দফতরের অনুমতি নিয়ে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। শুক্রবার থেকেই মধুর খোঁজে জঙ্গলে যাত্রা শুরু করেছেন মউলেরা।

বন দফতর সূত্রের খবর, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সজনেখালি ও বসিরহাট রেঞ্জ থেকে ৪৩টি দলকে এ বার মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দলে ৫-১১ জন করে মউলে রয়েছেন। সব মিলিয়ে ৩৪০ জন মধু সংগ্রহের কাজ করবেন। বসিরহাট রেঞ্জ থেকে ১৪৫ জন ও সজনেখালি রেঞ্জে থেকে ১৯৫ জন মউলে ইতিমধ্যেই মধু সংগ্রহ করতে রওনা দিয়েছেন সুন্দরবনের গভীরে। প্রাথমিক ভাবে ১৫ দিনের জন্য মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে সংগৃহীত মধু বন দফতরের কাছে জমা দিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য মধু সংগ্রহ করতে রওনা দিতে পারবেন মউলেরা।

এ বার ভাল মধু মিলবে বলে আশাবাদী মউলেরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, মূলত চৈত্র-বৈশাখ মাসই সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের মরসুম। এই সময়ে সুন্দরবনের খলসে গাছে ফুল আসে। এই খলসে ফুলের মধুই সব থেকে সুস্বাদু বলে দাবি মউলেদের। সুন্দরবনের নদী-খাঁড়ির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়ে মৌমাছির গতিবিধি লক্ষ্য করেন মউলেরা। এরপরে নদীর পাড়ে নৌকো বেঁধে মৌমাছির পিছু নিয়ে গভীর জঙ্গলে চলে মৌচাকের খোঁজ। মৌচাকের সন্ধান পেলেই কাঁচা হেতাল গাছের পাতা সংগ্রহ করে, তা দিয়ে মশাল বানিয়ে ধোঁয়া তৈরি করে মৌমাছি তাড়িয়ে চাক কাটা হয়।
রীতি অনুযায়ী, প্রথম সংগৃহীত মধু জঙ্গলের পূর্বদিকের একটি গাছের গোড়ায় বনবিবিকে নিবেদন করা হয়।

দলের এক একজনের এক একটা আলাদা দায়িত্ব থাকে। যিনি চাকের খোঁজ করেন, তিনি টানা জঙ্গলের উপরের দিকে নজর রাখেন। সেই সময়ে যাতে বাঘ বা কোনও হিংস্র জন্তু তাঁকে আক্রমণ করতে না পারে, সে দিকে খেয়াল রাখেন দলের অন্যেরা। অনেক সময়ে জঙ্গলের মধ্যে মৌচাক খুঁজতে গিয়ে একে অন্যের থেকে দূরে চলে গেলে যোগাযোগ রক্ষায় নিজস্ব সংকেত ব্যবহার করেন মউলেরা।

মধু সংগ্রহে যাওয়া মউলেদের স্ত্রীরা বাড়িতে নানা নিয়মকানুন পালন করেন এই সময়ে। অনেকে বিধবার বেশে থাকেন এ ক’দিন। স্বামী বাড়ি ফিরলে আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করেন। ঝড়খালির বাসিন্দা সুশীলা জানা বলেন, ‘‘বিয়ের পরে প্রায় পঁচিশ বছর কেটে গেল। স্বামী জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করতে গেলে এই ভাবেই আমরা কয়েকটা দিন কাটাই, যাতে জঙ্গলে গিয়ে ওঁর কোনও বিপদ না হয়। পূর্বপুরুষের এই রীতি মেনে চলছি।’’

সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বার বার বাঘের হামলার ঘটনা ঘটছে। মধু সংগ্রহের ক্ষেত্রে সেই বিপদের আশঙ্কা আরও বেশি। বন দফতর সূত্রের খবর, মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনও বিপদ ঘটলে ১ লক্ষ টাকা বিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশপাশি এ বার মউলেদের জন্য বন দফতরের তরফে জনপ্রিয় স্প্যানিশ সিরিজ় মানি হাইস্টের সালভাদর দালি মুখোশের আদলে বিশেষ মুখোশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাক থেকে মধু ভাঙা বা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে মাথার পিছন দিকে সাধারণত মুখোশ বেঁধে রাখেন মউলেরা। বাঘ-সহ বন্য জন্তুদের দূরে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবস্থা চলছে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর জোনস জাস্টিন জানান, প্রতিবারই মুখোশ দেওয়া হয় মউলেদের। এ বার পরিকল্পনা করেই সালভাদর দালির প্রচলিত মুখোশে কিছু পরিবর্তন এনে আরও ভয়ানক চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বাঘ বা অন্য জন্তু কাছে চলে এলেও মুখোশ দেখে যাতে ভয় পায়, সে কথা মাথায় রেখেই মুখোশ ডিজ়াইন করা হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

Sundarbans Honey Collectors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy