Advertisement
০৩ মে ২০২৪

টোটো চালিয়ে স্কুল গড়েছেন বিষ্ণুপদ

পেশায় টোটোচালক বিষ্ণুপদ। টোটো চালানোর টাকাতেই বছর দু’য়েক আগে রেল লাইনের ধারে তিনি তৈরি করেন আশালতা নার্সারি ও কেজি স্কুল।

শিশুদের সঙ্গে বিষ্ণুপদ। নিজস্ব চিত্র

শিশুদের সঙ্গে বিষ্ণুপদ। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩৮
Share: Save:

অভাবের সংসার। তাই ইচ্ছা থাকলেও ছেলেমেয়েকে নার্সারি স্কুলে পড়ানোর কথা ভাবতেই পারতেন না হাসনাবাদ স্টেশন সংলগ্ন হঠাৎ কলোনির বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সরকার, উত্তম মণ্ডলরা। তাঁদের সেই স্বপ্ন সফল করেছেন প্রতিবেশি যুবক বিষ্ণুপদ মণ্ডল। বিশ্বজিৎ, উত্তম-সহ কলোনির বহু গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েই পড়ছেন বিষ্ণুপদর তৈরি স্কুলে।

পেশায় টোটোচালক বিষ্ণুপদ। টোটো চালানোর টাকাতেই বছর দু’য়েক আগে রেল লাইনের ধারে তিনি তৈরি করেন আশালতা নার্সারি ও কেজি স্কুল। ১৮ জন বাচ্চকে নিয়ে এক কামরার ঘরে শুরু হয়েছিল স্কুল। এখন পড়ুয়া সংখ্যা পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। দু’জন শিক্ষিকাও রয়েছেন।

বস্তির গরিব ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথা ভেবেই স্কুল তৈরি করেন বিষ্ণুপদ। আপাতত তাঁর ধ্যান জ্ঞান সবই এই স্কুলকে ঘিরে। টোটো চালিয়ে যেটুকু অর্থ উপার্জন হয়, তাই দিয়েই ধীরে ধিরে কিনেছেন স্কুলের চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ। পড়ুয়াদের বই খাতা এমনকী পোশাক পর্যন্ত কিনে দিয়েছেন। টাকি কলেজের স্নাতক বিষ্ণুপদ বলেন, ‘‘নিজের পড়াশোনার খরচ সামলাতে এক সময় বাচ্চাদের পড়িয়েছি। তখন থেকেই ইচ্ছা গরিব বাচ্চাদের জন্য একটা স্কুল গড়ার। এলাকার বাচ্চাদের একটু ভাল পড়াশোনার কথা ভেবেই স্কুলটা তৈরি।’’ তাঁর এই উদ্যোগে বেশ কয়েকজন সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। তাঁদের কেউ চা বিক্রেতা, কেউ দিনমজুর। বিষ্ণুপদ বলেন, ‘‘অসীম মণ্ডল, বলাই গাইন, নিরঞ্জন গাঁতিদাররা আমায় স্কুল তৈরির সময় থেকে পাশে আছেন। সাহায্য করেছেন টাকির প্রাক্তন পুরপ্রধান অরুণ ঘোষও।’’

বিশ্বজিৎ, উত্তমদের কথায়, ‘‘আমাদের ইচ্ছা থাকলেও সন্তানদের নার্সারি স্কুলে পড়ানোর ক্ষমতা নেই। কিন্তু বিষ্ণুপদ সেই স্বপ্ন সফল করেছে। ছেলেটা যেভাবে লড়াই করে স্কুলটাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, তা দেখে আমরা অভিভূত।’’

স্কুলের দুই শিক্ষিকা প্রতিমা মণ্ডল, সোনালি সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘সামান্য সান্মানিকেই আমরা এখানে পড়াচ্ছি। টোটো চালিয়ে যেভাবে উনি স্কুলটা করেছেন, তা প্রশংসাযোগ্য। ওনার উদ্যোগে সামিল হতে পেরে আমরা খুশি।’’ শিশুদের দেখাশোনার জন্য একজন আয়াও আছেন। সেই আয়া শিবানী বসুর কথায়, ‘‘টোটো চালিয়ে যে টাকা রোজগার করেন, তার প্রায় সবটাই স্কুলের শিশুদের পিছনে খরচ করে দেন।’’

বিষ্ণুপদর ইচ্ছা একদিন আরও বড় স্কুল গড়বেন। যেখানে আরও অনেক ছেলেমেয়ে পড়বে। তাঁর কথায়, ‘‘যদি একটু সাহায্য পাই তাহলে বড় স্কুল গড়ব। অনেক গরিব ছাত্র ছাত্রী পড়ার সুযোগ পাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toto Driver School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE