Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Trap Net

খেত-পুকুরে ফাঁদিজাল, প্রাণ যাচ্ছে পাখিদের

জেলার গ্রামীণ এলাকা হোক বা শহরাঞ্চল— পুকুরে, খেতে ওই জাল বিছানোর প্রবণতা বাড়ছে প্রায় সর্বত্রই। পরিবেশকর্মীদের আশঙ্কা, এই প্রবণতা বন্ধ না হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে বহু পাখি। প্রভাব পড়বে বাস্তুতন্ত্রে।

বেগুন খেতে ঢাকা জালে আটকে মারা গিয়েছে পাখি। বাগদায়।

বেগুন খেতে ঢাকা জালে আটকে মারা গিয়েছে পাখি। বাগদায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৩ ০৮:৩৯
Share: Save:

পাখিদের থেকে খেতের ফসল, পুকুরের মাছ বাঁচাতে ফাঁদিজাল (ট্র্যাপ নেট) ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে উত্তর ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে। খাবার খুঁজতে গিয়ে সেই জালে আটকে বক, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, শালিক-সহ বহু পাখি মরছে। রেহাই পাচ্ছে না বাদুড়, চামচিকেও। জেলা বন দফতর অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু এখনও হুঁশ ফিরছে না এক শ্রেণির চাষির।

জেলার গ্রামীণ এলাকা হোক বা শহরাঞ্চল— পুকুরে, খেতে ওই জাল বিছানোর প্রবণতা বাড়ছে প্রায় সর্বত্রই। পরিবেশকর্মীদের আশঙ্কা, এই প্রবণতা বন্ধ না হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে বহু পাখি। প্রভাব পড়বে বাস্তুতন্ত্রে।

সাধারণত, পুকুর বা খেতের কিছুটা উপরে ওই জাল লাগানো হচ্ছে। পাখি ফসল বা মাছের খোঁজে নামলেই ওই জালের ফাঁসে জড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ উদ্ধার না করলে কিছুক্ষণের মৃত্যুও হয়। বনগাঁর নূতনগ্রামে একটি পুকুরের জালে আটকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পাখি মারা গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। নানা জায়গার বেগুন খেতেও ওই জাল দেখা যাচ্ছে।

যাঁরা ওই জাল ব্যবহার করছেন, তাঁদের দাবি, পুকুর বা খেত রক্ষায় ফাঁদিজাল না পাতলে পাখিদের জন্য বহু টাকার ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের একাংশের পাল্টা দাবি, বড় জলাশয়ে প্রচুর মাছ থাকে। পাখিরা বক, পানকৌড়ির মতো পাখি হয়তো দু'একটি ছোট মাছ খায়। এতে চাষির খুব বেশি আর্থিক ক্ষতি হয় না।

পরিবেশকর্মীরা মনে করেন, প্রশাসনিক উদাসীনতার ফলে এই প্রবণতা বাড়ছে। তাঁরা পুলিশ প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। যুক্তিবাদী মঞ্চের পক্ষ থেকে জেলার কিছু জায়গায় কর্মসূচির মাধ্যমে চাষিদের বোঝানো হচ্ছে, জীব বৈচিত্র রক্ষায় পাখি রক্ষা জরুরি। কিন্তু তাতে কাজ কতটা হচ্ছে, সে প্রশ্ন থাকছেই।

মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকারের অভিজ্ঞতা, ‘‘চাষিরা খাদ্য-খাদকের বা খাদ্য-শৃঙ্খল সম্পর্ক বুঝতে চান না। কিছুদিন আগে গোপালনগরের একটি স্কুলের ছাদে মিড-ডে মিল খাওয়ার জায়গায় টাঙানো ওই জালে দু’টি পাখি আটকে মারা যায়। আমরা সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জাল খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করি।’’

পরিবেশকর্মী বিভাস রায়চৌধুরী বনগাঁ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা জেলার গ্রামীণ এলাকায় পথনাটকের মাধ্যমে পশুপাখি হত্যার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার কাজ করেন। বিভাসও ওই জাল বিছানোর প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘৫০ বছর আগেও মাছের ভেড়ি ছিল। তখন কি এই মারণজাল পাতা হত? ভেড়ি ঘিরে মাছরাঙারা থাকত। ভোঁদড় থাকত। বাঘরোলরা মাছ শিকার করত। এখন তারা সব বিলুপ্তপ্রায়। প্রশাসনকে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে।’’

জেলা বন দফতর অবশ্য দাবি করেছে, এক শ্রেণির চাষির জাল বিছানোর প্রবণতা বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। চাষিদের গ্রেফতার পর্যন্ত করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birds agriculture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE