Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
TMC

TMC: ১৪০০ একরের রামজয় ভেড়ি ঘিরেই খুনোখুনি

বুধবার সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে দুই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের। আহত ৫ জন এখমও হাসপাতালে।

এই ভেড়ি ঘিরেই বিবাদের সূত্রপাত।

এই ভেড়ি ঘিরেই বিবাদের সূত্রপাত। নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু 
হাড়োয়া শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২১ ০৭:১৩
Share: Save:

গত বিশ বছরে অন্তত ১৫-২০ জনের মৃত্যুর সাক্ষী হাড়োয়া-মিনাখাঁ। ভেড়ির লিজের টাকার বখরা নিয়ে রাজনৈতিক বিবাদ লেগেই থাকে। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, এক সময়ে সিপিএম-তৃণমূল সঙ্ঘাত বাধত। এখন বামেদের দেখা মেলে না। সব পক্ষই গা মিলিয়েছে শাসক শিবিরে। তাদেরই দুই গোষ্ঠীর মারামারিতে বার বার উত্তপ্ত হচ্ছে এলাকা। বুধবার সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে দুই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের। আহত ৫ জন এখমও হাসপাতালে।

হাড়োয়ার মোহনপুর পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ১৪০০ একর জুড়ে আছে রামজয় ভেড়ি। তারই লিজের টাকা এবং মাছ বিক্রির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে চলে দ্বন্দ্ব। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের দুই নেতা যজ্ঞেশ্বর প্রামাণিক তপন রায়ের অনুগামীদের মধ্যে বিবাদ চরমে। বুধবারের ঘটনায় দু’পক্ষই দোষ চাপিয়েছে একে অন্যের উপরে। দলের নেতারাও মানছেন, ভেড়ির টাকার হিসেব নিয়েই যত গোলমাল।

হাড়োয়ার ট্যাংরামারিতে যেখানে গুলি চলেছে, সেটি মিনাখাঁ বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে। বৃহস্পতিবার ব্লক তৃণমূল সভাপতি, তথা বিধায়ক উষারানি মণ্ডলের স্বামী মৃত্যুঞ্জয় গিয়েছিলেন এলাকায়। ছিলেন বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ও নারায়ণ গোস্বামী। দলের তরফ থেকে মৃত দুই পরিবারের সদস্যদের হাতে চার লক্ষ টাকা করে তুলে দেওয়া হয়।

মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘‘খুবই নিন্দনীয় ঘটনা। যজ্ঞেশ্বর প্রামাণিকদের অনেকবার শোধরানোর জন্য বলা হয়েছে। কথা শোনেনি বলেই আজ এই পরিণতি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মেছোভেড়ি নিয়ে অনিয়মের প্রতিবাদ করছেন স্থানীয় মানুষ। তাতেই উত্তেজনা বাড়ছে। নারায়ণ বলেন, ‘‘যারা গতকালের ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে। অভিযুক্তদের কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’

পুলিশ জানায়, হাড়োয়া-কাণ্ডে ধৃত ২১ জনকে বৃহস্পতিবার বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ভাস্কর দাস, তরুণ বারুই, হৃষিকেশ সিংহ, শিবচরণ সর্দার ও অজয় বরকে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি ১৬ জনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

মাটি-দরমার বেড়ার উপরে অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া ঘরে পাঁচ ছেলেকে নিয়ে সংসার বছর সত্তরের চাঁদমণি সর্দারের। পাশেই অসম্পূর্ণ পাকা বাড়ি। ছাদ ঢালাই শেষ করে বিয়ে করবে বলেছিলেন সন্ন্যাসী সর্দার। গুলিতে মারা গিয়েছেন তিনি। মা চাঁদমণি এখনও জানেন না সে কথা। বৃহস্পতিবার পরিবারের বড় বৌ শান্তা বললেন, ‘‘বুধবার আমাদের খোলাপাড়া থেকে ৫০ জন ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল পাশের পাড়ায়। সন্ন্যাসী আর তার তিন ভাইও ছিল। বাড়ি ফেরার পথে ভাস্কর দাসের দলবল গুলি চালায়। তাতেই দেওরের মৃত্যু হয়েছে।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা ভাস্করকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মণ্ডল পরিবারের বড় ছেলে গোপাল এবং মেজো নেপালেরও গুলি লেগেছে। নেপালের স্ত্রী জানকী বলেন, ‘‘আমপান এবং ইয়াসের সময়ে জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল এলাকা। মাছ চাষের ক্ষতি হয়। আমরা তৃণমূল করি। কিন্তু এক গোষ্ঠীর সঙ্গে থাকায় সরকারি সাহায্য মেলেনি। এ কেমন রাজনীতি বুঝি না!’’

স্থানীয় বাসিন্দা মাধব দাস বলেন, ‘‘আমরাও তৃণমূল করি। কিন্তু ভেড়ি থেকে পাওনা টাকার হিসেব চাইতে গেলেই কপালে জোটে মারধর, গালিগালাজ, খুনের হুমকি।’’

এ দিন গ্রাম থেকে বেরোনোর সময়ে দেখা হল পরান সর্দারের সঙ্গে। ছেলের হাত ধরে পোঁটলা-পুঁটলি নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছিলেন। বললেন, ‘‘কয়েক মাস ধরে যে ভাবে গুলি-বোমা চলছে, তাতে শিশুদের নিয়ে ঘরে থাকার সাহস পাচ্ছি না। দু’দু’জন খুন হয়ে গেল। খুবই ভয়ে ভয়ে আছি। এক আত্মীয়ের বাড়িতে ক’দিন থেকে আসি।’’

গ্রামে এত অস্ত্রশস্ত্র মজুত হলেও পুলিশ সময় মতো কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ অজিত মণ্ডল, রবীন্দ্রনাথ সর্দার, রিনা দাসদের। পুলিশের অবশ্য দাবি, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে আগে অভিযান হয়েছে। আবার হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE