Advertisement
E-Paper

ঘরে ঘরে জ্বর, লম্বা লাইন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

টিকিট ঘর, বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানো, রক্ত পরীক্ষা এবং তার পরে ওষুধ নেওয়া— চার জায়গাতেই লম্বা লাইন। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় গিয়ে লাইন দিতে দিতে পেরিয়ে যাচ্ছে সারাদিন।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৬
অপেক্ষায়: দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের লাইন। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অপেক্ষায়: দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের লাইন। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

হাসপাতাল চত্বরে ঘাসের উপরে আঁচল পেতে আট মাসের মেয়েকে শুইয়ে তার মাথায় হাত বোলাচ্ছেন মা। দু’জনেরই ধুম জ্বর। আর তাদের রক্ত পরীক্ষা করানোর জন্য প্যাথলজির সামনে লাইন দিয়েছেন বাবা।

টিকিট ঘর, বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানো, রক্ত পরীক্ষা এবং তার পরে ওষুধ নেওয়া— চার জায়গাতেই লম্বা লাইন। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় গিয়ে লাইন দিতে দিতে পেরিয়ে যাচ্ছে সারাদিন। জ্বর নিয়ে তাই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে না পেরে ভিড়ে ঠাসা হাসপাতাল চত্বরে শুয়ে-বসে থাকছেন অনেকেই। শুক্রবার এই ছবি দেখা গেল উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।

বৃষ্টি বন্ধ হয়ে আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। কিন্তু জ্বর আর ডেঙ্গির প্রকোপ কিছুতেই কমছে না এই উত্তর ২৪ পরগনায়। লেক টাউন, দক্ষিণ দমদম থেকে শুরু করে হাবরা, বনগাঁ ও দেগঙ্গায় চলতি বছরে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কয়েক হাজার।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘চলতি বছরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে। জেলার উপদ্রুত এলাকাগুলির পাশাপাশি দেগঙ্গায় বাড়তি নজর দিয়ে বিশেষ দল তৈরি করে যু্দ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করা হচ্ছে।’’ পুজোর আগে টানা বৃষ্টির জন্য ফের জ্বর, ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উপদ্রুত এলাকাগুলিতে বাড়ি-বাড়ি নজরদারি চালানো হচ্ছে। দেগঙ্গাতেও প্রশাসনিক দল ডেঙ্গি রোধে সমানে কাজ করে চলেছে।’’

ঠিক কেমন অবস্থা দেগঙ্গার?

২০১৭ সালে দেগঙ্গায় ডেঙ্গি ও অজানা জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল শতাধিক। ২০১৮ সালে তা কিছুটা কমেছিল। চলতি বছরে জ্বর ও ডেঙ্গিতে ৬ জনের মৃত্যুর পরে তৎপর হয়েছিল প্রশাসন। কিছু দিন স্বস্তি মিললেও ফের শুরু হয়েছে ডেঙ্গি ও জ্বরের প্রকোপ। শুক্রবার দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, কেবল জ্বরের চিকিৎসার জন্যই এসেছেন কয়েকশো মানুষ। চাঁপাতলার বাসিন্দা জয়ন্তী কাহারের মতো জ্বর নিয়ে বর্হিবিভাগের সামনেই শুয়ে পড়েছেন অনেকে। জয়ন্তীর পাশে জ্বরে কাঁপছে ছেলে ভাস্কর। ছোট্ট তাহাবিমকে নিয়ে সকাল থেকে ঠায় বসে আমুলিয়ার আসমাবিবি। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ দিন ধরে ছেলে, আমি জ্বরে ভুগছি। ওষুধ খেয়েও জ্বর না কমায় হাসপাতালে এলাম। বাড়িতে রান্নাবান্না সব বন্ধ।’’

রক্ত পরীক্ষার ঘরের সামনে এত ভিড় যে সামনে যাওয়ার উপায়টুকুও নেই। এক নার্স চিৎকার করছেন, ‘লাইনে না এলে কাউকে দেখা হবে না।’ দোহারিয়ার ৮ মাসের শিশু সানাউল্লা সর্দারের মা রেবিকাবিবি বলেন, ‘‘বাড়িতে সবার জ্বর। তাই আমিই ছেলেকে নিয়ে এসেছি।’’ হাসপাতালের সিঁড়িতে আধশোয়া হয়ে মাথা যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করছিলেন বছর চুরাশির লাল্টু আলি মণ্ডল। তিনি বলেন ‘‘পাঁচ দিনেও জ্বর কমছে না। রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেছেন চিকিৎসকেরা। যন্ত্রণায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। খুব ভিড়। তাই সিঁড়িতে বসে আছি।’’

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজ সিংহ বললেন, ‘‘প্রতিদিন ৮০০-র বেশি রোগী জ্বর নিয়ে আসছেন। ডেঙ্গি হয়েছে কি না, জানতে রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১২ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলছে। কয়েক জনকে ভর্তিও করতে হয়েছে। প্লেটলেট কমতে

থাকলে বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।’’

দেগঙ্গার বিডিও সুব্রত মণ্ডল জানান, সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেগঙ্গার চাকলা ও আমুলিয়ায়। জ্বরের রোগীদের মধ্যে চাকলায় ৭৬ ও আমুলিয়ায় ৭৩ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে। তিনি বলেন, ‘‘জ্বর হলে সরকারি কর্মীরা বাড়ি গিয়ে রক্ত সংগ্রহ করে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। এ ছাড়াও প্রতিটি পঞ্চায়েতে ১০ জন করে কর্মী সাফাইয়ের কাজ করছেন।’’

Health Patient Health Center Fever
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy