Advertisement
E-Paper

সমিতির নামে চলছে বেআইনি কারবার

বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় গেলে চোখে পড়বে ওই কারবার। সাধারণ মানুষের কথায়, ওইগুলির পোশাকি নাম ‘সমিতি’। বিভিন্ন এলাকায় পাড়ার কয়েক জন যুবক মিলে খুলে বসেছেন এ রকম এক একটি সমিতি।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪৩
এ রকম নানা জায়গা থেকেই চলে লেনদেন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

এ রকম নানা জায়গা থেকেই চলে লেনদেন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সন্ধ্যা হলেই দেখা যায় কয়েক জন যুবক চেয়ার-টেবিল নিয়ে পাড়ার নির্দিষ্ট একটি জায়গায় এসে বসে পড়ছেন। কোথাও কোথাও য‌ুবকেরা অস্থায়ী গুমটি ঘরও খুলে ফেলেছেন। চলছে টাকা-পয়সার হিসাব রাখার কাজ। কে টাকা নিয়ে গেল, কে দিনের সুদের টাকা ফেরত দিল আর কে দিল না— চলছে এই সব হিসেব-নিকেশ।

বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় গেলে চোখে পড়বে ওই কারবার। সাধারণ মানুষের কথায়, ওইগুলির পোশাকি নাম ‘সমিতি’। বিভিন্ন এলাকায় পাড়ার কয়েক জন যুবক মিলে খুলে বসেছেন এ রকম এক একটি সমিতি। সমিতির সদস্যেরা নিজেদের টাকা দিয়ে প্রথমে একটি তহবিল গড়েন। পরে তা থেকে চড়া সুদে মানুষকে ঋণ দেন।

ওই কাজের জন্য ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা সমিতিগুলির কাছে সরকারি কোনও নথিপত্র থাকে না বলেই সাধারণ মানুষের অভিযোগ। স্টেট ব্যাঙ্কের বনগাঁ শাখার মুখ্য ম্যানেজার প্রসীদ চট্টোপাধ্যায়ের আবেদন, ‘‘কোথাও টাকা রাখার আগে বা কোথাও থেকে ঋণ নেওয়ার আগে সাধারণ মানুষের জেনে নেওয়া উচিত, ওই সংস্থার আরবিআই বা সেবির অনুমোদন রয়েছে কি না। কারণ, পরবর্তী সময়ে সংস্থা উঠে গেলে সরকার কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমা জুড়ে ওই রকম কয়েকশো সমিতি রয়েছে। কী ভাবে তারা কাজ করে?

জানা গেল, কোনও সমিতিতে টাকা জমা রাখা যায়। কোনও সমিতি ঋণ দেয়। কোনও সমিতি আবার টাকা জমা নেওয়া ও ঋণ দেওয়া দু’টিই করে। বনগাঁর একটি সমিতি সূত্রে জানা গেল, কেউ ১০০০ টাকা ঋণ নিলে, তাঁকে পরবর্তী ৫৫ দিনে প্রতিদিন ২০ টাকা করে শোধ করতে হবে। একদিন টাকা দিতে না পারলে, পরের দিন তাঁকে বাড়তি ১০ টাকা দিতে হবে। দু’দিন টাকা দিতে না পারলে পরের দিন দিতে হবে অতিরিক্ত ২০ টাকা। বিভিন্ন সমিতির ঋণের হার অবশ্য অন্য রকম।

ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে এ রাজ্যে নানা বিপর্যয় অতীতে ঘটেছে। তার পরেও কিছু মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে যে কোনও সচেতনতা আসেনি, ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার ‘বনগাঁ-পেট্রাপোল সীমান্ত উন্নয়ন সমিতি’র অবৈধ আর্থিক কাজকর্ম প্রকাশ্যে আসার পরে সেটাই প্রমাণিত হল। অতীতে যাঁরা বিভিন্ন ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন, তাঁরা এবং এলাকার কয়েকজন বেকার যুবক এই সব সমিতি খুলে বসছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

ছয়ঘরিয়ার পঞ্চায়েত প্রধান জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে আমরা সমিতিতে টাকা না রাখতেই পরামর্শ দিই। তার পরেও কিছু গরিব, নিরক্ষর মানুষ অতিরিক্ত লোভ করে সমিতিতে টাকা রাখেন, সেখান থেকে ঋণ নেন।’’

বাসিন্দারা জানালেন, গ্রামের নিরক্ষর মানুষের পক্ষে সব সময়ে ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে গিয়ে টাকা জমা দেওয়া বা ঋণ নেওয়া সম্ভব হয় না। তাঁরা বাড়ির কাছের সমিতি থেকেই ওই সব কাজ করে থাকেন।

বনগাঁ সীমান্ত এলাকায় নানা বেআইনি আয়ের পথ খোলা আছে। সে সব কালো টাকা অনেকে এ ধরনের সমিতিতে রাখাই পছন্দ করেন বলেও জানাচ্ছেন বহু মানুষ। কারণ, সে টাকা ব্যাঙ্ক-পোস্ট অফিসে গচ্ছিত রাখতে গেলে নানা সমস্যা হতে পারে।

money laundering business money laundering Illegal business Bongaon
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy