Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বসিরহাটের চিঠি

ঢিমেতালে চলা মার্টিন রেলের আমল পিছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে শহর বসিরহাট। মার্টিন বার্ন রোড এখনও পুরনো দিনের স্মৃতি বহন করে। কিন্তু এখন শহরের ভোল বদলাচ্ছে দিন দিন। শুরু হয়েছে বহুতল নির্মাণও। কিন্তু অপরিকল্পতি ভাবে বেড়ে ওঠা শহরকে যানজট মুক্ত করার কোনও ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। জেলখানার পাশে বোটঘাট হয়ে মিলনি সিনেমার পিছন থেকে পুরাতন বাজার ছুঁয়ে ইছামতী নদীর দক্ষিণ অববাহিকা ধরে মাইল তিনেক একটা রাস্তা তৈরি করতে পারলে যানজট অনেকটাই কমত।

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

বসিরহাটকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হোক

ঢিমেতালে চলা মার্টিন রেলের আমল পিছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে শহর বসিরহাট। মার্টিন বার্ন রোড এখনও পুরনো দিনের স্মৃতি বহন করে। কিন্তু এখন শহরের ভোল বদলাচ্ছে দিন দিন। শুরু হয়েছে বহুতল নির্মাণও। কিন্তু অপরিকল্পতি ভাবে বেড়ে ওঠা শহরকে যানজট মুক্ত করার কোনও ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। জেলখানার পাশে বোটঘাট হয়ে মিলনি সিনেমার পিছন থেকে পুরাতন বাজার ছুঁয়ে ইছামতী নদীর দক্ষিণ অববাহিকা ধরে মাইল তিনেক একটা রাস্তা তৈরি করতে পারলে যানজট অনেকটাই কমত। বসিরহাট পুরসভার ২৩টি ওয়ার্ডে ১-৪ এবং ১৯-২৩ এখনও গ্রামীণ এলাকার রূপেই থেকে গিয়েছে। কৃষি এলাকা বললেও ভুল বলা হবে না। মোটর ভ্যান বা ভ্যান রিকশা ছাড়া যোগোযোগের কোনও মাধ্যম নেই। ইছামতী সেতু থেকে ত্রিমোহিনী ছুঁয়ে টাকি রোড বরাবর আমতলা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেলেপাড়া হয়ে ইছামতী সেতু পর্য়ন্ত শহর ঘিরে চক্রাকার একটি নতুন রুট চালু করা যেতে পারে। সেই পথে অটো বা ম্যাজিক গাড়ি চললে বহু মানুষ উপকৃত হবে। তাতে যাত্রী সংখ্যা কম হবে না এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলির মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার ব্যবস্থাও হবে।কিছু বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হবে। বসিরহাট শহরে জন্মেছিলেন বিপ্লবী দীনেশ মজুমদার, রজরাজ অমৃতলাল বসু, সাধক বামাক্ষ্যাপার সাক্ষাৎ-শিষ্য সাধক তারাক্ষ্যাপা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত জোড়া মন্দির, পাশেই বিখ্যাত সংগ্রামপুর কালীবাড়ি এখনও আছে। সেই সঙ্গে সাহিত্যিক বিমল করের বাড়ি, বিভূতিভূষণের স্মৃতি বিজড়িত পানিতর, লোকনাথ বাবার জন্মস্থান ও মন্দির, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা— সবটা মিলিয়ে চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে বিজয়দাস রোড-সংলগ্ন জিএস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি খেলার মাঠ আছে। জাগ্রত সঙ্ঘের মাঠ নামে যেটি বেশি পরিচিত। কিন্তু সেখানে বিশেষ খেলাধূলা হয় না। বর্ষার সময়ে সেখানে কচুরিপানায় ভরে থাকে। মাঠটিকে যদি ভাল ভাবে সংস্কার করা যায়, কিছু বেঞ্চ, কিছু কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগানো যায়, তা হলে শহরের মধ্যে একটি মনোরম জায়গা তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি মাঠটি সারা বছর খেলাধূলারও উপযুক্ত থাকে।

হিরন্ময় দাস। জিসি দত্ত রোড।

শহর পরিষ্কার রাখতে সচেষ্ট হোন নাগরিকেরা

বহু বিশিষ্ট মানুষ নানা সময়ে বসিরহাটের পুরপ্রধান হয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে শহরের উন্নয়ন হয়েছে, সে কথাও ঠিক। কিন্তু পানীয় জলের ক্ষেত্রে সুরাহা এখনও হল না। একটা সময়ে শহরে মুষ্টিমেয় কিছু নলকূপ ছিল। যেখান থেকে লৌহমিশ্রিত জল পাওয়া যেত। যা মোটেই স্বাস্থ্যকর ছিল না। গত পনেরো বছরে বেশ কিছু গভীর নলকূপ বসেছে। কিন্তু তা যে পুরোপুর আর্সেনিক মুক্ত, এ কথা পুর কর্তৃপক্ষও জোর গলায় বলতে পারবেন না। পুরসভার অনেক ওয়ার্ডে ভৌম জলের স্তর অনেক নীচে থাকায় গভীর নকূপও বসানো যায়নি। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী দফতরের বসানো লাইন অনেক বছর পুরনো হওয়ায় এবং ঠিকমতো মেরামত না হওয়ায় প্রায়শই নোংরা জল আসে। সম্প্রতি রাস্তাঘাটের অবস্থা অনেক ভাল। ভিতরের রাস্তাগুলিও মেরামত হয়েছে। কিন্তু ইটিন্ডা রোডে পুরাতন বাজার থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত রাস্তা এবং মার্টিন বার্ন রোডের হাল এখনও বেশ খারাপ। প্রতি বছর তালি-তাপ্পি দেওয়ার বদলে পাকা সংস্কারের কাজ হওয়া উচিত। শহরের কিছু রাস্তা নিয়মিত পরিষ্কার হয়, কিন্তু অধিকাংশ রাস্তায় নিয়ম করে সাফাই হয় না। এ জন্য দায়ী সাফই কর্মীদের শৈথিল্য। সামান্য টাকার বিনিময়ে বাড়ি বাড়ি থেকে ময়লা নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ওই টাকা বাঁচানোর জন্য বহু মাগরিক যত্রতত্র নোংরা ফেলে রাখেন। বহু দোকান আবর্জনা ফেলে রাখে রাস্তার পাশে। এ সব ব্যাপারে নাগরিকদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে। সব দায় পুরসভার উপরে চাপালেও হবে না। প্রয়োজনে এমন ঘটালে নাগরিকদের জরিমানাও করা যেতে পারে। আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। শহরের সৌন্দর্য্যায়নের জন্য আরও গাছ লাগানো দরকার। পার্কগুলির সংরক্ষণ জরুরি।

কালিদাস মজুমদার।

কবে গতি পাবে শহর?

সাংস্কৃতিক উন্নতির জন্য রবীন্দ্রভবনের সংস্কার জরুরি

রবীন্দ্রভবনের আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। কিছু আসন ভাঙা। পর্দা ছেঁড়া। বর্ষার সময়ে উপর থেকে জল পড়ে। সম্ভব হলে হলটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হোক। শিল্পী হিসাবে যা আমার প্রথম চাহিদা। শিশুদের পছন্দের দু’টি পার্ক থাকলেও তা প্রায় ধ্বংসের মুখে। শিশুদের খেলার পরিবেশ নেই বললেই চলে। পিকনিক করতে দূরদূরান্ত থেকে যাঁরা আসেন, তাঁদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া উচিত। পুরসভার অধীন মাতৃসদন সম্প্রসারণের প্রয়োজন। শয্যাসংখ্যা এখানে সীমিত। পরিকাঠামোরও অভাব আছে। হাসপাতালের পরিবেশ আরও পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত। যত্রতত্র ময়লা ফেলার প্রবণতা থেকে নাগরিকদের মুক্ত করতে পুরসভাকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কারেও ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু কিছু এলাকায় নর্দমার সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ হওয়া দরকার।

সাগরময় চক্রবর্তী। ভবাণীপুর।

বাজারগুলির হাল ফেরানো হবে কবে

বসিরহাট টাউন হলে সীর্যকান্ত মিউনিসিপ্যাল মার্কেট। যাকে আমরা নতুন বাজার বলেই চিনি। কিন্তু সেটির পুরনো দশা কাটিয়ে ‘নতুন বাজার’ নামের সার্থক রূপায়ণে আগ্রহ দেখানো হয়েছিল মাঝে। কিন্তু কোথায় কী! কাজ সবই অসম্পূর্ণ থেকে গেল। কংক্রিকেটর পিলার আর ইটের দেওয়াল নিয়ে পুরনো দশাতেই দাঁড়িয়ে আছে নতুন বাজার। কলেজ মার্কেটেরও একই অবস্থা। এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি সেটিও। ভ্যাবলা বাজার, বৌবাজারেরও একই দশা। পুরনো বাজারটিও জল-কাদা মেখে খারাপ অবস্থায় আছে। সে দিকে পুরসভা নজর দিলে ভাল। স্টেডিয়ামের কথায় আসি।। সেখানে ম্যারাপ বেঁধে খান পাঁচেক মেলা হয়, খেলা নয়। স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব চোখে পড়ে। বসিরহাট থেকে জাতীয় স্তরের বহু ফুটবলার তৈরি হলেও তেমন কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই এখানে।

গৌতম বিশ্বাস। সাঁইপালা।

যানজট সমস্যা মিটবে কবে

বসিরহাট একটি প্রাচীন জনপদ। কিন্তু বহু পুরনো পুরসভাও এই জনপদে যানজটের সমস্যা দূর করতে পারেনি। রাস্তাগুলি অপরিসর। বহু ভারি গাড়ি চলাচল করে রাস্তাগুলি দিয়ে। সীমান্ত বাণিজ্যের ট্রাকও চলে। রাস্তার পাশে ইমারতি দ্রব্য পড়ে থেকে সমস্যা সৃষ্টি করে। বিকল্প রাস্তার জন্য তেমন ভাবনা চোখে পড়ে না। রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোও নেই। পানীয় জল নিয়ে নাগরিকদের বিস্তর অভিযোগ। তাতেও কর্ণপাত করতে দেখা যায় না পুরসভাকে।

অজয় বসু। ৭ নম্বর ওয়ার্ড।

জল কিনে খেতে হয়

জ্ঞান হওয়া ইস্তক বসিরহাট পুরসভাকে যে মানের দেখেছি, দুঃখের হলেও আজও তার প্রায় একই চেহারা থেকে গিয়েছে। পরিস্থিতি পাল্টানোর দায় থেকে মুক্ত হতে চেয়েছে ডান-বাম সব পক্ষই। আপাত দৃষ্টিতে বসিরহাটকে ঝাঁ চকচকে মনে হলেও একটু নজর করলে সমস্যাগুলি চোখ এড়ায় না। প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন পুরসভা এখনও নাগরিকদের পরিস্রুত পানীয় জলটুকু সরবরাহ করতে পারল না। পানীয় জল কিনে খেতে হয় অনেককে।

অর্ণব ব্রহ্ম।

আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম চাই

খেলাধূলার গৌরবময় ইতিহাস আছে বসিরহাটে। শহরে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম খুবই জরুরি। মাতৃসদনটি সংস্কারও দরকার। তবে বসিরহাট হাসপাতালের মান আগের থেকে অনেক ভাল হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের ব্যবহার যদি আরও ভাল হয়, তা হলে মানুষ সত্যি উপকৃত হবেন। শ্মশান ঘাটে একটি চুল্লি বসেছে। তবে আরও একটির চাহিদা আছে।

তিলক বসু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE