খালি মাথায় তেল দেওয়া বন্ধ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানোর রোগটা ক্রমশ নির্মূল হচ্ছে বনগাঁয়। তবে ব্যতিক্রমও কিছু কিছু চোখে পড়বে। পুলিশ কর্তাদের আশা, লাগাতার অভিযান চলতে থাকলে একটা সময় এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়বে। হেলমেট পরাটা অভ্যেসে দাঁড়াবে। তখন আইনের শাসন নয়, নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবেই হেলমেট ব্যবহার করবেন দু’চাকা গাড়ির চালক ও আরোহীরা।
এ সংক্রান্ত নির্দেশ আগেই ছিল। কিন্তু এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ আরও কড়া। হেলমেট ছাড়া পেট্রোল পাম্পে তেল মিলবে না। কিন্তু বনগাঁর যশোর রোড, বনগাঁ-চাকদহ রোড, বনগাঁ-বাগদা রোড-সহ বিভিন্ন জায়গার বাইক-চালকদের অনেকের মাথায় হেলমেট দেখা গেলেও অনেকে আবার তার পরোয়া করছেন না বলেও চোখে প়ড়ছে। কেউ কেউ আবার রাস্তায় পুলিশ দেখলে পথ বদলে নিচ্ছেন।
এসডিপিও (বনগাঁ) অনিল রায় জানিয়েছেন, হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোটা আত্মহত্যার প্রচেষ্টা, এটাই মানুষকে বোঝানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে পুলিশকর্মীরা আরও উৎসাহ নিয়ে হেলমেট ছাড়া বাইক চলাচল বন্ধ করতে নেমে পড়েছেন।
আগে অবশ্য শহরের ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ অন্য রকম। বাইক-চালকদের হেলমেটের বালাই ছিল না। পুলিশি ধড়পাকড়ও ছিল কম। জানুয়ারি মাসে এসডিপিও মহকুমার চারটি থানাকে হেলমেটহীন বাইক চালক এবং আরোহীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশের পক্ষে অভিযান শুরু হয়। সাফল্যও আসছিল। নির্বাচনের সময়ে অনিলবাবু বদলি হয়ে যান। পুলিশও ভোটের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন মানুষের মধ্যে ফের হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর ঝোঁক বাড়ে। নির্বাচনের পরে অনিলবাবু ফের এসডিপিও পদে যোগ দিয়ে হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর উপরে নজরদারি শুরু করেন। বাইক-চালকদের সচেতন করতে মাইকে প্রচারও চালানো হয়। সিভিক ভলান্টিয়াররা হেলমেটহীন আরোহীদের রাস্তা আটকে সচেতন করারও চেষ্টা করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত মহকুমায় বাইকের বিরুদ্ধের ৮১৫টি মামলা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। বিনা হেলমেটে মোটরবাইক চালানো, বেপয়োরা ভাবে চালানো এবং বাইকে তিন জন নিয়ে যাওয়া হলেই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। মহকুমার সর্বত্র চলছে বিশেষ তল্লাশি। শুধুমাত্র বনগাঁ থানা এলাকাতেই রোজ পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মিলিয়ে ৭৫ জন রাস্তায় নেমেছেন। ইতিমধ্যেই চিকিৎসক, আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সকলেই হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর জন্য পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। হেলমেটহীন অনেক চালককে আটকে পুলিশ দেখেছে, তাঁদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, জাল লাইসেন্স রয়েছে বা গাড়ির প্রয়োজনীয় নথিপত্র নেই।
পেট্রোল পাম্পগুলি ইতিমধ্যেই ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ নির্দেশমতো কাজ শুরু করেছে। শহরের হেলমেট বিক্রেতা বিশ্বনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এক মাসে হেলমেট বিক্রি বেড়ে ৫০ থেকে ৫০০ হয়েছে। আগে শহরের চালকেরা হেলমেট কিনতেন। এখন গ্রাম থেকেও এসেও বাইক-চালকেরা হেলমেট কিনছেন।’’ শহরের একটি পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষের তরফে বিশু দাস বলেন, ‘‘পুলিশের নির্দেশের পর কাউকে হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy