মঞ্চে তখন আদিত্যনাথ। কিন্তু মাঠ ফাঁকাই। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়’, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে এসেও মাঠ পুরোপুরি ভরানো গেল না বনগাঁয়। সোমবার বনগাঁ শহরের আরএস মাঠে আদিত্যনাথের ওই সভা হয়। তিনি যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন মাঠের একাংশ ফাঁকা ছিল। যদিও কয়েক মাস আগে ঠাকুরনগরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় ভিড় উপচে পড়েছিল। বিজেপি নেতৃত্ব এবারও যোগীর সভায় তেমনটাই ভিড় আশা করেছিলেন।
পুলিশ প্রশাসনের হিসাবে, এ দিনের সভায় মেরেকেটে হাজার চারেক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এমনিতেই এই মাঠ আকারে ছোট। সব মিলিয়ে হাজার দশেক মানুষ বসতে পারেন। আদিত্যনাথের নিরাপত্তার কারণে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে মাঠ ছোট করে দেওয়া হয়েছে। মঞ্চের সামনে বড় করে ডি-জোন করা হয়েছিল। পুলিশের বক্তব্য, ডি-জোন বাদ দিলে হাজার ছ’য়েক মানুষ বসতে পারতেন মাঠে। কিন্তু সেটাও ভরেনি।
পুলিশ প্রশাসনের হিসাব অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি, ‘‘এ দিনের সভায় এসেছিলেন ৫০ হাজার মানুষ। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কর্মী-সমর্থকদের ধরলে সংখ্যাটা এক লক্ষ হবে।’’ বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তাঁরাই বেশি মানুষকে সভায় আনতে চাননি। বনগাঁর মতো যানজটের শহরে বেশি মানুষ আনলে সমস্যার সৃষ্টি হত। তা ছাড়া রাস্তায় কর্মী সমর্থকদের গাড়ি মিছিল আটকে দেওয়া হয়েছে শাসক দলের তরফে। তাই বহু মানুষ সভায় আসতে পারেননি বলেও অভিযোগ বিজেপির।
বেলা ১০টা ২০মিনিটে সভার কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় বক্তারা একে একে ভাষণ দিতে শুরু করেছেন। কিন্তু তখনও মাঠ অনেকাংশেই ফাঁকা। হঠাৎ মাঠে উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশ করে মাইক হাতে প্রদীপ বলতে শুরু করলেন, ‘‘আপনারা মাঠের ফাঁকা অংশে এসে বসুন। না হলে মিডিয়া ফাঁকা মাঠের ছবি তুলে দেখিয়ে বলবে যোগীজির সভায় লোক হয়নি।’’ কয়েক মিনিট পর প্রদীপ ফের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় আমাদের কর্মী সমর্থকদের গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সভাস্থলের দিকে আসা মিছিল আটকে রাখা হয়েছে। শাসকদল ও কিছু পুলিশকর্মী ওই কাজ করছেন।’’
জেলা বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বাটারমোড়, চাঁপাবেড়িয়া, কালুপুর এলাকায় গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছিল। সভা চলাকালীন জেলা সভাপতির ফের অভিযোগ, তাঁদের সভার জন্য মাইকের তারও কেটে দেওয়া হয়েছে। জেলা বিজেপির দাবি, সভায় আসার জন্য তাঁদের কর্মী সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে। চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একজনের মাথা ফেটে গিয়েছে। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজেপির তরফে থানায় বা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়নি।
তৃণমূলের তরফে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। দলের তরফে দাবি করা হয়েছে, চাঁপাবেড়িয়া এক মাইলপোস্ট এলাকায় বিজেপির লোকজনই তাঁদের কর্মীদের মারধর করেছে। তাঁরা তখন দেওয়াল লিখছিলেন। বনগাঁ শহর তৃণমূল সভাপতি শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘বিজেপির জনসভায় এ দিন মাত্র ২ হাজার লোক হয়েছিল। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিজেপি নেতৃত্ব এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ খাড়া করছে। রাস্তায় পুলিশ ছিল, কমিশনের প্রতিনিধিরা ছিলেন, তাঁদের চোখে কেন গাড়ি আটকানোর ঘটনা চোখে পড়ল না।’’
পুলিশের তরফেও বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, গোটা শহর এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা রাখা হয়েছিল। গাড়ি আটকানো ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেনি। এ দিনের সভায় বিজেপির প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর ছিলেন না। জেলার তিন সহ সভাপতি দেবদাস মণ্ডল, বিপ্লব হালদার, রামপদ দাস উপস্থিত থাকলেও রাজ্যের কোনও হেভিওয়েট নেতানেত্রীকে দেখা যায়নি। আদিত্যনাথ মিনিট পনেরো ভাষণ দেন। এ দিন তিনি হেলিকপ্টারে নামেন কিসান মাণ্ডির হেলিপ্যাডে। সেখান থেকে গাড়ি করে সভাস্থলে পৌঁছান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy