Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পরীক্ষার দাম বাড়ছে দালালদের চক্করেই

খরচ ২৫ টাকা। রোগীর পরিবারকে দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। ল্যাবরেটরির লভ্যাংশ বাদ রেখেও বাড়তি বেশ কিছু টাকা গুণতে হচ্ছে রোগীকে। মাঝের টাকাটা খেয়ে যাচ্ছে দালালেরা।

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ০১:১৬
Share: Save:

খরচ ২৫ টাকা। রোগীর পরিবারকে দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। ল্যাবরেটরির লভ্যাংশ বাদ রেখেও বাড়তি বেশ কিছু টাকা গুণতে হচ্ছে রোগীকে। মাঝের টাকাটা খেয়ে যাচ্ছে দালালেরা।

কাকদ্বীপের বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির সম্পর্কে এই অভিযোগ উঠছে। কোথাও কোথাও পরিকাঠামোও বেশ খারাপ। সেখানে ঠিকঠাক পরীক্ষার ফলাফল আসা নিয়েও সংশয় আছে অনেকেরই। কিন্তু উপায় কী, শহর কলকাতা থেকে দূরবর্তী এলাকা হওয়ায় এই সব ল্যাবের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

কিছু দিন আগেই কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতাল-সংলগ্ন একটি ল্যাবরেটরি বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সেখানে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিসমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিকাঠামো ছিল না। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ল্যাবকর্মীরও অভাব ছিল।

ইসিজি, ইউএসজির, এক্স-রে’র মতো কিছু টেস্ট কাকদ্বীপেই হয়। সেগুলিতে দালালদের জন্য অলিখিত ভাবে কমবেশি ৫০ শতাংশ রেট বাঁধা। গ্রামাঞ্চলের হাতুড়ে ডাক্তার, ফড়েরা বেশিরভাগ সময়ই এই সমস্ত ল্যাবগুলিতে রোগী ‘রেফার’ করে রোজগারের পাকাপাকি পথ বানিয়েছে। এ রকমই একটি ল্যাবের ম্যানেজার প্রবীর দাস জানালেন, ‘‘কমিশন প্রথায় সকলেই চলছে। সেখানে আমি যদি কমিশন কমিয়ে দিয়ে রোগীর পরিবারের সহায়তা করি, পর দিন থেকে আমার এখানে আর কোনও নমুনাই কেউ পাঠাবে না।’’ লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ হয়নি বলে আপাতত এই ল্যাবে কিছু টেস্ট বন্ধ রয়েছে।

কাকদ্বীপে প্রায় ২২টি ল্যাব ও রোগনির্ণয়কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলির বেশিরভাগই কলকাতার কোনও বড় ল্যাবের অনুমোদিত নমুনা সংগ্রহকারী কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। তিন-চার হাত ঘুরে সেই নমুনা পৌঁছয় কলকাতার ল্যাবগুলিতে।

তবে এই কমিশনপ্রথা চালু করার জন্য অনেকেই কলকাতার বড় ল্যাবগুলির প্রলোভনের দিকে আঙুল তুলছেন। কারণ, অনুমোদিত নমুনা সংগ্রহের নামে আদপে কমিশনভিত্তিক ব্যবসাই চলছে রোগনির্ণয় নিয়ে। প্যাথল্যাব চালানো একাধিক ম্যানেজার বা মালিকের দাবি, এটাকে কেউ দালালি চক্র বললে তা কলকাতার বড় ল্যাবগুলিই তৈরি করেছে। আয়ের সুযোগ থাকলে মধ্যসত্ত্বভোগীরা তা ছাড়বে কেন?

কাকদ্বীপের একটি বড় ল্যাব এবং নমুনা সংগ্রহকেন্দ্রের মালিক কুমারবাবু সরকার বলেন, ‘‘আমাদের সব কাগজপত্র ঠিকঠাক। আমরা যে কমিশনে কাজ করছি, বেআইনি অনেক ল্যাব সেই টাকাই আয় করছে। অথচ, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?’’

কলকাতায় নমুনা পাঠানোর কারণ হিসেবে অনেকই দাবি করছেন, ল্যাব চালাতে গেলে নিয়মিত ভাবে যে রোগী হওয়া দরকার, তা হয় না। তাই মেশিন কিনে, অন্যান্য সরঞ্জাম কিনে ওই সব টেস্ট এলাকায় করালে তার খরচ উঠছে না।

রক্ত, মল মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করে কলকাতায় পাঠাতে হলে যে মানের বহন ব্যবস্থা থাকা উচিত, তা সব জায়গায় মানা হয় না বলেও অভিযোগ।

ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছেন, ল্যাবগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। কয়েকটি সিল করা হয়েছে, কয়েকটিকে নোটিসও পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আবার অভিযান চালানো হবে।

নমুনা সংরক্ষণ

জেলা থেকে রক্ত-বীর্য-মল-মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করে শহরের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো খুব সহজ কাজ নয়। কিছু নমুনা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ল্যাবরেটরিতে পৌঁছনো জরুরি। যেমন প্লেটলেট। নমুনা সংরক্ষণ করে পাঠানোর ক্ষেত্রে আইসপ্যাক বা ড্রাই আইস ব্যবহার করা দরকার। কোন ধরনের ভায়েলে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে, তা-ও অনেক সময়ে পরীক্ষার গুণগত মান বদলে দিতে পারে। অনেক সময়ে দেখা যায়, নমুনা সংগ্রহের ৮-১০ ঘণ্টা পরে ল্যাবরেটরিতে পৌঁছচ্ছে সে সব। রোগী জানতেও পারছেন না, ওই নমুনা ব্যবহার করে ফলাফল কতটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। আর তার ভিত্তিতে চিকিৎসাও সঠিক না হতে পারে। তথ্য: স্বাস্থ্য দফতর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE