Advertisement
০৬ মে ২০২৪

মেয়ের সঙ্গেই উচ্চ মাধ্যমিকে বসেছেন মা

আর্থিক টানাটানি ছিল, ছিল সমাজের চোখ রাঙানি। সংসারের হাজারটা কাজের ঝক্কি তো থাকবেই। এত সব কিছু সামলে রক্ষণশীলতার গণ্ডী ভেঙে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন মা-মেয়ে। এ বছর একই সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন মা সঞ্জিদা খাতুন এবং মেয়ে সুহানা পরভিন।

এখনও বাকি অনেকটা পথ চলা। —নিজস্ব চিত্র।

এখনও বাকি অনেকটা পথ চলা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০২:০৪
Share: Save:

আর্থিক টানাটানি ছিল, ছিল সমাজের চোখ রাঙানি। সংসারের হাজারটা কাজের ঝক্কি তো থাকবেই। এত সব কিছু সামলে রক্ষণশীলতার গণ্ডী ভেঙে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন মা-মেয়ে। এ বছর একই সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন মা সঞ্জিদা খাতুন এবং মেয়ে সুহানা পরভিন।

দু’জনের সঙ্গে দেখা হল বুধবার পরীক্ষার হল থেকে বেরনোর পরে। তোলা ন’পাড়ার বাসিন্দা মা-মেয়ের পরীক্ষার সিট পড়েছে উস্তির উত্তর কুসুম হাইস্কুলে। মায়ের বয়স তেত্রিশে কাছাকাছি। মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পরে মনে মনে ঠিক করেছিলেন, আরও পড়বেন। মেয়েকে নিয়ে এক সঙ্গেই এগিয়ে নিয়ে যাবেন নিজের লেখাপড়া। স্বামী গওসুল আনম হালদার কলকাতায় দর্জির কাজ করেন। অভাবী সংসারে একে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ টানতে নাকাল তিনি। তার উপরে স্ত্রীর পড়ার খরচ সামলানোর ঝক্কি সামলানো সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে! তা-ও পিছু হঠেননি সঞ্জিদা। স্বামীর অনুমতি নিয়ে সব কিছু সামলে নেমে পড়েছিলেন এই লক্ষে। তাঁর বাবা ডায়মন্ড হারবারের মোহনপুরের বাসিন্দা। তিনি কিছুটা আর্থিক সাহায্য করেছেন মেয়ে ও নাতনির পড়াশোনায়।

সঞ্জিদার কথায়, “বেশ কষ্ট হত। ছেলে মালঞ্চ মিশনে ৮ ক্লাসের ছাত্র। মেয়ের স্কুল, সংসার। ভয় হত, কী ভাবে পারব। তবে এক দিন শুরু করেই দিলাম। স্বামী সপ্তাহে এক দিন, রবিবার বাড়ি আসতেন। ওই দিনই কোচিং ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ পেতাম।”

এ সব নিয়ে গ্রামের লোকের বাঁকা চাহনি, নানা রকম প্রশ্ন সহ্য করতেই হয়েছে সঞ্জিদাকে। শুনতে হয়েছে, “স্বামীকে ঘরে রেখে কোথায় যাও?” এমন প্রশ্নও। এক দিন মুখের উপরে উত্তর দিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “আমরা পড়তে যাই।” যা শুনে চমকে গিয়েছিল গ্রামের অনেকেই। রক্ষণশীল পরিবারে এত বড় ছেলে-মেয়ে থাকতে বধূ পড়তে যাবে, এটাতে আপত্তি ছিল গাঁয়ের মাতব্বরদের, জানালেন মা-মেয়ে।

কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করেই মেয়ে সুহানার সঙ্গে জোর কদমে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন সঞ্জিদা। ১৯৯৫ সালে স্কুলে পড়তে পড়তেই স্বামীর ঘর করতে এসেছিলেন। তারপর পড়াশোনা থেমে গিয়েছিল। কিন্তু ফের শুরু করেন। ২০১৩ সালে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। সে বছরই মেয়ে সুহানাও মাধ্যমিক দিয়েছিল। মা ও মেয়ে একই সঙ্গে তোলা ন’পাড়া হাইমাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুহানা জানিয়েছে, মায়ের জন্য নোট লিখে দেওয়া, স্যারদের কাছ থেকে সাজেশন নিয়ে আসা, কোথাও আটকে গেলে দু’জনে মিলে সেগুলি বুঝে নেওয়ার কাজ টিমওয়ার্কের মতোই করেছে তাঁরা।

কী হবে এত বয়সে পড়াশোনা করে? সাহসী উত্তর অপেক্ষা করছিল। মেয়ে জানিয়ে দেয়, শিক্ষিকা হতে চায় সে। আর মায়ের কাছে লক্ষ্য, কিছুটা উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। চাকরি-বাকরি যদি একটা পাওয়া যায়। সংসারের হাল একটু হলেও তো ফেরানো সম্ভব হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE