তখনও নেভেনি আগুন। ছবি: দিলীপ নস্কর।
পুর এলাকার ঘনবসতিপূর্ণ অংশেই চলছিল বেআইনি বাজি কারখানা। যেখানে আগুন লেগে বুধবার পুড়ে মারা গেলেন বাড়িরই ছেলে অভিনন্দন মণ্ডল (২১)। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তাঁর বাবা বাবলুবাবুও।
এ দিন সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ডায়মন্ড হারবারের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর হাজিপুর রাজাপা়ড়ায়। প্রায় কুড়ি বছর ধরে ওই বাড়িতে নানা মরসুমে বাজি বানানোর কাজ করে আসছিলেন বাবলুবাবু। পুর কর্তৃপক্ষের তা অজানা ছিল না বলে দাবি স্থানীয় মানুষজনের। এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের দেবকী হালদারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন কেটে দেন। উপ পুরপ্রধান পান্নালাল হালদার বলেন, ‘‘এখন রক্ষাকালী পুজোর মরসুম। অনেক পাড়াতেই বাজি তৈরি হয় এই সময়ে। তবে ওখানে রীতিমতো বাজি কারখানা ছিল, তা আমাদের জানা ছিল না।’’
পুলিশ জানিয়েছে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ছাত্রের দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ওই বাজি কারখানাটির বৈধ কাগজপত্র নেই। বাবলুবাবু সুস্থ হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হাসপাতালে শুয়ে বাবলুবাবু অবশ্য এ দিন জানিয়েছেন, বিড়ির আগুন থেকেই এই ঘটনা।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ঘরের ভিতর থেকে তখনও গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বারুদের গন্ধে বাতাস ভারী। বিস্ফোরণের অভিঘাতে দেওয়ালে ফাটল ধরেছে।
ডায়মন্ড হারবারের ফকিরচাঁদ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন অভিনন্দন। এলাকার অনেকেই জানালেন, ভদ্র ও মিশুকে স্বভাবের ছিলেন অভিনন্দন। সারাক্ষণ খেলাধূলা, পড়া নিয়েই থাকতেন।
বুধবার সকালে একটি ফোন আসে তাঁর মোবাইলে। এরপরেই ঘরে ঢুকে জামা-কাপড় বদলাচ্ছিলেন তিনি। সে সময়ে ঘরের সামনে রাখা বাজির স্তূপে কোনও ভাবে আগুন ধরে যায়। ঝলসে যান অভিনন্দন। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে পুড়ে যান বাবাও।
প্রতিবেশীরা দু’জনকে উদ্ধার করে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান ওই যুবক।
স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, সামনেই রক্ষাকালী পুজো। বছরের এই সময় ছাড়াও বিভিন্ন মরসুমে বাজি তৈরি করেন বাবলু। এক সময়ে বজবজে বাজি কারখানায় সেই কাজ শিখেছিলেন তিনি। তবে বাজি তৈরির পাশাপাশি মাছের মরসুমে নগেন্দ্র বাজারে মাছের আড়তে শ্রমিকের কাজও করেন তিনি। বাড়িতে বাজি কারখানা চালালেও ওই প্রৌঢ় সে কাজে কখনও অভিনন্দনকে হাত লাগাতে দেননি। বাড়ির অদূরে মাঠে বাজি পরীক্ষার সময়েও ছেলেকে কখনও সঙ্গে রাখতেন না। কিন্তু তারপরেও এড়ানো গেল না বিপর্যয়! বাবলুবাবুর বাড়ির দু’টি ঘরে প্রচুর মশলা মজুত ছিল। এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ বাড়ির বারান্দায় বসে বিড়ি খাচ্ছিলেন তিনি। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিনন্দনের একটা ফোন আসে। তারপরেই সে জানায়, কলেজে বেরোবে। ঘরে চলে যায় পোশাক বদলাতে। এমন সময়ে দরজার সামনে রাখা বাজিতে আগুন লেগে যায়। কালো ধোঁয়া ভরে যায় সারা ঘরে। আগুন লাগার পরেই ঘরে ও বাইরে মজুত বাজিতে আগুন লেগে বিকট শব্দ হতে শুরু করে।
ছেলে ঘরে আটকে পড়েছে বুঝে বাবলুবাবু তাকে উদ্ধারের জন্য আগুন-ধোঁয়া উপেক্ষা করেই ঘরে ঢুকে পড়েন। ততক্ষণে বিকট শব্দ পেয়ে ছুটে এসেছেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা দেখেন, বাবা-ছেলে জ্ঞান হারিয়ে উঠোনে পড়ে রয়েছেন। খবর যায় পুলিশ ও দমকলের কাছে। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy